বাংলাদেশ কি ধর্মনিরপেক্ষ হবে? অশান্তির মধ্যেই বড় ইঙ্গিত হাসিনার
বাংলাদেশ আবার শান্তি ফিরিয়ে আনার আবেদন জানিয়ে বাংলাদেশ প্রশাসনকে চিঠি কলকাতা ইসকনের
উৎসবের মরশুমের মধ্যেও বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে হামলা অব্যাহত। সে দেশে হিন্দুরা আক্রান্ত। কোথাও মণ্ডপে চলছে হামলা, আবার কোথাও মন্দিরে ভাঙচুর চলছে। অনেক জায়গায় আবার দেখা যাচ্ছে হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর ঘটনা ঘটছে। নানা মহলে তরফ থেকে এই নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক মন্তব্য করা হয়েছে। তবে এই ধারাবাহিক ঘটনায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবারে প্রথমবার একটি লিখিত বিবৃতি জারি করল কলকাতার ইসকন কর্তৃপক্ষ। তাদের বিবৃতিতে বাংলাদেশ প্রশাসনের কাছে তাদের আর্জি, "সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিন।" দূর্গা পূজা চলাকালীন বাংলাদেশের কুমিল্লা এবং নোয়াখালীর মতো বেশ কিছু জায়গায় যেভাবে হিন্দুদের ধর্মীয় স্থানে হামলা হয়েছে, সেই বিষয়টি নিয়ে নিন্দার ঝড় একাধিক মহলে। নোয়াখালীর ইসকন মন্দিরে আবার অন্তত ৪ জন খুন পর্যন্ত হয়েছিলেন। এই ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার করে ঘটনার কিনারা করতে শেখ হাসিনা প্রশাসন তৎপরতা দেখিয়েছে।
এই অপরাধে জড়িত সন্দেহে এখনো পর্যন্ত চার হাজারের বেশি মানুষকে পাকড়াও করা হয়েছে। সেদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একাংশ শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সেখানকার বিশিষ্টজনরাও গর্জে উঠেছেন। চট্টগ্রাম, ফেনী, রংপুর এই তিনটি জায়গায় পুলিশ প্রশাসক সহ সাতজন পুলিশ অফিসার কে পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, দূর্গা পূজার সময় হিন্দুদের ধর্মীয় স্থানে হামলা পুরোপুরি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়েছে। কিন্তু হিন্দুদের সুরক্ষা নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত কলকাতার ইসকন কর্তৃপক্ষ। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া এবং হিন্দুদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষদের নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশ প্রশাসনের কাছেই আবেদন জানিয়েছে ইসকন কর্তৃপক্ষ।
তবে তারই মধ্যে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ফেরা নিয়ে বড় ইঙ্গিত করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকে একটি বিবৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, "বাংলাদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে বসবাস করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এটাই একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মূল মন্ত্র। বাংলাদেশ প্রশাসন দোষীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করছে।" অন্যদিকে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতার পথে ফেরার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে সে দেশের তথ্য দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী মুরাদ হাসানের একটি মন্তব্যে। তিনি বলছেন, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ফেরাতে হলে শীঘ্রই একটি বিল পেশ করতে হবে। সেই বিল সর্বসম্মতভাবে পাস করিয়ে বাংলাদেশকে আবার পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশকে, ধর্মনিরপেক্ষ গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু, ১৯৭৮ ও ১৯৯০ সালে সংবিধান সংশোধনের পর বাংলাদেশের জাতীয় ধর্ম হয়ে যায় ইসলাম। তবে আবারও কি সংশোধনের পথে বাংলাদেশ? জাতীয় চরিত্র পাল্টে ধর্মনিরপেক্ষ হতে চাইছে বাংলাদেশ? অন্তত শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীদের কথায় কিছুটা এরকম ইঙ্গিত মিলছে।