এই ছয়টি রকমের জীবনধারা মেনে চললেই, আপনার হৃদয় থাকবে সুস্থ
হৃদয়ের অসুখ থেকে আপনাকে বাঁচাবে, নিয়মমাফিক জীবনধারা
'যদি হৃদয়ে লেখ নাম..', সে নাম রয়ে যাবে! কিন্তু নাম থেকে যাবার জন্য আপনার হৃদয়টিকেও যে সুস্থ সবল থাকতে হবে, সে খেয়াল আছে? অনিয়মিত জীবনযাপন, উৎশৃঙ্খল দৈনন্দিন কার্যাবলী, শরীরের পর্যাপ্ত যত্নের প্রতি ঔদাস্য, ডেকে আনতে পারে আপনার হৃদয় দপ্তরটির জন্য ভয়াবহ বিপদ। কিন্তু একটু নিয়ন্ত্রণে থাকলে, আপনি রক্ষা করতে পারেন আপনার এই হৃদয় নামক সম্পদটিকে। নিম্নোক্ত ছয় প্রকার হৃদয়-বান্ধব জীবনধারায় আপনি অভ্যস্ত হলেই, হৃদয়ঘটিত যেকোন বিপদ থেকে আপনি থাকবেন শত হস্ত দূরে।
১) অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস- দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, আমরাও প্রবল শরীর-বিমুখী হয়ে উঠেছি। স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে আমাদের আর সেরূপ সখ্যতা নেই। সেই স্থানে এসছে 'ফাস্টফুড' (Fast Food) ' জাঙ্ক ফুড' (Junk Food) জাতীয় অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের নাম। বলাই বাহুল্য, এই অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মশালাযাত খাদ্য আমাদের শরীরের জন্য বিপদ ডেকে আনে। এই খাবারগুলি গ্রহণের ফলে স্থূলতা বৃদ্ধি পায়। আর স্থূলতা এবং হৃদরোগের অচ্ছেদ্য বন্ধন। সুতরাং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে হৃদরোগও আবশ্যিক। তাই সবকিছুর আগে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রতি সদয় হতে হবে। অত্যধিক মশলা বা তেলযুক্ত খাবার, চর্বি, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে। সুষম খাবার গ্রহণের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফাস্টফুড বা জাংক ফুড জাতীয় খাবার, আমাদের সাময়িক আনন্দ দিলেও, শরীরের সঙ্গে এদের আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। বরং যথেষ্ট শত্রুতাপূর্ণ সম্পর্কেই এরা আবদ্ধ।
২) অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ- অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, আমাদের শরীরের পক্ষে হানিকারক। অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা খাদ্যের সঙ্গে অকারনে, বেশি পরিমাণে লবণ ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক (heart attack) এবং কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরের (Congestive heart failure) মত রোগ সক্রিয় হয় শরীরের ওপর। প্রাপ্ত বয়স্কদের ছয়গ্রাম মত, লবণ পরিসেবন করা উচিত। লবণের বিকল্পে মরিচ, ভেষজ, রসুন, মশলা বা লেবুর রস শরীরের উপকারের জন্য গ্রহণ করতে পারেন।
৩) শরীরচর্চা- 'স্বাস্থ্যই সম্পদ', কথাটি ছোটবেলা থেকে আমরা যতই পাখি পড়ার মতো আওড়াই না কেন, মানার বেলায় পিছু হটি। আমরা সবচেয়ে বেশি উদাসীন থাকি, আমাদের শরীরের প্রতি। যে শরীরচর্চা আমাদেরকে যে কোন বিপদের হাত থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে রাখতে পারে, সেই শরীরচর্চার প্রতি আমরা অনীহা পোষণ করি। কিন্তু তবুও আমাদের এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। শরীরচর্চাকে দৈনন্দিন অভ্যাসের পর্যায়ে উপনীত করতে হবে । কারণ শরীরচর্চা হল সুস্থ শরীরে দোসর। প্রতিদিন অন্তত দুবেলা পনেরো মিনিট করে জোরে জোরে হাঁটতে হবে, এর ফলে শরীর চর্চার সঙ্গে হজমশক্তিও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হবে। শরীর সুস্থ থাকলে হৃদরোগসহ যেকোন বিপদের আশঙ্কা কমে যাবে।
৪) অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান- অতিরিক্ত অ্যালকোহল (Alcohol) পান শরীরের পক্ষে 'বিষ'। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের ফলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, এবং শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে মেদ জমে। স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক মেদবহুল হওয়ার কারণে হার্ট ব্লকেজ (Heart Blockage) দেখা যায়। যার ফলে ঘটতে পারে বিপত্তি। সেজন্য অ্যালকোহল পান করা দমন করতে হবে। আর নয়তো একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পর আর যাতে পান না করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫) ধূমপান এবং তামাক সেবন- অ্যালকোহলের মত ধূমপান এবং তামাক সেবনে হলো শরীরের শত্রু। ধূমপান কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যার মধ্যে রয়েছে করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোক। এইভাবে ধূমপান আপনার ধমনীর আস্তরণের ক্ষতি করে, যার ফলে ফ্যাটি উপাদান (এথেরোমা) তৈরি হয় যা ধমনীকে সরু করে দেয়। এর ফলে এনজাইনা, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। তামাকের ধোঁয়ায় থাকা কার্বন মনোক্সাইড আপনার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এর মানে হল আপনার হৃৎপিণ্ডকে শরীরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য আরও জোরে পাম্প করতে হবে। বোঝাই যাচ্ছে এর ফলে স্বাভাবিক ছন্দ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হৃদয় বিপদসংকুল হয়ে ওঠে। এটি প্যাসিভ ধূমপায়ীদের জন্যও খারাপ।
৬) মানসিক চাপ- মন থাকলে, মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কখনো মানসিক চাপ শরীরের মৃত্যুমুখী বিপদ ডেকে আনতে পারে অতিরিক্ত মানসিক চাপে আপনার জীবনের স্বাভাবিক তাল ব্যাহত হয়। এর ফলে তখন যা করা উচিত নয় সেই কাজ গুলির প্রতি প্রবণতা বৃদ্ধি পায় যেমন অতিরিক্ত ধূমপান অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা অতিরিক্ত তামাক সেবন ইত্যাদি আগেই বলা আছে এই প্রত্যেকটি জিনিসই হলো শরীরের পক্ষে বিষ। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হলে, মনের ওপর প্রভাব পড়ে, এবং সেই প্রভাব শরীরকেও কুপোকাত করে। তাই জন্য মানসিক চাপকে শিথিল করতে, মনকে ভালো রাখতে হবে, ধ্যান করতে হবে, নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে, এবং বিনোদন মূলক কাজে নিয়োগ করতে হবে।