স্বামী বিবেকানন্দ: বাল্যের ডানপিটে ছেলেটির হাতেই ভারতীয় সভ্যতার পুনরুদ্ধার

রাজকুমার গিরি
প্রকাশিত: 12/01/2022   শেষ আপডেট: 12/01/2022 3:36 p.m.
স্বামী বিবেকানন্দ (১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ - ৪ জুলাই ১৯০২)

মা চাইতেন ছেলে হোক শিবের মতো, ছেলে কী না শিবের চেলা এক ভূত!

ছেলেবেলার ডানপিটে ছেলেটি! দস্যিপনা না করলে যাঁর চোখের পাতায় ঘুম নামত না, সেই বড় হয়ে যোগী সন্ন্যাসী হয়ে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরলেন ভারতীয় সভ্যতার মহান ঐতিহ্য, ইতিহাস, ধর্ম, দর্শনকে। বিশ্ববাসীকে দীক্ষা দিলেন এক মহান ব্রতে। কর্মই ধর্ম - এই মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করলেন মানুষকে। পায়ে হেঁটে করলেন ভারত পরিভ্রমণ। বুঝলেন দেশটাকে। ধর্ম যাঁর কাছে দেশাত্মবোধের অপর নাম। তিনিই নরেন্দ্রনাথ দত্ত, তিনিই স্বামী বিবেকানন্দ।

জন্মেছিলেন উত্তর কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী বিশ্বনাথ দত্ত। বিবেকানন্দ চাইলে পিতার মতোই ওকালতি ব্যবসা করে অগাধ সম্পদ অর্জন করতে পারতেন। চাইলেই তিনি ইংরেজদের কাছে আনুগত্য স্বীকার করে আর চার-পাঁচটা বাঙালির মতোই কেরানির চাকরি বেছে নিতেন। কিন্তু তিনি সেপথে যাননি। ভারতীয় সভ্যতার গৌরব পুনরুদ্ধারে ব্রতী হয়ে এক অন্তর্লীন যাত্রায় পদচারণা করেছিলেন। বাল্যের সেই দস্যি ছেলে বড় হয়ে পা বাড়ালেন এক অনির্দেশ্যের পথে, এক নব যুগচেতনার উন্মোচনে।

ছেলেবেলা থেকেই বিবেকানন্দের অগাধ দুরন্তপনার মধ্যেই আধ্যাত্মিকতায় ঝোঁক। খেলা ছিল তাঁর ধ্যান। তাই বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সময় তাঁর কোন হুঁশ জ্ঞান থাকত না। শোনা যায়, ধ্যানমগ্ন অবস্থায় শরীরের পাশ দিয়ে একটি সাপ চলে গেলেও তিনি বুঝতে পারেননি। বাল্যেই নিজের জাত পরীক্ষা করার জন্য বাবার বৈঠকখানায় রাখা সবগুলো হুকোয় টান দিয়েছিলেন তিনি। আর বাবাকে সগৌরবে উত্তর দিয়েছিলেন, দেখছিলাম জাত যায় কী না! বিবেকানন্দের ছেলেবেলাতেই তৈরি হয়েছিল দস্যিপনার মধ্যেও এক নির্লিপ্ত অনুভূতি।

অনেক বড় সংসার। নয় জন ভাইবোনের সংসারে বিবেকানন্দের দুরন্তপনার শেষ ছিল না। মা ভুবনেশ্বরী দেবী শিবের মতো সন্তান চেয়েছিলেন। আর মজা করে বলতেন, "শিবের কাছে ছেলে চাইলুম। তা তিনি নিজে না এসে পাঠালেন তার চেলা এক ভূতকে।" আর তিনিই পরবর্তীকালে হয়ে উঠলেন যুগাবতার। ভারতীয় সভ্যতার সুমহান ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার প্রধান কান্ডারি।

বিবেকানন্দ কেবল অনুপ্রেরণা নয়, বিবেকানন্দ এক নব-সত্য, বিবেকানন্দ এক পরাজিত জাতির শক্তি। বিবেকানন্দের কেবল ধর্মীয় আদর্শ নিয়ে চর্চা হয়, কিন্তু তিনি কি কেবল ধর্মীয় আদলে গড়া একজন সন্ন্যাসী মাত্র? বহিরঙ্গে তিনি সন্ন্যাসী, অন্তরঙ্গে সমাজ গড়ার এক সাংসারিক কারিগর। দেশ, সভ্যতা, জাতির অগ্রগতিই ছিল তাঁর কর্মযজ্ঞের প্রধান উদ্দেশ্য। বাল্যের সেই ডানপিটে ছেলের হাতেই ভারতীয় সভ্যতার পুনরুদ্ধার, নির্দ্বিধায় বলা যায়।