২৪-র মধ্যে বাড়ি বাড়ি জল থেকে কলকাতার উন্নয়নের রুপরেখা নির্দেশ, প্রচারের শেষ লগ্নে ছক্কা হাঁকালেন মমতা

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 16/12/2021   শেষ আপডেট: 16/12/2021 6:33 p.m.
পুরভোটের প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় https://fb.watch/9WTI3hu-cP/

একই দিনে কলকাতায় তিনটি জায়গায় জনসভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতার উন্নয়নকে মাথায় রেখে কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের জন্য প্রচারে নেমে প্রথম বারেই একেবারে ছক্কা হাঁকালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একসাথে তিনটি জায়গায় সভা করে বিরোধী পক্ষকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ দিয়ে দিলেন মমতা। কাউন্সিলরদের কাজের রুপরেখা নির্মাণ করে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, কোনরকম গাফিলতি সহ্য করা হবে না কলকাতা পুরসভায়। বাঘা যতীনের সভা থেকে ক্ষিতি গোস্বামীর মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করে দিলেন নিজের ভোটের প্রচার।

প্রচারের শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, অনেকে বড় বড় চাকরি ছেড়ে জনসেবা করতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে, তাই তাদেরকে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। কলকাতা পুরসভার একাধিক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে এদিন সভা শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বললেন, যেরকম ভাবে কলকাতা পুরসভার কাজ হয়েছে সেরকম কিন্তু অন্য কোথাও কাজ হয়নি। কোন কাজের জন্য কোন সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন পড়ছে না, কোথাও জলের ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে না, বললেন মমতা। কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা উল্লেখ করেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, সমস্ত সমস্যা সত্বেও কলকাতা পৌরসভায় তিনি একাধিক কাজ সম্পন্ন করেছেন। পলতা জলাধার এবং গার্ডেনরিচের জলাধারের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পাশাপাশি কালীঘাটের স্কাইওয়াক, দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক, চন্দননগর, তারকেশ্বর এবং বক্রেশ্বরের মন্দির সাজিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে দেবী চৌধুরানীর মন্দির পুনর্নির্মাণের কথা উল্লেখ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা এদিনের সভা থেকে বললেন, কলকাতা যেরকম ছিল, তার থেকে অনেকটা পরিবর্তন করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মমতা বললেন, তিনি থাকলে এক বছরের মধ্যে সমস্ত মেট্রোর কাজ করে দিতেন। এছাড়াও আরও উড়ালপুল নির্মাণ হবে বলে ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু কিছু জায়গার মধ্যেকার উড়ালপুলের পথ নির্দেশ করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন যাদবপুর থেকে গড়িয়া, বাইপাস থেকে নিউটাউন, এবং মাঝেরহাট থেকে টালিগঞ্জ এর মধ্যে উড়ালপুল তৈরি করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। এছাড়াও মেয়েদের সুবিধার জন্য কলকাতার প্রতিটি ওয়ার্ডে সুলভ শৌচালয় তৈরীর পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

গরিবদের দোকান দিয়ে, সরকারের কর্মতীর্থ তৈরি করে, ১২৩টি মা ক্যান্টিন তৈরি করে কলকাতার উন্নতি সাধন করা হয়েছে বলে ঘোষণা মমতার। এছাড়াও, শহরের বহু জায়গায় নাইট শেল্টার তৈরি করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তার মধ্যেই কলকাতা পুরসভার নির্বাচনের আগে সবথেকে বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকে বাঘা যতীনের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন আগামী ২০২৪ এরমধ্যে রাজ্যজুড়ে প্রত্যেকটি বাড়িতে জলের ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। তৃণমূল নেত্রীর ঘোষণা, 'দেশের সব জায়গায় জলের উপরে কর নেওয়া হয়। আমাদের উপরে কর নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা সম্পূর্ণ রুপে না করে দিয়েছি। আমি জানিয়ে দিয়েছি, কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গে জলের উপরে কোনরকম কর অারোপ করা হবে না। উদ্বাস্তু কলোনির উচ্ছেদ করা হবে না, বরং সম্পূর্ণরূপে আইনত পাট্টা দেওয়া হবে।'

তার সঙ্গে সঙ্গেই মমতার ঘোষণা, তিনি কখনই লড়াই করতে ভয় পান না। তাই আম্ফান হোক কিংবা যশ রাজ্যবাসীর সঙ্গে তিনিও লড়াই করে গিয়েছেন। গোটা রাজ্যে পরিস্থিতির উপরে নজর রেখেছে নবান্ন থেকে। কেন্দ্রের তরফ থেকে কোনো পয়সা দেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, আম্ফান এবং যশ এর মত ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করে আবারো বাংলাকে নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়ার সম্পূর্ণ কাজটি করেছে রাজ্য সরকার। কন্যাশ্রী প্রকল্প বিশ্বের নানা জায়গায় পুরস্কার পেয়ে গিয়েছে। তার পাশাপাশি ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দিয়েছে সম্প্রতি। এই কথা উল্লেখ করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, যদি তিনি আবারও ক্ষমতায় ফেরেন তাহলে পুরো কলকাতাকে কল্লোলিনী কলকাতা করে তুলবেন। মমতার ঘোষণা, বাংলাকে তিনি বিশ্বসেরা করে ছাড়বেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, তিনি তিন লক্ষ পুকুর কেটেছেন, ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভ গাছ রোপন করে পশ্চিমবঙ্গকে সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ এবং বিদ্যাসাগরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবেন বলে জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা, প্রেসিডেন্সি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হার্ভার্ড, কেমব্রিজ এবং অক্সফোর্ডের যোগাযোগ স্থাপন করেছেন বলে ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য করেছেন বলেও ঘোষণা মমতার। যদিও দক্ষিণ কলকাতায় অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা উত্তর কলকাতার থেকে অনেকটা কম। তাই আজকের জনসভায় শুধুমাত্র বাংলাদেশে বক্তৃতা রাখলেন মমতা। প্রথম থেকেই বাঙালি ঐতিহ্যকে তুলে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পাশাপাশি বাংলায় ঐতিহ্য এবং পরম্পরার কথা বার বার উল্লেখ করলেন নিজের ভাষণে। তৃণমূল নেত্রী দাবি করলেন, 'আজ কলকাতাকে দেখলে ভিন রাজ্যের মানুষ হিংসা করে। বাংলা জানে কিভাবে উন্নয়ন করতে হয়। কিভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে হয়।' আজকের জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে তিনি এখনো তৃণমূলের সবথেকে বড় ফ্যাক্টর।