বাঘ সংরক্ষণে অগ্রগণ্য ভূমিকায় তামিলনাড়ু, পুরস্কৃত হল বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার জন্য

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 29/07/2022   শেষ আপডেট: 29/07/2022 7:12 p.m.
সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার

দেশব্যাপী বাঘ সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল ১৯৭৩ সালে

আজ ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক ব্যঘ্র সংরক্ষণ দিবস (Tiger Conservation Day)। মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরে আজ বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের তরফে প্রবীন ফ্রন্টলাইনের কর্মীদের সম্মানিত করা হয়েছে। কিন্তু জানেন কি দেশব্যাপী বাঘ সংরক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল ১৯৭৩ সালে এবং প্রজেক্ট টাইগার (Project Tiger) এর সুবর্ণ জয়ন্তী (Golden Jubilee) হতে আর মাত্র এক বছর বাকি। আসুন আজকের এই প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবসে বিপন্ন প্রাণীটির অবস্থান খতিয়ে দেখে নি।

২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। উত্তরপ্রদেশের পিলভিট টাইগার রিজার্ভ ২০২১ সালে বাঘ সংরক্ষণের জন্য টিএক্স ২ পুরস্কার জিতেছিল এবং তামিলনাড়ুর সত্যমঙ্গলম টাইগার রিজার্ভকে ২০২২ সালে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার জন্য একই পুরস্কার দেওয়া হল আজ। ২০০৬ সালে দেশের বাঘের সংখ্যা ছিল ৫.৩ শতাংশ। ২০১৮ সালে দেশের বাঘের সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৯ শতাংশে। সাড়ে তিন গুন বৃদ্ধি পেয়ে বাঘের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছিল ২৯৬৭ তে। এর বেশীরভাগ কৃতিত্ব‌ই যায় তামিলনাড়ুর কাছে। ধীরে ধীরে তারা বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

দেশে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে তামিলনাড়ু নিজেরা সক্রিয়ভাবে বাঘ সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করতে শুরু করেছিল এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে বাঘ সুরক্ষার কৌশল প্রচার করেছিল। ১৯৯০ এর শেষের দিকে স্থানীয় উপজাতি যুবকদের নিয়ে বাঘের বাসস্থানে আশেপাশে চোরাশিকার বন্ধ করার জন্য তৎপর হয়েছিল তামিলনাড়ু।

তামিলনাড়ুতে চারটি টাইগার রিসার্ভ গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আনা মালাই, মধুমালাই, সত্য মঙ্গলম এবং শ্রীভিলিপুথুর। ২০১৮ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মধুমালাইতেই রয়েছে সর্বোচ্চ বাঘ। প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার ১৫ টি করে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে এখানে। উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র সংরক্ষিত বনগুলিকে টাইগার রিজার্ভের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এখনো পর্যন্ত দেশের ১৮ টি রাজ্যের ৫৩ টি ব্যাঘ্র সংরক্ষণাগার রয়েছে। প্রতিটি সংরক্ষণাগারে থাকে কোর এরিয়া এবং বাফার এরিয়া। কোর এরিয়ায় সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিষিদ্ধ। বাফার এরিয়াতে অনুমতিপত্র নিয়ে পর্যটকরা প্রবেশ করতে পারে। বাফার এরিয়াই মূলত ৪৫% বাঘ সংরক্ষণের জন্য দায়ী।

২০১৯ সালে অল ইন্ডিয়া টাইগার পপুলেশন অনুমান রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের ৩৫ শতাংশেরও বেশি বন্য বাঘ বনাঞ্চলে বাস করে যার মধ্যে রয়েছে বনবিভাগ এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অঞ্চল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সংরক্ষণ এজেন্ডাকে কিছু কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যেমন যেহেতু ল্যান্ডস্কেপ স্ট্রাটেজি নেওয়া হয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তাই অনেক সময় দেখা যায় বাফার এরিয়া এমন জায়গা ঢুকে পড়ছে যেখানে জঙ্গল নেই। ফলত মানুষের জীবন সংকটে পড়ছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত এক দশক ধরে ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো ব্যঘ্র প্রকল্পে অপরাধ শনাক্তকরণ, অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা এবং বাঘ হত্যার তদন্তের মতো যাবতীয় বিষয় নিয়ে সচেষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ব্যাঘ্র প্রকল্পের সঙ্গে নিযুক্ত ফ্রন্টলাইন কর্মীদের প্রচেষ্টাকে‌ও স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করেছে।