ফুটপাথে কন্যাসন্তান প্রসব, এগিয়ে এলেন না কেউই, অবশেষে পুলিশের তৎপরতায় রক্ষে

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 02/09/2022   শেষ আপডেট: 02/09/2022 8:05 a.m.

মানবিক পুলিশ, এগিয়ে এল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা

ব্যস্ত শহরের বুকে তখন দৌড়ঝাঁপ। ভিড়ে থিকথিক করছে চারপাশ। মুখ তুলে তাকানোর অবকাশটুকু নেই। কেবল হেঁটে যাওয়া! কেউ ঘরে ফিরছেন, কিংবা কেউ বাইরে অফিসের কাজ সেরে ফের অফিসে প্রত্যাবর্তন। শহর জুড়ে তখন ব্যস্ততার মরশুম চলছে। অনেকেই একে অপরের হাত ধরে মিষ্টি প্রেমালাপ কিংবা পছন্দের প্রিয়জনের পিছু ধাওয়া। এমন শহরের বুকে লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে দেখা গেল চরম অমানবিকতার ছবি। মানবিক পুলিশের সহায়তায় শেষমেশ রক্ষে। নাহলে তো জীবন সংশয়। হাজার হাজার মানুষ দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলেন। এ কেমন কলকাতা? অনেকটাই অচেনা, অনেকটাই বিবেকশূন্য।

প্রাক্ দুর্গাপুজোর মুহূর্তে শহরে তখন শোভাযাত্রার উদ্যোগ আয়োজন। মানুষের ভিড়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা। এরমধ্যেই ফুটপাথবাসী এক নারীর অসহনীয় প্রসব যন্ত্রণা। রানী নামের বছর ৩৫-র সেই মহিলা তখন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। ফুটপাথের উপর রক্তের ধারা বইতে শুরু করেছে। না, কোন সাধারণ মানুষ এগিয়ে এলেন না। মানুষ তো মাটির দুর্গার শোভাযাত্রা ঘিরে মশগুল। অন্যদিকে জীবন্ত দুর্গা সহায় সম্বলহীন। নিতান্তই অসহায়।

সবাই যখন একে একে সরে যাচ্ছেন, তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন কলকাতা পুলিশ। আশেপাশের দোকানদাররা এগিয়ে এলেন। খবর গেল পাশের ট্রাফিক সার্জেন্টের কাছে। এগিয়ে এলেন ইন্সপেক্টর ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং সার্জেন্ট প্রণব দেবনাথ। ততক্ষণে ফুটপাথবাসী রানী কন্যাসন্তান প্রসব করেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর অবস্থা কাহিল। তৎক্ষণাৎ তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় মা ও মেয়েকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হল। এগিয়ে এল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

তবে শহরের বুকে এই দৃশ্য মর্মান্তিক। ব্যস্ততার ভিড়ে চাপা পড়ে গেছে মানুষের মূল্যবোধ। হারিয়ে গেছে ন্যূনতম নৈতিকতা। প্রথমাবস্থায় এমন অসহায় মানুষের পাশে থাকার একটা লোক পাওয়া যায়নি। কেউ রানীর পাশে দাঁড়ায়নি। এ এক অদ্ভুত দৃশ্য! মিছিল নগরী কলকাতার বুকে প্রাক্ দুর্গাপুজোর মুহূর্তে উৎসবের মেজাজ। কিন্তু আসল দুর্গা তখন ফুটপাথে যন্ত্রণায় কাতর।