সরস্বতী পুজো: গান, গল্প, আড্ডা, প্রেম, রাজনীতি মিলিয়েই তো বাঙালির সরস্বতী পুজো

রাজকুমার গিরি
প্রকাশিত: 05/02/2022   শেষ আপডেট: 05/02/2022 10:46 a.m.
https://twitter.com/sudarsansand

সারা বছরভর লক্ষ্মীর আরাধনা, আর আজকের দিনে বাঙালির সরস্বতী সাধনা চিরন্তন

বাঙালির কাছে সরস্বতী পুজো একটু ভিন্নতর। কোন তাড়াহুড়ো কিংবা ব্যস্ততা নেই, বরং হালকা চালে মায়ের আরাধনায় স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। সকাল সকাল স্নান সারা চাই-ই চাই। খুব ঠান্ডা থাকলে গরমজল কিংবা ঠান্ডা না থাকলে এক নিমেষে পুকুরে ঝাঁপ। তারপর কাচা জামাকাপড় পরে অঞ্জলি, খিচুড়ি খাওয়া, আড্ডা, গল্প, খুনসুটি তো আছেই। আর অনেকেরই এদিন প্রথম শাড়ি পরা কিংবা অনেকের পাঞ্জাবি। নতুন শাড়ি পরার ঘটনায় বারবার শাড়ি ঠিক করাও যেন এই সরস্বতী পুজোর অঙ্গ।

মা সরস্বতী -

সরস্বতী বিদ্যা, শিক্ষা, সঙ্গীতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মানুষের যে সুষম গুণ, যা মানুষকে খুশিতে রাখে, আনন্দে রাখে - তা-ই তো মা সরস্বতী। সরস্বতীর আরাধনা মনের ভেতর এক অপার শান্তি এনে দেয়। কেবল লক্ষ্মী দেবীর আরাধনায় বাঙালি তুষ্ট থাকতে পারে না, বরং লক্ষ্মীর পাশাপাশি মা সরস্বতীকে ঘরের কন্যারূপে সহজেই গ্রহণ করেছেন বাঙালি। সরস্বতীর আরাধনা তাই ধর্মচর্চার ঊর্ধ্বে ভক্ত ও ভগবানের এক পারিবারিক সম্মিলন।

কথায় আছে, রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী। রূপ যাই থাকুক, এই গুণের কদর করে আসছে বাঙালি। আর মা সরস্বতী যেন সেই গুণের আধার। তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত মানুষের সমস্ত সুষম জ্ঞানচর্চা। বাঙালির প্রতিটি ঘরেই তাই সবদিন না হলেও বছরের একটা দিন অন্তত মা সরস্বতীর কদর থাকে। বাবা-মায়ের যত অভাব থাকুক, ছেলে-মেয়ে আমার ভালোটা শিখুক, এই তো বাঙালির আজন্ম ইচ্ছে। হয়তো বাঙালির ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর আরাধনা চলে, কিন্তু বছরের এই একটা দিনেই বিদ্যা, জ্ঞান ও শিল্পচর্চার দেবী মা সরস্বতী-ই যেন হয়ে ওঠেন ঘরের কন্যে।

https://instagram.com/mali.aali

সময় বদলেছে। সবকিছুর ধরণ বদলেছে। বাঙালির রুচি, জ্ঞানচর্চার প্রকৃতির বদল ঘটেছে। কিন্তু আজকের দিনে ঘরে ঘরে উৎসবের মেজাজ। নতুন শাড়ি, নতুন পাঞ্জাবি তো আছেই, সঙ্গে আড্ডা, গল্প, খুনসুটি, প্রেম সবমিলিয়ে বাঙালির সরস্বতী পুজো। যাকে রোজ দেখছি আজকের দিনে নতুন শাড়িতে যেন ফের নতুন করে দেখা। এদিক ওদিক চোখ দিয়ে কেবল তাকেই খোঁজা। এই দিনেই বাঙালি যেন আচমকাই সাবালক হয়ে ওঠে। মেয়েদের গিন্নিপনা, আর ছেলেদের বুড়োমি-ই যেন এদিন হঠাৎ-ই বেড়ে যায়!

স্কুল, কলেজ-সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকী বহু ক্লাবও সরস্বতীর আরাধনায় মত্ত হয়ে ওঠে। আজকাল তো আবার কারা পুজো করবে সেই নিয়ে ক্যাম্পাসে হাতাহাতি দেখা যায়। আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈরিতা এই সরস্বতী পুজোকেই ঘিরে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের সমস্ত স্কুলে সরস্বতী পুজো হয় তো? এইসব সংকীর্ণ রাজনীতি, দলাদলির ঊর্ধ্বে গিয়ে মা সরস্বতী তো সকলের ঘরের দেবী। বছরের সব ক'টা দিন সম্পদের চিন্তা করতে করতে দিন কাটে বাঙালির, পেট ভরাতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করা বাঙালিও আজকের দিনে মা সরস্বতীর পায়ে ফুল ছোঁয়ান। আর চোখ বুজে নিজের সুমতি প্রার্থনা করেন।