৯ জুন, ২০২৩
সম্পাদকীয়

মহিষাসুরমর্দিনী : বাঙালি নস্টালজিয়ার আর এক নাম

'বাজল তোমার আলোর বেণু' মহালয়া ও মহিষাসুরমর্দিনী
Mohaloya durga eye painting Bengali News
-
rajkumar-giri
রাজকুমার গিরি
প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২১
শেষ আপডেট: ৬ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৪৬

বাঙালির মননে ও সত্তায় মহালয়ার সকালে অনুরণিত হয় 'বাজল তোমার আলোর বেণু'। এই দিনেই শুরু হয় পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা। একই দিনে বাঙালি তর্পণের মাধ্যমে পিতৃপুরুষদের স্মরণ করেন। পুরাণ মতে, এই দিনেই দেবী দুর্গা স্বর্গলোকের উদ্ধারে মহিষাসুর বধের গুরুদায়িত্ব নেন। আসলে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠায় এই দিনেই মা দুর্গার যাত্রা শুরু। ফলাফল প্রত্যাশিত হলেও দিনটি শোকের বলেছেন অনেকেই। তারপরও বাঙালির হৃদয়ে শোক নয়, বরং পুজো প্রস্তুতির দিগনির্দেশক হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে এই মহালয়া। তাই মহালয়া বাঙালির কাছে আবেগের, অনুভূতির, পুরাতন স্মৃতি রোমন্থনের দিনযাপন।

এই মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে 'আকাশবাণী', জড়িয়ে আছে 'মহিষাসুরমর্দিনী'। মহালয়ার সকালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের 'আশ্বিনের শারদপ্রাতে...' শুনলেই পুজোর অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হয় পুজো এসেই গেল! আর বাংলা বেতারের ইতিহাসে এত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান বোধহয় দ্বিতীয়টি নেই। এত বছর ধরে সমান আগ্রহ নিয়ে আজও বাঙালির ঘরে ঘরে মহালয়ার সকালে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে বেজে ওঠে 'তব অচিন্ত্য রূপ-চরিত মহিমা'। আর তখনই মনে হয় সার্থক এই বাঙালি জীবন।

সময়টা ১৯৩০। দেশটা তখনও ব্রিটিশদের হাতে। দেশজুড়ে চলছে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে 'আইন অমান্য আন্দোলন'। স্পষ্ট হচ্ছে ভারতের রাজনৈতিক পালাবদলের পটচিত্র। ওই একই বছরে ভারতীয় বেতারের গঠণতন্ত্রেও বদল এল। হল সরকারীকরণ। সেই সময় দেশজুড়ে বেতার কেন্দ্রে সঙ্গীতানুষ্ঠানের তীব্র চাহিদা। ঠিক দু'বছর পর ১৯৩২-এ বাংলা বেতারকেন্দ্র আকাশবাণীতে বাণীকুমারের হাত ধরে তৈরি হল 'বসন্তেশ্বরী' নামক একটি গীতি-আলেখ্য। সুরারোপ করলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক, পণ্ডিত হরিশ্চন্দ্র বালী। অনুষ্ঠানটির সংগীত পরিচালনা করলেন রাইচাঁদ বড়াল। অনুষ্ঠানের গ্রন্থণা করলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তৈরি হল বাংলা বেতারের ইতিহাসে এক নব দিগন্ত। তখনও হয়নি নামকরণ, কিংবা পায়নি এত জনপ্রিয়তা। কিন্তু তখন থেকেই বাঙালির মনে তৈরি হল এক অলৌকিক সুরমূর্ছনা।

