নিতান্তই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষ। ছিল কঠিন জীবন সংগ্রাম। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতন দৃষ্টিপাত, একটু নড়চড় হলেই বিপত্তি। ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারে আর কিছু না থাকুক 'সম্মান' নামক বিষয়টি জোরাল। একটু পদস্খলনে হতে পারে বড় বিপদ।
ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ তিনি ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, সঙ্গে ভারতরত্ন। শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, মহান চিন্তাবিদ। তিনি জাতি শিক্ষক তো বটেই। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তৈরি করেছিলেন নিজের জ্ঞানের জগৎ। তাঁর জীবনেও ছিল একটি বিতর্কিত অধ্যায়। জড়িয়ে পড়েছিলেন নিজের ছাত্রের থিসিস চুরির অভিযোগে। যদিও ঘটনার শেষটুকু জানা যায়নি, তবে মামলা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত।
সময়টা ১৯২৯। আচমকাই দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। না, কোন স্বাধীনতা আন্দোলন নয়। আচমকাই শোনা গেল মহান দার্শনিক ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ নাকি নিজের ছাত্রের থিসিস 'নকল' করেছেন। অভিযোগ করেছেন যদুনাথ সিনহা। কাকতালীয়ভাবে তিনি রাধাকৃষ্ণণের ছাত্র। গুরুর বিরুদ্ধে এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগে দেশজুড়ে তখন ত্রাহি ত্রাহি রব। ঘটনা গড়াল আদালত পর্যন্ত। একপক্ষের অভিযোগ, রাধাকৃষ্ণণ তাঁর ডক্টরেট করা বই থেকে নকল করেছেন। যদিও মানতে নারাজ রাধাকৃষ্ণণ।
বিষয়টি নিয়ে এতটাই শোরগোল উঠল যে আসরে নামলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি উভয়পক্ষের মধ্যস্থ হয়ে সমস্যার সমাধান করলেন। জানা যায়, ১৯৩৩ সাল নাগাদ এই বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে। তবে চার বছরে জল কিন্তু গড়িয়েছিল বহুদূর। জাতির মহান শিক্ষক ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। স্বাধীন দেশের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি, দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি তিনি। কিন্তু তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি একজন জনপ্রিয় শিক্ষক, 'ফ্রেন্ড ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড'। যাঁর একটি ক্লাস মানেই মুগ্ধতার আর এক নাম, যাঁর একটা ক্লাস 'পিন অফ সাইলেন্স'। তিনিই জড়িয়ে পড়েছিলেন বিতর্কে।
![Rudranil Ghosh and Debangshu Bhattacharya](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2022/04/10/Screenshot_20220410-100149_Quotes_Creator.jpg)
![healthy food diet](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2021/05/23/photo-uploads/brooke-lark-jUPOXXRNdcA-unsplash.jpg)
![Rains বৃষ্টি](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2022/08/20/flood-965092_1280.jpg)
সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন একাংশ। বাংলাপক্ষ এবং বাঙালিদের একাংশ ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ নন, বিদ্যাসাগরের জন্মতিথিই হোক শিক্ষক দিবস এমন দাবি তুলছেন। বাংলাপক্ষের অন্যতম সমর্থক গর্গ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক ওয়ালে বলেছেন, "আজ শিক্ষক দিবস নয়। আমাদের জাতীয় শিক্ষক পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আর ঠিক তিন সপ্তাহ পরেই জাতীয় শিক্ষক দিবস। ২৬ শে সেপ্টেম্বর। সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বীরসিংহের সিংহহৃদয় পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবস।"
ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে তাঁর পুরোহিত হোক, কিন্তু ছেলে হয়েছিলেন শিক্ষক - এ জাতির নবপ্রজন্মের যজ্ঞের হোতা। সংস্কৃততে একটি বহুল প্রচলিত কথা আছে, 'বিদ্যা দদাতি বিনয়ম্' অর্থাৎ বিদ্যা বা শিক্ষা মানুষকে বিনয় দান করে। এই বিনয় একজন মানুষকে 'খাঁটি মানুষ' হিসেবেই গড়ে তোলে। তিনি তো রাধাকৃষ্ণণ। তাঁকে নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি।