"তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?" কথাটি বঙ্কিমচন্দ্রের। অধম নয়, সবাই আসলে উত্তমই হতে চায়! আর আপামর বাঙালি? উত্তমকুমার! সেই ধুতি পাঞ্জাবি, এলোমেলো চুল, পায়ে স্যান্ডেল আর হাতে সিগারেট। এ তো নস্টালজিয়া! তিনি মহানায়ক, কেবল তিনিই মহানায়ক।
তিনি তো বাঙালির আজীবন লালিত স্বপ্নের নায়ক। আজকের ভাষায় বাঙালি নারীর 'হার্ট থ্রব'। তিনি পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলের 'ক্রাশ'। মুখের শুভ্র হাসি, সঙ্গে নির্ভেজাল ব্যক্তিত্বের মিশেল উত্তমকুমার। তিনি উত্তম, আমাদের মতো অধমের কাছে তিনি তো স্বপ্নের রাজকুমার।
উত্তমকুমার তো বাঙালির ব্রান্ড। তাঁর কথাবলা, আড়চোখে তাকানো, কিংবা কুন্ডলীকৃত ধোঁয়ায় সিগারেট চুম্বন - সবেতেই তিনি ক্লাসিক। সবেতেই তাঁর অনায়াস যাতায়াত। বাঙালির অতৃপ্ত বাসনা, কিংবা যৌবনের রসাভাষ সেখানেও উত্তমকুমার। নারী মনোহরণের ব্রান্ড অ্যাম্বাস্যাডার তিনি।
নিতান্তই ছাপোষা বাঙালি পরিবারে জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। খোদ কলকাতার ভবানীপুরে মধ্যবিত্ত পরিবারে শৈশব কৈশোরে দিন গুজরান। তাঁর শৈশবে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুতি চলছে। কলকাতার মধ্যবিত্ত সমাজ জীবনে অভাব আর বেকারত্বের তীব্র আততি। সব মিলিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে বাঙালির আজন্মলালিত কেরানিবৃত্তি। না, বেশিদিন পারেননি। ভেতরের অভিনয় তাড়না যুবক উত্তমকে ধরে রাখতে পারেনি। অভাবকে জয় করে তিনি হয়ে উঠলেন সকল বাঙালির একাকীত্বের নায়ক। সকলের না পারা স্বপ্নের কেতন উড়ল তাঁর হাত ধরে।
না, শুরু থেকেই তিনি সফল নন। প্রথম একের পর এক ব্যর্থ ছবি। হতাশায় ত্রস্ত উত্তমের চোখে-মুখে অস্বাভাবিকতা। তাঁর নিকটজনের কাছ থেকে এমন কথা বহুবার শোনা গেছে। কিন্তু তিনি তো অপরাজেয়, তিনি অদম্য। সাফল্যের সফর শুরু 'সাড়ে চুয়াত্তর' থেকে। তারপর একের পর এক হিট ছবি। 'হারানো সুর', 'পথে হল দেরি', 'সপ্তপদী', 'চাওয়া পাওয়া', 'বিপাশা', 'জীবন তৃষ্ণা', 'সাগরিকা'-এর মতো কালজয়ী সব ছবি করলেন উত্তম। হয়ে উঠলেন বাঙালির চিরকালীন আইকন, মহানায়ক।
উত্তমকুমার বাঙালির মনন, বাঙালির আবেগ। তাঁর অনবদ্য হাসিমুখ দেখে আজও বাঙালির মনের কষ্ট লাঘব হয়। টিভির পর্দায় কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে আজও তিনি সুপার ডুপার হিট। তাই তো সবাই উত্তম হতে চায়, অধম হওয়ার সাধ কারই-বা জাগে!