৮ মে, ২০২৪
রাজ্য

বিশ্বকর্মা সমগ্র বিশ্বে 'দেবশিল্পী' বলে পরিচিত। জেনে নিন ভগবান বিশ্বকর্মার বিষয়ে কিছু কথা।

দেবশিল্পী রূপে বিশ্বকর্মা একজন বিপুল কীর্তিসম্পন্ন বৈদিক দেবতা।
Vishwakarma Thakur Bengali News
-
prithwish
পৃথ্বীশ ব্যানার্জী
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
শেষ আপডেট: ৪ এপ্রিল ২০২১ ৬:২৮

হিন্দু শাস্ত্রে চৌষট্টি কলার দেবী হলেন দেবী সরস্বতী। কিন্তু সমগ্র বিশ্বে যিনি দেবশিল্পী বলে পরিচিত তিনি হলেন বিশ্বকর্মা। দেবতাদের সুদৃশ্য সুবিশাল অট্টালিকা থেকে শুরু করে দ্রুতগামী যানবাহন, সুনিপুন অস্ত্র-সস্ত্র সর্বত্র নির্মাণে যিনি তার কৃতিত্ব রেখেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক, সেই দেবশিল্পীর উৎপত্তি ও কর্মকান্ডের বিশদ বর্ণনা।

দেবশিল্পী রূপে বিশ্বকর্মা একজন বিপুল কীর্তিসম্পন্ন বৈদিক দেবতা। তার বিভিন্ন গুণাবলী এবং কর্মকাণ্ড মানবজাতির কাছে অত‍্যন্ত মনোরঞ্জক এবং অনুপ্রেরণারও বটে। শিল্পী হিসেবে একজন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা একজন অনুঘটকের কাজ করেন। বিশ্বকর্মার কৃপায় সকল মানব শিল্পগুণে পারদর্শিতা লাভ করে। অতুলনীয় এবং অভাবনীয় শিল্পগুণসম্পন্ন এক ব‍্যক্তি হিসেবে পুরাণ তাকে বিশেষ স্থান দিয়েছে এবং তিনি একজন কঠোর নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী শিল্পী রূপে দেবত্বে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

সৃষ্টির আদিতে এই বিশ্বচরাচর এবং ব্রহ্মাণ্ড অখন্ড ছিল। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা সকল প্রাণের জন্ম দিলেন বটে, কিন্তু তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছিল নানা কারণে। সেই সময় ব্রহ্মার মানসপুত্র বিশ্বকর্মা নিজের কঠোর কর্মের দ্বারা বিশ্ব এবং ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে বিভেদ ঘটাতে সক্ষম হলেন। নব আকৃতিতে বিশ্বকে নির্মাণ করলেন তিনি। বিশ্ব নির্মাণ যজ্ঞে নিজেকে আহূতি দিয়েছিলেন তিনি। এই তার "বিশ্বকর্মা" নামের বুৎপত্তির কারণ।

রামায়ণে বর্ণিত 'হরধনু', 'অগস্ত‍্যমুনির আশ্রম', রাবণের 'স্বর্ণলঙ্কা', 'উড়ন্ত পুষ্পক রথ'- এ'সকলই বিশ্বকর্মার সৃষ্টি। কুবেরের রত্নমণ্ডিত 'অলকাপুরী', দেবরাজের 'অমরাবতী', কৃষ্ণের 'দ্বারকাপুরী' সবকিছুরই স্রষ্টা হলেন বিশ্বকর্মা। দেবলোক অমরাবতী কে তিনি নির্মাণ করছিলেন সকল সৌন্দর্য্য কে একত্রিত করে। অতিরাজকীয় সৌন্দর্যের দরুণ এই স্বর্গরাজ‍্য অমরাবতী, বারংবার বিপন্ন হয়ে পরেছে নানা অসুরের আগ্রাসনে।

শুধুমাত্র স্থাপত‍্য নয়, বিশ্বকর্মা অলঙ্কারেরও স্রষ্টা। তার হাতেই নির্মিত হয় দেবতাদের যাবতীয় অস্ত্রাদি। মহাদেবের 'হরধনুও' দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার সৃষ্টি। মহিষাসুরবধের প্রাক্কালে, মা দুর্গাকে 'অভেদ‍্য বর্ম' প্রদান করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। বৃত্তাসুর কে বধ করার জন‍্য প্রয়োজন ছিল দধিচী মুনির অস্থিনির্মিত দিব‍্যাস্ত্রের। সেই অস্থি থেকেই নির্মিত হয়েছিল দেবরাজ পুরন্দরের 'বজ্র'। এই বজ্রও নির্মাণ করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। উল্লেখ্য, এই বৃত্তাসুর ছিলেন, স্বয়ং বিশ্বকর্মা ও তার স্ত্রী বিরোচনার দ্বিতীয় পুত্র। এতদ্বারা প্রমাণিত হয়, বিশ্বের কল‍্যাণার্থে তিনি নিজ দুর্মতি পুত্রের বিনাশসাধন করতেও সক্ষম।

