একুশের শহীদ স্মরণ মঞ্চে ঝাঁঝালো বক্তৃতা মমতার, কী বললেন মাননীয়া? দেখে নিন একনজরে

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 21/07/2022   শেষ আপডেট: 21/07/2022 6:32 p.m.
facebook.com/MamataBanerjeeOfficial

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চে উঠতেই সমবেত জনতা 'জয় বাংলা' রব তোলে

২১ জুলাই তৃণমূলের শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠান যেন সত্যিই স্মরণীয় করে রাখল আবহাওয়া। সকাল থেকে ঝমঝমে বৃষ্টিতে যেখানে বাইরে বেরোনো দায়, সেই অবস্থাতেই বৃষ্টি মাথায় করে ধর্মতলা চত্বরে পৌঁছেছিলেন হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী সমর্থক। জেলা থেকে এককাপড়ে আসা সমর্থকদের একটাই প্রত্যাশা, কখন তাদের দলনেত্রীকে চোখের দেখা দেখতে পাবেন, কখন তার মঞ্চ কাঁপানো ভাষণ শুনতে পাবেন।

মমতা উঠলেন মঞ্চে, একেবারে শেষে। তখন বৃষ্টি ধরে এসেছে। ব্রিগেডের মাঠে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুগুলোর মাথার উপর দিয়ে ছাতা সড়ছে ধীরে ধীরে। মাননীয়া উঠলেন। তিনি এলেন, দেখলেন, আর জয় করলেন বলা চলে। চারিদিকে তখন 'জয় বাংলা' রব। ঝাঁঝালো বক্তৃতার শুরুতেই সকলকে ধন্যবাদ জানালেন বৃষ্টি উপেক্ষা করে অপেক্ষা করার জন্য। দলীয় মন্ত্রী, মেয়রদের পর সাংসদ, বিধায়কদের শুভেচ্ছা জানালেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, "আজ এত বৃষ্টিতেও এত ঝড়-জলেও যখন আপনাদের একজনকেও সরাতে পারেনি, তখন মনে রাখবেন মানুষের এই বৃষ্টি বিজেপিকে ২০২৪ সালে ভারত থেকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে। আমাদের লড়ার ক্ষমতা আছে। ওদের লড়ার ক্ষমতা নেই। আমাদের মেরুদণ্ড সোজা। ওদের মেরুদণ্ডে একদিকে সিবিআই, একদিকে ইডি, অন্যদিকে ইনকাম ট্যাক্স, জিএসটি। ওদের মেরুদণ্ড বাঁকা, ওরা মাথা নীচু করে চলে।" তিনি আর বলেন, "একুশে জুলাই প্রতিবছর‌ বৃষ্টি হয়। জুলাই বর্ষার মাস, বৃষ্টি হবে না তো কি বরফ পড়বে? ঈশ্বর আল্লাহর কৃপা, বৃষ্টি কিন্তু এবার‌ও হল। ঝম ঝমা ঝম বৃষ্টি। রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি। ঝিমঝিম ঝিমঝিম বৃষ্টি। বিজেপি খুব হাসছিল। সিপিএম খুব কাঁদছিল। ভাবছিল, হয়ত তৃণমূল কংগ্রেসের মিটিংটাই নষ্ট হয়ে গেল। তৃণমূল কংগ্রেস দলটা কেমন মিষ্টি জানো? কখনও রৌদ্র, কখনও বৃষ্টি। কখনও দগ্ধ, কখনও সৃষ্টি।"

প্রসঙ্গ পাল্টে মমতা এরপর বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে ফ্রি-তে রেশন পাবেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার পাবেন। স্কুলে গেলে সাইকেল পাবেন, ব্যাগ পাবেন, খাতা পাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে কন্যাশ্রী পাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে স্বাস্থ্যসাথী পাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে কৃষক বন্ধু পাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে পেনশন পাবেন, ভাতা পাবেন। তাই তৃণমূল বার বার।" মাননীয়া জানান, "কেন্দ্রীয় রিপোর্ট বলছে, কৃষকদের আয়ের দিক থেকে প্রথম বাংলা। আমি গর্বিত। সারা ভারতে ৪৫ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে। বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমে গিয়েছে, দারিদ্র কমে গিয়েছে।"

বেকারত্ব নিয়ে মমতার দাবি, "শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আদালতে মামলা চলছে তাই, নাহলে ১৭ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। ওই পদগুলি ভর্তি করার জন্য দফতরও তৈরি। আদালতে মামলা চলছে বলে আমরা করতে পারছি না। আমরা চাই চাকরি হোক, আর বিজেপি চায় চাকরি যাক। তোমার যদি রেল ধরি, যদি কোল ইন্ডিয়া ধরি, যদি সিভিল অ্যাভিয়েশন ধরি… কী করেছো? সব তো গুলে গুলে খেয়েছো। আর বলছ, বাংলার লোককে চাকরি দেওয়া যাবে না। আলবৎ দেব। ক্ষমতা থাকলে তোমরা রুখবে। আমি জানি রাস্তা কী করে বের করতে হবে।" বামফ্রন্টকে ঠুকে তিনি বলেন, "বাম আমলে চাকরি বিক্রি হয়েছে। ১০-১৫ লক্ষ টাকায় এক একটি চাকরি বিক্রি হয়েছিল। নাম বলে ছোট করতে পারি না। সিপিএমের একটা কাগজ আছে। দলের কাগজ। জিজ্ঞেস করুন তো তাতে যাঁরা সাংবাদিক রয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগের স্ত্রী শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন কী করে? যোগ্যতার বিচারে? ছেলেরা পার্টি করবে আর বউরা চাকরি করে। এই করে সিপিএম চাকরিগুলি দিয়েছিল। আমরা জানি এগুলি। আমাকে শেখাবেন না।"

কেন্দ্রের জিএসটি নিয়ে ঠোকা মেরে মমতা বলেন, "মুড়িতেও জিএসটি! ইডি, সিবিআই এলে মুড়ি খেতে দেবেন। সঙ্গে একটু তেল দেবেন। বলে দেবেন, এর জিএসটি নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। মিষ্টি, চিড়ে, দইতেও জিএসটি, লস্যিতেও জিএসটি, নকুলদানায় কত জিএসটি? বাতাসায় কত জিএসটি? নিমপাতায় কত জিএসটি? লোকে কী খাবে? খাব কী? মানুষ খাবে কী? আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নাহলে বিজেপি বিদায় না। পরিষ্কার কথা। ভাত খেয়ে, মুড়ি খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি। বেড ভাড়াতেও জিএসটি। মরে গেলে কত জিএসটি। আর মরে গেলে খাটের দামে কত জিএসটি? আমি জানতে চাই।"

বাংলাকে টাকা থেকে বঞ্চিত করছে বিজেপি এই মর্মে গলা শাণিয়ে মাননীয়া বলেন, "বাংলাকে একশো দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না। গরিব মানুষ গত সাত মাস ধরে কাজ করে টাকা পাচ্ছেন না। আরও কত টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। কেন আমার হকের টাকা বন্ধ করে দিলেন? ভোটে হেরেছেন বলে ভাতে মারার চেষ্টা করবেন? চব্বিশে বিজেপির কারাগার ভেঙে দিন। দেশে গরিবের প্রধানমন্ত্রী চাই।"