স্বপ্নপূরণের পথে এক বাঙালি যুবক

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 25/11/2020   শেষ আপডেট: 25/11/2020 4:29 p.m.
ছবিতে সুরজিৎ জালিক - নিজস্ব চিত্র

সাক্ষাৎকার গ্রহণে পৃথ্বীশ ব্যানার্জী

আজকের ছাত্র সমাজ যখন বিভিন্ন পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে হতাশায় জর্জরিত হয়ে নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বাধা কে অতিক্রম করে হাওড়া জেলার বিরামপুর গ্রামের অন্যতম এক কৃতি ছাত্র সুরজিৎ জালিক এবছর আইআইটি গেট পরীক্ষা দিয়ে আইআইটি বোম্বে তে Environmental Science and Engineering(ESED) নিয়ে M-Tech Research Program-এ সুযোগ পায়।

বাবা শ্রী মানিক জালিকের সাথে সুরজিৎ - নিজস্ব চিত্র

অতি সাধারণ পরিবার থেকে আসা সুরজিৎ জালিক এর বাবা শ্রী মানিক জালিক পেশায় কৃষক ও ভ্যানচালক এবং তার মা শ্রীমতি মিনতি জালিক কোনো না কোনো কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারের কোনো ছায়াই তাঁরা সুরজিৎ -এর উপর পড়তে দেননি, বরঞ্চ ক্রমাগত তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন। এছাড়াও সুরজিৎ -এর অন্যতম ইন্সপিরেশন তার দাদা শ্রী কালিপদ জালিক এবং দুই দিদি আরতিদি ও সন্ধ্যাদি।

স্থানীয় পাঁইত্রাস হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর যথাক্রমে কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রীটের সিটি কলেজ থেকে জুওলোজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে সুরজিৎ।

মা ও দিদির সাথে সুরজিৎ - নিজস্ব চিত্র

বলা বাহুল্য, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র সুরজিৎ -এর সাফল্যের পথ এতটাও মসৃন ছিলনা। তার কথায়, "আমাদের বাড়ি রূপ নারায়ণ নদের ধারে। ২০০৮ কিংবা ২০০৯ সালের বন্যায় আমাদের বাড়ির মাটির দেওয়াল পড়ে গিয়েছিল। সেই সব দিন আজো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।" এছাড়াও গ্রামে থাকার জন্য সঠিক তথ্যের অভাবে যে স্বপ্নপূরণের সময় দীর্ঘায়িত হতে পারে সেই কথাই বার বার উঠে এসছে সুরজিৎ -এর বক্তব্যে। তার কথায়, "২০১০ সালে একটি ছোট মোবাইল ফোন পাই গ্রামের থেকে কিছুটা দূরে পড়তে যেতাম বলে। তার সাথে তথ্যের অভাবের ফলে ২০১৪ সালে গ্রাজুয়েশনের পর আই.আই.টি জ্যাম পরীক্ষা পাশ করেও সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারিনি। আমার অনেক বন্ধু ও সহপাঠীরা শহরে থাকার সুবাদে কলকাতাতেই বিভিন্ন ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়ার চান্স পায়। শহরে থাকলে সেই সময় আমিও আই.আই.টি-তে পড়তে পারতাম বলে আমার বিশ্বাস।" আর এই অভাবকে অনুভব করেই বর্তমানে ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে ছাত্রদের তথ্য পৌঁছে দেওয়ারই চেষ্টা করে সুরজিৎ।

তার মতে, "ছাত্রদের বলবো নিজস্ব এলাকার লাইব্রেরীতে গিয়ে নিজের বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের বই পড়ার অভ্যাস করার জন্য। শুধু মাত্র পুঁথিগত কিছু বিষয় পড়ে আই.আই.টি-তে পড়া সম্ভব নয়। বর্তমানে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট থেকেও যথেষ্ট সাহায্য মিলতে পারে।"

এছাড়াও স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারা অনুপ্রাণিত সুরজিৎ প্রত্যেক বছর তার এলাকার মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের ছোট ছোট উপহারের মাধ্যমে উৎসাহ দেওয়ারও কাজ করে।