বায়ুপুরাণমতে, বিশ্বক‍র্মার স্ত্রী রূপে 'বিরোচনা' কে পাওয়া যায়। এই বিরোচনা ছিলেন, বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের কন‍্যা তথা হিরণ‍্যকশিপু অসুরের পৌত্রী। দেবশিল্পীর ঔরসে, বিরোচনার গর্ভে জন্ম হয় এক অসুরের। ব্রহ্মবৈবর্ত‍্যপুরাণ মতে, দেবশিল্পী একবার স্বর্গের এক নর্তকীর প্রতি আকৃষ্ট হন। সেই নর্তকীর নাম ছিল 'ঘৃতাচী'। একজন নর্তকীর প্রতি এরূপ মনোভাবের কারণে ব্রহ্মা তাকে মর্ত‍্যধামে নির্বাসন দেন। ফলতঃ , বিশ্বকর্মা এবং ঘৃতাচী মানবরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হন এবং সেখানেই তাদের প্রেম পূর্ণতা পায়। মানব রূপে, বিশ্বকর্মা এবং ঘৃতাচীর সর্বমোট নয়টি সন্তান হয়। যাদের প্রত‍্যেককে তিনি ভিন্ন ভিন্ন শিল্পশৈলীতে পারদর্শী করে তোলেন। তারা ছিলেন- 'মালাকার', 'কর্মকার', 'কংসকার', 'শঙ্খকার', 'সূত্রধর', 'কুবিন্দক', 'কুম্ভকার', 'স্বর্ণকার'এবং 'চিত্রকর'।

বিশ্বকর্মা ও ঘৃতাচীর দশম সন্তানটি ছিলেন কন‍্যা। যার নাম ছিল 'চিত্রাঙ্গদা'। এই চিত্রাঙ্গদা, সূর্যবংশীয় রাজা সুরথের সাথে প্রেম করেন এবং পরে পালিয়ে তার সাথেই বিবাহ করেন। এহেন কান্ডে, পিতার অমত কে চিত্রাঙ্গদা অগ্রাহ্য করলে, পিতা বিশ্বকর্মা অত‍্যন্ত রুষ্ট হন। তিনি নিজকন‍্যাকে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো কঠোর এবং অনৈতিক এক অভিশাপ দিয়ে বসলেন। কিন্তু নিজের কন‍্যাকে এরূপ অভিশাপ দেওয়া উচিত নয়। তাই, ঋষি ঋতধ্বজ বিশ্বকর্মার এরূপ পাশবিক বুদ্ধি দেখে, তাকেই বানর রূপে জগতে জন্মাতে অভিশাপ দিলেন। অতঃপর, এই অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি পেতে তিনি মিনতি করলে, ঋষি জানালেন, যখন তিনি কন‍্যার বিবাহ মেনে নেবেন এবং ত্রেতাযুগে রামচন্দ্রের চরণস্পর্শ করবেন তখনই তার শাপমোচন হবে ।

অন‍্য এক কিংবদন্তীতে, বিশ্বকর্মার অপর এক দেবকন‍্যার কথা জানা যায়, তার নাম 'সংজ্ঞা'। এই সংজ্ঞা দেবী হলেন পরমজ‍্যোতির্ময় সূর্যদেবের পত্নী। সূর্য ও সংজ্ঞা'র বিবাহের পরে যখন মহাতেজা সূর্য, দেবী সংজ্ঞার নিকট আসতেন, তখন সূর্যের প্রবল তেজ সংজ্ঞার কাছে অসহনীয় রূপ নিতো। এর জন্য, সংজ্ঞা তার নিজের অনুরূপ আরেকটি নারীকে সূর্যের সামনে রেখে গোপনে পিত্রালয়ে চলে যান। পিতা বিশ্বকর্মা সমস্ত অবগত হয়ে, জামাতা সূর্যের কাছে এসে এই সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করলেন। বহু আলোচনার শেষে, সূর্য তার এক চতুর্থাংশ তেজ বিশ্বকর্মা কে অর্পণ করলেন। কিন্তু, ঐ সামান্য এক চতুর্থাংশ তেজ যে কি বিপুল হতে পারে সেই ধারণা তিনি করতে পারেননি। অতঃপর, ঐ সূর্যতেজ কে তিনি আকার দিলেন। গড়ে তুললেন মহাশক্তিশালী দুটি অস্ত্র। একটি অস্ত্র বিষ্ণু কে উপহার দিলেন, তার নাম 'সুদর্শন চক্র', অপর অস্ত্রটি মহাদেবকে উপহার দিলেন, যার নাম 'পিনাক ত্রিশূল'।