ঠিক পরের বছর ১৯৩৩-এ হল পরিবর্তন ও পরিবর্ধন। মহালয়ার সকালে বাজানো হল এই বিশেষ অনুষ্ঠান। এর সংগীত পরিচালনা করলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক। যদিও বেশকিছু গানের সুর দিয়ে ছিলেন হরিশ্চন্দ্র বালী, সগীর খাঁ। ধীরে ধীরে এই অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হতে থাকে। একসময় নাম হয় 'মহিষাসুর বধ'। সেখান থেকেই 'মহিষাসুরমর্দিনী'। অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তায় গোঁসা করেন একদল ব্রাহ্মণ। প্রশ্ন তোলেন মহালয়ার সকালে এক অব্রাহ্মণের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের যৌক্তিকতা নিয়ে। যদিও ততদিনে বাঙালির মননে এই অব্রাহ্মণ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর গ্রথিত হয়েছে। তৈরি হয়েছে এক অলৌকিক সুরলোক। তাকে আটকায় কার সাধ্যি! এই লাইভ অনুষ্ঠান এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে দীর্ঘ কয়েক বছর মহালয়ার ভোরে এই অনুষ্ঠানের সম্প্রচার হতে থাকে। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হত। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র স্নান করে শুদ্ধ আচারে এসে শ্লোক পাঠ করতেন। বর্তমানে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের রেকর্ডটিই মহালয়ার দিন ভোরে সম্প্রচারিত হয়ে আসছে।

এরমধ্যেই ১৯৭৬ সালে তৈরি হল এক বিতর্ক। মহালয়ার দিন 'মহিষাসুরমর্দিনী'-র পরিবর্তে ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তী রচিত 'দেবীং দুর্গতিহারিণীম্' নামে একটি ভিন্ন অনুষ্ঠান একই সময়ে সম্প্রচার করা হয়। যেখানে অনুষ্ঠানে শ্লোকপাঠ করেন স্বয়ং উত্তমকুমার, সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে মান্না দে, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, আরতি মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীদের দিয়ে গান গাওয়ানো হয়। কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর এবং 'মহিষাসুরমর্দিনী'-র অনুষ্ঠানের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে বাঙালি জনগণ এই নতুন অনুষ্ঠানটিকে মেনে নিতে পারেননি। দেখা যায়, অনুষ্ঠান শেষ হতেই বিশাল জনতা আকাশবাণীর সামনে এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। জনরোষের চাপে একই বছর ষষ্ঠীর দিন ফের 'মহিষাসুরমর্দিনী' অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সেই একই অনুষ্ঠান আকাশবাণীর তরফে সম্প্রচারিত হয়ে আসছে। আর সমান ভাবেই জনপ্রিয়।

আরও খবর

বিজ্ঞাপন দিন

[email protected]

৩০ মে

তাঁর সৃষ্টিতে নারীই হয়ে ওঠেন মূল 'প্রটাগোনিস্ট', চরিত্র নির্মাণে ছক ভেঙেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ

Rituparno Ghosh
৯ মে

আজ বাঙালির 'রবি-পুজো', জেনে নিন কবির জীবনের নানা অজানা কাহিনী

Rabindranath Thakur 2
১৪ এপ্রিল

সম্রাট আকবরের হাত ধরেই বাংলায় এসেছে নববর্ষ, জানুন বিশদে

Bengali Puja
২৬ জানুয়ারি

ভারতের ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে , বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হবেন মিশরের রাষ্ট্রপতি

Indian national flag
১৩ অক্টোবর

আগামী ২১ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর, আলোতে এবং ভালোতে ভরে উঠবে পরিবেশ

Diya
৫ সেপ্টেম্বর

২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবসই হোক জাতীয় শিক্ষক দিবস, দাবি বাংলাপক্ষের

Teachers' Day Sarvepalli Radhakrishnan
৪ সেপ্টেম্বর

পুজোর পরেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার

exam students
৩ সেপ্টেম্বর

তিনিই মহানায়ক, নারী মনোহরণের ব্রান্ড অ্যাম্বাস্যাডার উত্তমকুমার

Uttam kumar 3
১ সেপ্টেম্বর

দুর্গাপূজাকে বাংলার হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে চলেছে রাজ্য সরকার

Mamata Durga stadium
৩১ আগস্ট

ধৃতদের অধিকাংশের বাড়ি রাজস্থান

Arrest handcuffs night crime police
২৪ আগস্ট

চলতি সপ্তাহের শুক্রবার এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা

calcutta highcourt
২২ আগস্ট

তৃণমূল সমর্থিত সরকারি সংগঠন‌ও সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতাই করেছে

Mamata smile
২২ আগস্ট

চলতি বছর ক্লাবগুলিকে ৬০ হাজার টাকা অনুদান দেবে রাজ্য সরকার

Mamata Banerjee smilee
৯ আগস্ট

আজ চিঠি দিয়ে রাজ্যকে এমনটাই জানিয়েছে UNESCO

Mamata Banerjee smilee