শীতলকুচির ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, রাণাঘাটের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 12/04/2021   শেষ আপডেট: 12/04/2021 8:17 p.m.
twitter @BanglarGorboMB

"আমি এখনও বিশ্বাস করি, শীতলকুচির এই ঘটনা অমিত শাহের প্ল্যান। আর পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী জানতেন।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে শাসক ও বিরোধীদলের চাপানউতোর চলছে। তৃণমূল ও বিজেপি দুই যুযুধান প্রধান শক্তি পরবর্তী নির্বাচনী প্রচারে বারবার একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। সোমবার রাণাঘাটের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, "আমি এখনও বিশ্বাস করি, শীতলকুচির এই ঘটনা অমিত শাহের প্ল্যান। আর পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী জানতেন।" মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের পর বিজেপির তরফে পাল্টা অভিযোগ, "মুখ্যমন্ত্রীর উস্কানিমূলক কথাতেই এই ঘটনা ঘটেছে।" এমনকি বিজেপি সমর্থক ১৮ বছরের ছেলেটি আনন্দ বর্মণের মৃত্যুর দায়ও সরাসরি বিজেপির ঘাড়ে চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, "বিজেপি তুমি নিজের কর্মীকে নিজেই হত্যা করেছো, লজ্জা নেই? আমি তার মৃত্যুরও নিন্দা করছি। তার পরিবারকে সাহায্যও করব।’’ আজকের রাণাঘাটের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন শীতলকুচির ঘটনা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। পুরো পরিকল্পিত ঘটনা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজসে বিজেপি এই ঘটনা ঘটিয়েছে। মমতা বিজেপির উদ্দেশ্যে বলেন, "লজ্জা করে না কেন্দ্রীয় বাহিনীকে প্ররোচনা দিতে? গোটাটাই অমিত শাহের পরিকল্পনায় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও সব জানেন। গুলি করে খুন করার পর ক্লিনচিট দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ সব শোভা পায় না।’’ বিজেপির নেতা কর্মীদের প্রকাশ্য সভায় কথাবার্তার তীব্র নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিজেপির নেতারা উস্কানিমূলক কথা বলছেন, সেদিকে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, "এরা নাকি রাজনীতি করবে? রাজনীতি করতে গেলে কথাবর্তা শেখা দরকার। বুঝে কথা বলা দরকার। রাজনীতি মানে করে খাওয়া নয়। বিজেপি মনে করছে রাজনীতি মানে গুলি করার অধিকার দেওয়া, এটা রাজনীতি নয়। ৪ টি লোককে ভোটের লাইনে গুলি করে মেরে দিল। তার পরেও বলছে ৮ জনকে গুলি করা উচিত ছিল। সবাইকে বুকে গুলি করে দাও। এরা অদ্ভুত। একটা রাজনৈতিক দল বুক দেখে গুলি চালিয়ে দিতে বলছে। এদের নিষিদ্ধ করা উচিত। যারা গুলি চালানোর পক্ষে সওয়াল করে তাদের রাজনৈতিক ভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।"

রাণাঘাটের জনসভায় এনআরসি নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এনআরসির নাম করে আসামে কয়েক লক্ষ বাঙালিকে কিভাবে ভিটেমাটি ছাড়া করা হল, সে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, "আসামে এনআরসি নিয়ে কী করেছে মনে আছে তো? ১৪ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে। আসামে বাঙালিদের উপর অত্যাচার আর বাংলায় এসে ভোট চাই? লজ্জা করে না! বলবেন আগে এনআরসি, এনপিআর তুলে নাও। আমি করতে দিইনি। আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়াই করি। যতদিন বাঁচব বীরপুরুষের মতো বাঁচব। বুকের পাটা আছে আমার। বিজেপির ধমকানি - চমকানিতে ভয় পাই না।"

মুখ্যমন্ত্রীর আজকের সভায় দিনভর শীতলকুচির কথা এসেছে। আর মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। শীতলকুচির ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্রের কথা তুলেছেন। তিনি বলেছেন, " এর আগেএসপির সঙ্গে বসে বিজেপি পরিকল্পনা করেছিল গোটা বিষয়টি। এই বিষয়ের তদন্ত আমি করবই। আসল ঘটনা বার করবই। কারা মিটিং করেছিল, কারা কারা গুলি চালিয়েছে, কী কী পরিকল্পনা হয়েছিল, কী ভাবে একটা মেয়েকে আগে পাঠায় এবং তাকে বলতে বলে আমার বাচ্চাটা লুটে নিয়ে গিয়েছে। তারপরই পরিকল্পনা মতো গুলি চালায়। বুকগুলো ঝাঁঝরা করে দেয়। তারপর ক্লিনচিটও দিয়ে দেয়। সকালে যে রাজবংশী ভাইটি মারা গিয়েছে, বিজেপি তুমি নিজের কর্মীকে নিজের হত্যা করেছো, লজ্জা নেই? আমি নিন্দা করছি। আমি তাকেও সাহায্য করব। তার আগে গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ রাজবংশীর সবচেয়ে বড় নেতা, তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছো, তিনি রাজবংশী নন? ভোট পেতে হিন্দু মুসলমান করছে। এমন চললে সমাজ থাকবে না।"