জেতার দুই পন্থা আছে। বিপক্ষকে কাবু করো অথবা তাকে ছাপিয়ে যাও নিজ চেষ্টায়। বিরোধীতা করতে গেলে প্রথমটাই যথেষ্ট, আর প্রতিপক্ষ হতে গেলে দ্বিতীয়টা আবশ্যিক। ক্লাসের ফার্স্ট বয়ের কুৎসা করে বেড়ানো বা তাকে মিথ্যা অভিযোগে ইচ্ছাকৃতভাবে বিড়ম্বনায় ফেলে তার মনোবল নষ্ট করে প্রথম স্থান দখল করার স্বপ্নপিয়াসী ছাত্রটি সাফল্যের পথে এগিয়ে? নাকি আরও বেশি পরিশ্রম ও পড়াশোনার মানোন্নয়ন ঘটানো ছাত্রটি প্রথমের দিকে না তাকিয়েও ধাপ উত্তরণের উন্নত দাবিদার? এই প্রসঙ্গেই রাজ্য সরকারের দুই প্রতিপক্ষকে সূচিত করা যায়। যদিও তাদের মধ্যে একপক্ষ নিজেদের 'বিরোধী' নামেই আখ্যায়িত করতে উন্মুখ (এবং বঙ্গবাসীর কৃপায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী পদাধিকারীও বটে) , আরেকপক্ষ নিশ্চুপ হলেও নিষ্ক্রিয়তায় অনীহা (এবং কপা-শূণ্যতার দরুণ আনুষ্ঠানিক বিরোধীতা থেকে বঞ্চিত)।
তা যাই হোক, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসা তৃণমূল সরকারের এই জয়ের পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। টিভি চ্যানেলের শিরোনামে তাদের তত বেশী দেখা গেছে যারা যত বেশি গর্জেছে। অবশ্যই এই গর্জন 'ক্রোনোলজিকালি' কালো-দিন(পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের দিন), রাজ্যপাল, ইডি, সিবিআই, মুখ্যসচিব সকল বিষয়কে সাথে নিয়ে সমবেতভাবে। অন্যদিকে সংবাদপত্রের আনাচে কানাচে ( না শিরোনামে নয়) তাদের বেশি দেখা গেছে যারা নিঃশব্দে রাস্তায় ছিল এবং আছে। অরওয়েলের '1984' এও নজরদার-খবরদার বিগ ব্রাদার্সের কথা ছিল বইকি, কিন্তু ২০২১ এ এসে আমরা সাথে পেলাম রেড ভলেন্টিয়ার্স। হ্যাঁ নজরদারি এরাও করে, তবে খবরদারি নয়।
এখানে নিঃশব্দে অতিমারির অতিথি এক বিপ্লব পৌঁছে যাচ্ছে আঙ্গুল 'ছোঁয়া' অক্সিমিটার, কাঁধে-পিঠে গিটারের স্থানে অক্সিজেন সিলিন্ডার, কলেজ ব্যাগে বোঝাই হওয়া মাস্ক-স্যানিটাইজার হয়ে। শ্বাসকষ্টে সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগে যখন মুখের সামনে থেকে ধর্মযুদ্ধের টুইট নামিয়ে রেখে অক্সিজেন মাস্ক টা পরে নিলেন, খেয়াল করেননি হয়তো সিলিন্ডার হাতে দাঁড়িয়ে ছিল আপনারই পাড়ার ফার্স্ট ইয়ারের 'অনিশ্চিত পরীক্ষা-অনিশ্চিত ভবিষ্যত অথচ নিশ্চিত জীবনদানের ইচ্ছে' বয়ে বেড়ানো এক কলেজপড়ুয়া রেড ভলেন্টিয়ার। বেঁচেই তো গেলেন, এবার অন্তত 'বিরোধী' আর 'প্রতিপক্ষ' নিয়ে বিশ্লেষণ করুন।
বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি রইল প্রশাসনের কাছেও।