সুভাষচন্দ্র বসু: ভারতীয় আবেগের অপর এক নাম!

রাজকুমার গিরি
প্রকাশিত: 23/01/2022   শেষ আপডেট: 23/01/2022 2:02 p.m.
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

নেতাজি মানেই আবেগ, নেতাজি মানেই সমস্ত বাধার বিরুদ্ধে সোচ্চার স্লোগান!

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই,/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।" ভারতবর্ষকে কেবল প্রত্যাশাহীন ভালোবেসে ছিলেন যিনি, তিনি নির্দ্বিধায় সুভাষচন্দ্র। মা যেভাবে সন্তানকে ভালোবাসেন, ঠিক তেমনি দেশমাতৃকার প্রতি এমন ভালোবাসা হয়তো দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির নেই। 'নিঃশেষে' ভালোবাসতে ক'জন পারে!

মানুষের কত পরিচয়। নিজের পরিচয় জানান দিতে কত মানুষের কত প্রচেষ্টা! অর্থ, সম্পদ, প্রতিপত্তি পূরণে মানুষের কত-না ছল-চাতুরী। আর সুভাষচন্দ্রের কেবল একটাই পরিচয়, তিনি 'নেতাজি'। জাত, ধর্ম, বর্ণ, দেশের সীমারেখা ছাড়িয়ে স্বতন্ত্র এক প্রতিভা। তাঁর জন্ম ইতিহাস, ব্যক্তিজীবন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূল্যায়ন কেবল একটি শব্দে, তিনি 'নেতাজি'!

নেতাজি আবেগের অপর এক নাম। যাঁর নাম শুনলে আজও মানুষের গায়ে কাঁটা দেয়, যাঁর একটা হাঁক আজও লক্ষ মানুষকে ঘর থেকে বাইরে আনে। দুই পরস্পর বিরোধী শত্রুও যাঁর কথাতে একইরকম রোমাঞ্চ অনুভব করেন, কিংবা দীর্ঘদিনের বাক্-বিতণ্ডা ভুলে একে-অপরের গলা জড়িয়ে ধরেন, তিনিই নেতাজি। যেদেশে আজও হিন্দু-মুসলিম বন্ধু হতে পারেনি, যেদেশে আজও কোন কৃষকের চরণস্পর্শ করেনি কোন জোতদার, সেখানেও যাঁর কথায় সমস্ত বাক্যবাণ রুদ্ধ হয়ে যায়, তিনিই নেতাজি।

নেতাজি কী করেছিলেন? এককথায় বললে এই মরা জাতির জীবনে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। যাঁরা রোজ একটু একটু করে মরে যাচ্ছিলেন, তাঁদের প্রাণে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দিয়েছিলেন তিনি। যাঁর কথায় লক্ষ, কোটি মানুষ প্রাণ দিতেও দু-বার ভাববেন না, তিনিই নেতাজি। ভারতের ইতিহাসে অসংখ্য নেতা এসেছেন, নানা কর্মকান্ড করেছেন, কিন্তু দ্বিতীয় কোন নেতাজির হয়তো জন্ম হবে না। নেতাজি কোন নাম নয়, নেতাজি একটা সত্তা। আমাদের প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাওয়া প্রাণে যিনি জলবর্ষণ করেন, তিনিই সুভাষচন্দ্র। উদ্দেশ্যহীন পথ হেঁটেও যাঁর কথায় ক্লান্ত হয় না মানুষ, তিনিই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

নেতাজি মানেই স্পর্ধা। ব্রিটিশদের দৌরাত্ম্যের যুগেও যিনি নিজের জ্ঞান, প্রতিভা, মনন দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন তিনিই নেতাজি। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে নেতাজির ভূমিকা ইতিহাস সচেতন মানুষের কাছে সর্বজনগ্রাহ্য। দেশের সার্বিক বিকাশে বহু মানুষের প্রভাব তো আছেই, কিন্তু একজনের চিন্তা-চেতনায় মানুষ আজও পরিপূর্ণ আস্থা রাখেন, তিনিই সুভাষচন্দ্র। সুভাষচন্দ্র কেবল একটা নাম নয়, সুভাষচন্দ্র একটা জাতির, একটা দেশের গৌরব, একটা দেশের শক্তি। এই একটা নাম-মাহাত্ম্যই যথেষ্ট লক্ষ-কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রাণ সঞ্চার করতে।

১২৫ বছর আগে জন্মেছিলেন, কিন্তু ভারতীয় সভ্যতায় কয়েক শত বছরেও যাঁর নাম অক্ষয় হয়ে থাকবে। তিনি নারী-পুরুষের মধ্যে সীমাহীন কর্মশক্তি দেখেছিলেন, তিনি দেশের যুব শক্তিকে নতুন এক দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বিদেশী আধিপত্য-বর্জিত এক নতুন সমাজ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র তাই কেবল একটা নাম নয়, সুভাষচন্দ্র এই দেশেরই নামান্তর।