অনলাইনে ক্লাস করার জন্য স্মার্ট ফোন কিনতে জ্যারিকেন বিক্রি করছে ৫ম শ্রেণির পড়ুয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 17/01/2021   শেষ আপডেট: 17/01/2021 6:56 a.m.
-

জনসাধারণের উদ্দেশে তার কাতর আর্জি, "একটা নিন না।"

কোমর সমান হলে দাড়িয়ে সকলে এই গঙ্গাসাগর মেলায় নিয়ে গেছেন এক জ্যারিকেন করে জল। কিন্তু সমর মণ্ডলের কাধে রয়েছে বেশ কটা জ্যারীকেন। করোনা পরিস্থিতি আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে গেলো। তার মধ্যে অনেকের পেশাও অনেকটা পাল্টে গেলো। সমর ক্লাস ৫ এর ছাত্র। অনলাইনে ক্লাস চলছে , কিন্তু সমর যোগ দিতে পারছেনা, কারণ তার কাছে স্মার্টফোন নেই। এরকম অবস্থায় একটি স্মার্টফোন কিনতে তাকে বিক্রি করতে হচ্ছে জ্যারিকেন। যেকোনো ভাবেই হোক তাকে এই সব জ্যারিকেন বিক্রি করতে হবে। পুণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে তার একটাই বার্তা। একটা নিন না, জল ভরার জন্য, দাম মাত্র ১০ টাকা। অনেকেই কিনছেন, আবার অনেকে দাম দর করে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাতে সমরের আশা ক্ষুন্ন হয় নি। বরং তাদের কাছে একটাই আর্জি - একটা নিন।

লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন তার বাবা। একটি বেসরকারি সংস্থা নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। অন্যদিকে তার মা বাড়ি বাড়ি সংসার চালানোর জন্য কাজ করছেন। পারিবারিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। তাই এবারের মেলায় বাবা মাকে সাহায্য করার জন্য জ্যারিকেন বিক্রি করছে ৫ম শ্রেণির সমর। সে বলছে, এবারে একটা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার স্মার্টফোন না হলে নয়। সহপাঠীদের বাড়ি গিয়ে ক্লাসের পড়া সে লিখে নিয়ে আসছে। কিন্তু তাতে বাংলা, ইতিহাস, ভূগোল এই সমস্ত সাবজেক্ট করা গেলেও, হচ্ছে না অংক, বিজ্ঞান এবং ইংরেজি। তাই এবারে একটা স্মার্টফোন তো দরকার।

কিন্তু এবারেও বাধ সেধেছে করোনা। প্রত্যেকবার পুণ্যার্থীর ভিড় অনেক বেশি থাকে। কিন্তু এবারে একেতো ভাইরাসের প্রকোপ, তার ওপর এবার ভিড় কম। তাই এবারে তার বিক্রিও তেমন কিছু হল না। যা টাকা হয়েছে তাতে হয়তো স্মার্টফোন কেনা সম্ভব নয়। একথা নিজেই স্বীকার করছে সমর। তাই সে আক্ষেপ করে বলেছে," বাবার চাকরিটা থাকলে আর সমস্যা হতো না।"