হাওড়া রেললাইনের ধারে রেড ভলেন্টিয়ারের দেহ উদ্ধার ঘিরে রহস্য, আনিসের পর কি তাহলে দ্বিতীয় রাজনৈতিক মৃত্যু?

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 22/02/2022   শেষ আপডেট: 22/02/2022 10:05 p.m.

আবাদা এবং সাঁকরাইল স্টেশনের মাঝখানে ওই যুবকের রক্তাক্ত দেহ মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর

আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই হাওড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত। তার মধ্যেই এবার একটি অন্য ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হাওড়া জেলায়। আজ হাওড়া জেলার একটি রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হল আরেক রাজনৈতিক নেতার রক্তাক্ত দেহ। সূত্রের খবর অনুযায়ী তিনি সিপিএমের শাখা কমিটির সম্পাদক তথা একজন রেড ভলেন্টিয়ার এবং তার নাম সৌমেন কুন্ডু। শিবপুর ছোট ভট্টাচার্য্য পাড়া সিপিএম শাখা কমিটির সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ তাকে বাড়ির কাছে দেখা গিয়েছিল। অন্যান্য দিনের মতো, শিবপুরের চ্যাটার্জি হাট বাস স্ট্যান্ড থেকে আড্ডা মেরে তিনি বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। কিন্তু, রাত সোয়া আটটার পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। শোনা গিয়েছে তিনি ওই সময় একবার বাড়িতে ফোন করেছিলেন। রাতে চ্যাটার্জি হাট থানা এলাকায় সৌমেনের পরিবারের তরফ থেকে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। কিন্তু গভীর রাতে সাঁতরাগাছি জিআরপি খবর দেয়, রেল লাইনের ধারে সৌমেন এর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে।

পরিবার সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিনের মতোই সোমবার দুপুরে বেরিয়েছিলেন সৌমেন। মঙ্গলবার সৌমেনের বৌদি মৌসুমী কুন্ডু জানিয়েছেন, সোমবার রাত সোয়া আটটা নাগাদ সৌমেন এর সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়েছিল। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বাইরে একটি কাজে গিয়েছেন তিনি, ফিরতে একটু দেরি হবে। তারপর বারবার যুবকের মোবাইল ফোন বেজে গেলেও কেউ ফোন ধরেননি। তারপরে, হঠাৎ করে সেই মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজ এলাকার বাইরে চলে যায়। রাত এগারোটা হয়ে গেলেও, সৌমেন বাড়ি না ফেরায় সন্দেহ হয় পরিবারের। তারপর রাত দুটো নাগাদ সৌমেনের দাদা জয়দেব কুন্ডুর কাছে ফোন আসে সাঁতরাগাছি জিআরপি থেকে। তারা জানায়, সাঁতরাগাছি স্টেশনে তার ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, আবাদা স্টেশন থেকে ১ কিলোমিটার দূরে আবাদা এবং সাঁকরাইল স্টেশনের মাঝে রেললাইনে সৌমেন কুন্ডুর দেহ মিলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তার দেহে মাথার পিছনের দিকে গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে তা খতিয়ে দেখছে রেল পুলিশ। অন্যদিকে যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা প্রশ্ন। তিনি একজন বেসরকারি সংস্থার কর্মী ছিলেন, তাই তার খুব একটা বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হতো না। তাহলে কি কারণে তিনি আবাদা এবং সাঁকরাইল স্টেশনের মাঝখানে পৌঁছালেন, সেই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অন্যদিকে, প্রশ্ন উঠেছে যদি সাইকেল নিয়ে সৌমেন গিয়ে থাকেন তাহলে সাইকেলটা গেল কোথায়? অন্যদিকে, সৌমেনের বন্ধু সিপিএমের হাওড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কমিটির সদস্য সন্দ্বীপ কোলে জানিয়েছেন, নিখোঁজ ডায়েরি করার পর যদি পুলিশ মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করতো তাহলে সৌমেন কোথায় আছে তা হয়তো জানা যেত। তবে জিআরপির তরফ থেকে এই মুহূর্তে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ এই মুহূর্তে তদন্ত করতে পারছে না এই ঘটনার। হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, যদি পরিবারের তরফ থেকে লিখিতভাবে থানায় অভিযোগ জানানো হয় তারপরেই পুলিশ ঘটনার তদন্ত করতে পারবে, নতুবা তা নিয়মবিরুদ্ধ হবে।