বিশ্বকর্মার হাতে শোভা পায় একটি 'দাঁড়িপাল্লা'। এর একটি দার্শনিক তাৎপর্য আছে। দাঁড়িপাল্লার কাঁটা সবসময় আধ‍্যাত্মিক বিন্দুতে স্থির রাখতে হয়, তবেই জীবনে উন্নতি সম্ভব। দাঁড়িপাল্লার এক দিকে থাকে জ্ঞান এবং অপর দিকে থাকে কর্মের মান পাত্র। কেউ যদি জ্ঞান অবহেলা করে কর্মের দিকে বেশি ঝোঁকে, তবে তার অজ্ঞানতা, নির্বুদ্ধিতা বৃদ্ধি পায়। আবার কেউ যদি কর্মকে অবহেলা করে, জ্ঞানের পাল্লায় বেশী ঝোঁকে, তবে তার দারিদ্র্য, দীনতা বৃদ্ধি পাবে। তাই সর্বদা দুটি পাল্লাকে স্থির রাখতে নির্দেশ দেন শিল্পপতি বিশ্বকর্মা।

পরিশেষে বলা যায় আগে রাজহংস দেবশিল্পীর বাহন বলে মনে করা হতো। এখনো কিছু অঞ্চলে দেবশিল্পীর সঙ্গে রাজহংসকে তার বাহন হিসেবে দেখা যায়। তবে বঙ্গদেশে তিনি হস্তী বাহনকে সঙ্গে নিয়েই পূজিত হন। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তিথিতে ভারী শিল্পের কলকারখানা থেকে শুরু করে সকল প্রকার পরিবহন, নির্মাণ শিল্পের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ ও সকল মেহনতি মানুষের দেবতা হিসেবে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা আজও বিশেষ ভাবে সমাদৃত।

আরও খবর

বিজ্ঞাপন দিন

[email protected]

২১ এপ্রিল

এপ্রিল মাসে কলকাতায় এত দীর্ঘস্থায়ী গরম এই প্রথম! কবে আসবে কালবৈশাখী?

College street rush
১৬ মার্চ

হুগলি থেকে তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন টলি তারকা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়

Rachana 1
২৬ ফেব্রুয়ারি

বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড়, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস

Taxi sealdah
২৩ ফেব্রুয়ারি

বাংলা থেকে আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

Narendra Modi
১১ ফেব্রুয়ারি

নির্বাচনের আগে তাৎপর্যপূর্ণ সফর

Narendra Modi
১৩ জানুয়ারি

আপনার এলাকায় আজ তাপমাত্রা কত?

Kolkata street weather
১৩ জানুয়ারি

ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন এবং হেমাটোলজির চিকিৎসকরা মদন মিত্রকে দেখছেন

Madan mitra white
২১ নভেম্বর

সাবেকিয়ানা থেকে ভাবনার নতুনত্ব, কী কী ভাবে সেজে উঠবে জগদ্ধাত্রী পুজোর থিম?

Jagadhatri Puja
৭ নভেম্বর

টেরাকোটার ঐতিহ্য থেকে ডাউহিল আতঙ্ক, কী কী ভাবে চমক দিতে প্রস্তুত মধ্যমগ্রামের কালী পুজো?

Kalighat maa kali
২ নভেম্বর

প্রায় ৪০ মিনিট ধরে রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হয়

Mamata Banana pC
২ নভেম্বর

কেন্দ্রের উদ্যোগে ১২টি শহরে অল্প দামে বিকোচ্ছে পিঁয়াজ

onion market
২ নভেম্বর

দেশে থেকেই বিদেশ ভ্রমণ, সঙ্গে হ্যারি পটারের জাদুনগরী, দীপাবলিতে দুর্দান্ত থিমে সেজে উঠছে বারাসাত

Goddess kali
৭ অক্টোবর

প্রবাসী বাঙালিদের পুজোকেও আপন করে নিল রাজ্য সরকার

mamata banerjee durgapuja