পুজোর লাগামছাড়া ভিড়ের পরে কে পাচ্ছে করোনাশ্রী পুরস্কার? প্রশ্ন ডাক্তারদের

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 17/10/2021   শেষ আপডেট: 17/10/2021 1:09 p.m.

এবারের দুর্গা পুজোয় সারা কলকাতায় লাগামছাড়া ভিড় হয়েছে দুর্গাপুজার মন্ডপ দেখার জন্য

সেরা মণ্ডপ থেকে শুরু করে সেরা প্রতিমা, প্রত্যেকটি বিভাগে এবারের দুর্গা পুজো তে কেউ-না-কেউ বিজেতা হয়েছেন। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট হতে শুরু করেছে সেই সমস্ত পুরস্কারের প্রাপকদের তালিকা। কিন্তু, দূর্গা পূজা মিটে গেলেও অতিমারির তৃতীয় ঢেউ নিয়ে বেজায় চিন্তিত বাংলা ডাক্তার মহল। তারা মনে করছেন, কে কতটা ভিড় টেনে কতটা করোনাভাইরাস ছড়ালেন, কিংবা কতজন বেড না পেয়ে, ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই নিয়েও তো একটা পুরস্কার দেওয়া উচিত। তাদের কথায়, "কোন মন্ডপে কত মানুষের মাথা জড়ো হলো, তা নিয়ে তো অনেক হিসাব-নিকাশ হয়েছে। এবারে, কতজন শয্যা না পেয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তার হিসাবটা করা উচিত। সেই ঘটনার নেপথ্যে কার ভূমিকা শ্রেষ্ঠ, তা নিয়ে একটা পুরস্কার দেওয়া উচিত।"

রাজ্য সরকার এবং কলকাতা হাইকোর্ট এবারের দূর্গা পুজা উদযাপন করা নিয়ে কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু সেই সমস্ত নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই মানুষ লাগামছাড়াভাবে এবারের দুর্গা পুজোতে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরেছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন এবং পুলিশ কি করছিল? তারা কেন কড়া মনোভাব গ্রহণ করলেন না? অন্যদিকে আবার এটাও প্রশ্ন, পাড়ার কোনো ছোটখাটো মণ্ডপের সামনে কোন ভিড় ছিল না। একটা সময় এমন ছিল যখন একজনেরও দেখা মিলত না সেই মণ্ডপের সামনে। তার বদলে নামিদামি নেতাদের আয়োজিত পুজো মণ্ডপের সামনে দেখা যাচ্ছিল বিশাল লাইন। এই জায়গায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কড়া মনোভাব গ্রহণ করার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে মুখে বাঁশি নিয়ে পুলিশকর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভিড় একটা জায়গায় থমকে গেলে তখনই বেজে উঠছিল বাঁশি।একজন ভাইরোলজিস্ট বলছেন, "ওই বাঁশি কিন্তু আদতে করোনাভাইরাসের বিপদ ঘন্টার প্রতীক। কিন্তু এক শ্রেণীর মানুষ ব্যাপারটা বুঝলেন না। তাই দ্রুত মাস্ক পরার বদলেকে কত সেলফি তুলতে পারেন সেটা নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।" পুলিশ কর্মীরা বলছেন, দর্শনার্থীদের এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না দেওয়া ছিল তাদের কাজ। অকারনে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে নিজে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কোন মাথা ব্যথা ছিল না। পুলিশ কর্মীরা বলছেন, " গত দুইবারে কত পুলিশ কর্মী মারা গিয়েছেন সেটা তো সকলেই জানেন। এবারে ভিড় থেকে একটু দূরেই ছিলাম। যদি মানুষ নিজের ভালো নিজে না বোঝেন, তাহলে আমরা কি করব!"

চিকিৎসকরা বলছেন, আগামী দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে চলেছে দৈনিক করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এই বিষয়টি একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বললেন, "এইসময় উপসর্গ দেখা দিলে নিজেকে আলাদা করে রাখুন। পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলুন। কোনভাবে কোনরকম বিধি পালনে ঢিলেমি করবেন না। আসন্ন তৃতীয় ঢেউ রুখতে আপনাদের সব থেকে বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।"