হিন্দু বৃদ্ধের শেষকৃত্য সারলেন মুসলিম প্রতিবেশীরা

শ্রীরূপা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশিত: 30/11/2020   শেষ আপডেট: 30/11/2020 4:13 p.m.

সম্প্রীতির চমৎকার নজির জামুড়িয়ায়

ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে ধর্মের নামে উস্কানি দিয়ে মানুষে মানুষে জঘন্য বিভেদ বাধিয়ে তোলেন ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতারা৷ অথচ ধর্ম যে নিতান্তই মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়, একের প্রতি অন্যের আবেগ অনুভূতি, ভালবাসা, সহমর্মিতা যে ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে অনেক বড় আবার তা প্রমাণ করলেন পশ্চিম বর্ধমানের ‘দেশের মহান’ গ্রামের মানুষ৷ ৭০ বছরের এক হিন্দু বৃদ্ধের শেষকৃত্য করে সম্প্রীতির চমৎকার নজির গড়লেন ওই গ্রামের মুসলমান বাসিন্দারা৷

পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ায় অজয় নদের ধারে ছোট্ট গ্রাম ‘দেশের মহান’৷ গ্রামে ২৩০টির মধ্যে ২২৯টি পরিবারই মুসলিম ধর্মাবলম্বী৷ বৃদ্ধ রামধনী রজকের পরিবারই একমাত্র হিন্দু পরিবার৷ স্ত্রী ও মানসিক রোগী এক ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার৷ বড় ছেলে কলকাতায় কাজ করেন৷ ধোপার কাজ করে সংসার চালাতেন রামধনী৷ শনিবার গাছ থেকে পড়ে মাথায় চোট পান তিনি৷ খবর পেয়ে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা৷ আহত রামধনীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান৷

প্রতিবেশী শেখ ফিরদৌস জানান, ‘‘আমরা রানিগঞ্জ আর দুর্গাপুরের পাঁচটা হাসপাতালে ঘুরেছি, কিন্তু কোথাও ভরতি করতে পারিনি৷ কোথাও আইসিসিইউ নেই, কেউ আবার কোভিড টেস্ট করানো হয়নি বলে ভরতি নিল না৷’’ শেষ পর্যন্ত মারা যান রামধনী৷ মৃতদেহ নিয়ে গ্রামে ফেরেন ফিরদৌসরা৷ ইতিমধ্যে রামধনীর ছেলে রামবিলাস ফিরেছেন কলকাতা থেকে৷ রবিবার মুসলিম প্রতিবেশীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রামধনীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন৷

প্রতিবেশীদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রামবিলাস৷ বলেছেন, বাবার চিকিৎসা থেকে শেষকৃত্য– এঁরা পাশে না থাকলে কিছুই হতো না৷ ফিরদৌস বলেছেন, ‘‘রামধনী তো আমাদের নিজেদেরই লোক ছিলেন ওঁদের আমরা আলাদা বলে ভাবিনি কোনওদিন৷ ফলে বিরাট কিছু করেছি বলে মনে করি না৷’’