মোদী, অমিত শাহ আমার বন্ধু, বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে ঘোষণা দীনেশের

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 13/02/2021   শেষ আপডেট: 13/02/2021 6:37 a.m.
দীনেশ ত্রিবেদী ~Facebook

রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, "তৃণমূলকে ধন্যবাদ, চুপ করে থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে

রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে সম্প্রতি ইস্তফা দিলেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, "তৃণমূলকে ধন্যবাদ, চুপ করে থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি বাংলায় গিয়ে মানুষের কথা বলতে চাই।" নিজের ইস্তফা ঘোষণা করে দীনেশ ত্রিবেদী এদিন বললেন, "আসলে আমাদের জীবন জন্মভূমির জন্য উৎসর্গকৃত। সর্বত্র অত্যাচার চলছে। আর আমি যেহেতু পার্টিতে আছি তাই আমাকে সব কিছু দেখে না দেখা করতে হচ্ছে। আমি চুপ করে থাকতে পারছি না। আমার মন আজ বলছে, বিবেকানন্দের বাণী শোন - ওঠো, জাগো, এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।"

এই ইস্তফা ঘোষণার পরেই তার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো শুরু করলেন তৃণমূল নেতারা। সৌগত রায় বললেন তার এটা করা ঠিক হয়নি। রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দেরি না করে দিনেশবাবুকে জলে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, ইস্তফার পরে বেরিয়ে অন্যান্য দল বদলকারীদের মতই শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন দীনেশ ত্রিবেদী। দীনেশ বলছেন, "দল পরিচালনার ভার কর্পোরেটের চলে গিয়েছে। অযোগ্য লোককে বসানো হয়েছে দলের নেতৃত্বে। ইস্তফা দিয়ে অনেকটা হালকা লাগছে। আপাতত নিজের সঙ্গে নিজে থাকব। সহ্য করতে করতে সমস্ত মানুষকে একদিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমারতো সাড়ে পাঁচ বছর কার্যকাল বাকি ছিল। আর আমি বড় বাংলোয় থাকতে পারতাম। কিন্তু আমরা যখন সার্বজনীক জীবনে আসি তখনই সমস্ত ভাবি না। চতুর্দিকে যখন এত হিংসা এবং দুর্নীতি দেখি আমি চুপচাপ বসে থাকতে পারিনা। আমি বিরোধিতা করি।"

অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরোনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রোফাইলের কভার পিকচার পাল্টে ফেললেন এই বিদ্রোহী নেতা। তিনি জানালেন, দলের রাশ আর মমতা ব্যানার্জির হাতে নেই। এতদিন পর্যন্ত তার টুইটার প্রোফাইলে কভার ফটোতে মমতা ব্যানার্জির একটি ছবি সহ একটি গ্রাফিক্স দেখা যেত। ওই ছবির কোনায় একটি জায়গায় তৃণমূলের প্রতীক ছিল। আর এখন চলে এসেছে স্বামী বিবেকানন্দের ছবি শোভিত একটি গ্রাফিক্স। পিছনে রয়েছে একটি জাতীয় পতাকা। পুরো প্রোফাইলে তৃণমূলের নামগন্ধ কোথাও নেই। এখনো পর্যন্ত তৃণমূল ছেড়েছেন কিনা সেই বিষয় নিয়ে কিছু জানাননি দীনেশ। তবে টুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরিয়ে দেওয়ার পর মনে করা হচ্ছে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। তবে তার আগেই এই বিদ্রোহী নেতার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন একের পর এক তৃণমূল নেতা। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, "পিছন থেকে ছুরি মেরেছে দলকে দীনেশ ত্রিবেদী।"

তবে মনে করা হচ্ছে ওদের থেকে তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী এবারে বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন। রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে সন্ধ্যায় এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, "বিজেপিতে যোগ দিলেই অপরাধের কি আছে!" দীনেশ বললেন, "কতদিন আর এই তৃণমূলের পাপের ভাগীদার থাকবো? জেপি নড্ডার গাড়িতে হামলার নিন্দা করার পর থেকেই আমার মন্তব্যের নিন্দা করা শুরু করে তৃণমূল। কিছু বিপন্ন নেতা আছেন যারা পৌরসভা এবং পঞ্চায়েতের ফারাক জানেন না। তারা মমতা ব্যানার্জি কি আমার নামে এসএমএস করেন। আমি ভাষণ দেওয়ার পরে দলের কিছু নেতা আমাকে বলেন মোদী অমিত শাহ কে গালাগালি দিলেন না কেন? গালাগালি আমাদের সংস্কৃতি নয়। হিংসার প্রতিবাদ করে গান্ধীজি চৌরিচৌরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন। আমরা কেন হিংসাকে সমর্থন করবো।"

আর এর পরেই বিজেপিতে যোগদান নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন দীনেশ ত্রিবেদী। দীনেশ বললেন, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত ভাই আমার বন্ধু। বিজেপিতে যোগদান করা কোনো অপরাধ নয়। তারা আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমি সেই আহ্বানে কৃতজ্ঞ। আপাতত আমি নিজের সঙ্গে থাকব। কাল কি হবে আগে থেকে কিছু বলা যায় না। উপরওয়ালা নির্দেশ মেনে চলব।"