কাজ গেল দু'কোটিরও বেশি বাঁধা বেতনের কর্মচারীর

শ্রীরূপা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশিত: 13/09/2020   শেষ আপডেট: 13/09/2020 1:48 p.m.

দুশ্চিন্তায় অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা

মে মাসের গোড়ার দিকে উপদেষ্টা সংস্থা 'সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি' ( সি এম আই ই) ভারতের অর্থনীতি সম্পর্কে রিপোর্ট দিতে গিয়ে বলেছিল, করোনা বিপর্যয় রুখতে জারি করা লকডাউনের প্রথম মাসে, অর্থাৎ গত এপ্রিলেই দেশের 12 কোটিরও বেশি মানুষের কাজ চলে গেছে। কাজহারাদের অধিকাংশই ছোট ব্যবসায়ী ও মজুরি শ্রমিক, বাকিরা বাঁধা বেতনের চাকরিজীবী। সেইসময়ই সি এম আই ই বলেছিল, লকডাউন উঠে গেলে ছোট ব্যবসায়ী বা মজুরি শ্রমিকরা ধীরে ধীরে হয়তো নিজেদের কাজ ফিরে পাবেন। কিন্তু কাজ ফিরে পেতে সমস্যা হবে বাঁধা বেতনের কর্মীদের।

আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে সি এম আই ই-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা-রিপোর্ট দেখাচ্ছে, এপ্রিল- আগস্ট--- এই পাঁচ মাসে কাজ চলে গেছে দু'কোটি দশ লক্ষ বেতনভোগী চাকরিজীবীর। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এ বছরের গোড়ার দিকে দেশে বেতনভোগী কর্মীর সংখ্যা ছিল আট কোটি ষাট লক্ষের মতো। গত আগস্টে সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ছ'কোটিতে।

শুধু লকডাউন চলাকালীনই নয়, জুলাই-আগস্টে যখন লকডাউন উঠে গেছে, তখন অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাজ কিছুটা মিললেও নতুন করে চাকরি গেছে যথাক্রমে আটচল্লিশ লক্ষ ও তেত্রিশ লক্ষ বাঁধা বেতনের চাকরিজীবীর।

দেশের অর্থনীতির হাল-হকিকত নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, দুশ্চিন্তার ভাঁজ তাঁদের কপালে। কারণ ভোগ্যপণ্যের বাজারে আসল ক্রেতা এই বাঁধা মাইনের চাকরিজীবীরাই। গায়ে-গতরে খেটে-খাওয়া শ্রমিক-কর্মচারী, যাঁদের বেশিরভাগই অসংগঠিত, তাঁদের রোজগারের বড় অংশটাই সাধারণত খরচ হয়ে যায় খাওয়া-দাওয়া ও বেঁচে থাকার প্রয়োজন মেটাতেই। বেতনভোগী কর্মচারীদের মাসিক রোজগার কিছুটা বেশি হওয়ায় এবং চাকরির স্থায়িত্ব থাকায় এঁরা কেনাকাটা বেশি করেন, প্রয়োজন ছাপিয়ে শখ মেটানোর ক্ষমতা রাখেন। বাড়ি-গাড়ির জন্য ব্যাংক থেকে ঋণও এঁরাই সাধারণত নেন। ফলে এঁদের কাজ এভাবে চলে যেতে থাকলে গোটা দেশের বাজারের কেনাবেচায় তার বিরাট প্রভাব পড়বে।

এই পরিস্থিতির দায় কিন্তু শুধু করোনা বিপর্যয়ের ওপর চাপালে ভুল হবে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণা বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনীতির বেহাল দশা চলছে। এর উপর করোনা বিপর্যয়ে এক লাফে চাকরি হারালেন দু'কোটিরও বেশি বাঁধা মাইনের চাকরিজীবী, যা ফিরে পাওয়ার আশা অদূর ভবিষ্যতে নেই।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে এ এক ভয়ানক দুষ্টচক্র। অর্থনীতির বেহাল দশা বেকার করে দিচ্ছে মানুষকে। আবার কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কেনাবেচা কমে গিয়ে অর্থনীতির বেহাল দশা বাড়ছে। ফলে নতুন করে নেমে আসছে ছাঁটাইয়ের খাঁড়া। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজাই এখন বিশেষজ্ঞদের মাথাব্যথা।