শুধু কলকাতাতেই নয় সারা পশ্চিমবাংলা জুড়েই যেভাবে দুর্গাপুজো আচার ও নিষ্ঠার সাথে শতাব্দীর পর শতাব্দী অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে তা বর্ণনারও অতীত। এখানে আমরা জানতে চলেছি কৃষ্ণনগরের নীল দুর্গার কথা, যেখানে প্রতিমা শিল্পীর ভুলে ও দেবীর আদেশে গৌর বর্ণের গৌরীর গায়ের রং হল নীল অপরাজিতার মতো। আজও স্বমহিমায় 'নীল দুর্গা বাড়ির' সেই 'নীল দুর্গা' পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে।
![healthy food diet](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2021/05/23/photo-uploads/brooke-lark-jUPOXXRNdcA-unsplash.jpg)
![Rains বৃষ্টি](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2022/08/20/flood-965092_1280.jpg)
ভারত-বাংলাদেশ ভাগ হওয়ার পূর্বে প্রায় ৩০০ বছর আগে অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বামরাইল গ্রামে চিন্তাহরণ চট্টোপাধ্যায় এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। পরবর্তী কালে দেশ ভাগের পর ওই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা কৃষ্ণনগরের নাজিরা পাড়ায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
কৃষ্ণনগরের নাজিরা পাড়াতেই ১৯৪৭ সাল থেকে নীল দুর্গার পুজোর প্রচলন শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে পুজোর নানা আচারকে কেন্দ্র করে মত পার্থক্যের জেরে শরিকি বিবাদ তৈরি হয়। সেই বছর থেকেই আলাদাভাবে শুরু হয় নীল দুর্গার পুজো। দুই পরিবারেই একচালা প্রতিমা তৈরি হয়। এখানে মা দুর্গার উল্টো দিকে অর্থাৎ বাম দিকে থাকে সরস্বতীর সাথে গণেশ এবং ডান দিকে থাকে লক্ষ্মীর সাথে কার্তিক, এটাই এখানকার ঠাকুরের বিশেষত্ব।
![neel durga bari krishnanagar Bengali News](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails-big/neel-durga-bari.jpg)
এখানে দেবীর নীলবর্ণা হওয়ার পেছনে এক কাহিনি আছে। বলা হয় সেই সময় মূর্তি তৈরি করছিলেন এক বৃদ্ধ মৃৎশিল্পী। বয়সের ভারে শরীর ভেঙেছে চোখেও কম দেখেন। হাতেও সময় যথেষ্ট কম, রাত ফুরোলেই যে পুজো! কিন্তু দেবীর গায়ের রঙ করা তখনও বাকি। ক্লান্ত শরীরে এক হাতে কেরোসিনের লম্ফ তুলে ধরে এক মনে রং করছিলেন প্রতিমার। অন্ধকারে ঠাকুর রং করতে গিয়ে ভুল করে ঠাকুরকে নীল রং করে দেন। ভোরের নরম আলো পড়লে ক্লান্ত চোখে প্রতিমার দিকে ভাল করে তাকিয়ে চমকে ওঠেন বৃদ্ধ। দেবীর গায়ে অপরাজিতা রঙ দেখে মুষড়ে পড়লেন সকলেই। তার পরেই ভুল কি ভাবে শোধরানোর যায় সকলে ভাবতে লাগলো। এমন সময় বাড়ির কর্তা এসে জানালেন, রাতেই দেবী তাঁকে স্বপ্নে আদেশ দিয়েছেন, যেন নীল অপরাজিতা রঙেই দেবীর গায়ের রং করে পুজো করা হয়। সেই থেকেই কৃষ্ণনগরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে অপরাজিতা রঙে পূজিত হয়ে আসছেন এই ‘নীল দুর্গা দেবী'। এইভাবেই সারা বাংলা জুড়ে নানা বর্ণে রঞ্জিত হয়ে পূজিত হয়ে আসছেন যুগ যুগ ধরে দেবী দুর্গা।