বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মোদীকে আমন্ত্রণ কি মমতার 'মাস্টারস্ট্রোক'? কী বলছেন ওয়াকিবহাল মহল

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 25/11/2021   শেষ আপডেট: 25/11/2021 8:55 a.m.
দিল্লিতে বৈঠকে মোদি ও মমতা https://twitter.com/PMOIndia

"রাজায় রাজায় সন্ধি হল, বেকুব বনল জনতা" অধীর চৌধুরী

গত কয়েক বছরে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) জমানায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনকে বারবার কটাক্ষ করেছে বিজেপি (BJP)। এমনকী মাস খানেক আগের রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের টুইট যুদ্ধ সম্পর্কে সকলেই অবহিত। এর মধ্যেই বুধবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী বছর এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাংশের অভিমত, এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে রাজ্য বিজেপির মুখ বন্ধ করলেন, অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সম্পর্কের অখণ্ডতা বুঝিয়ে দিলেন।

এই ঘটনার পর পর্যবেক্ষক একাংশের অভিমত, এদিনের বৈঠকে মোদী মমতার বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন কিসের বোঝাপড়া? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, রাজ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ক্রম উত্থান ঘিরে অনেকের ঘুম উড়েছিল, তাহলে এরপর কি শীতঘুমে যাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা? অন্যদিকে মোদী-মমতার সখ্য কি রাজ্য বিজেপির অন্দরে ক্ষোভের জন্ম দিল? ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, এরপর দিলীপ-শুভেন্দু কি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন? প্রধানমন্ত্রী এই আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন কী না, তা সময়েই বলবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কথানুযায়ী তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তাহলে এই নতুন সমীকরণে রাজ্য বিজেপির অবস্থান কোন দিকে যায়, সেদিকেই নজর থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের।

মোদী-মমতার সাক্ষাৎ কতটা সফল সে বিতর্কে না গিয়ে বর্তমানে রাজ্যে বিজেপির বেহাল দশার দিকে খেয়াল রেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এরপর রাজ্য বিজেপির ড্যামেজ কন্ট্রোলে ভূমিকাটি কী হবে! যদিও রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, "মুখ্যমন্ত্রী দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রী আসবেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে মুখে কি সেকথা বলেছেন? আমরা তো চাই প্রধানমন্ত্রী আসুন৷ কারণ তাঁর হাতেই পশ্চিমবঙ্গের মুক্তি সম্ভব৷ প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখেই যদি বিনিয়োগ আনা যায়, সেই চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷" দিলীপ ঘোষের এই কথা রাজনৈতিক ভাবে কতটা গ্রহণযোগ্য সে বিতর্কে না গিয়ে ওয়াকিবহাল মহল বলছেন, দিলীপ ঘোষের এ কথা ফাঁপা বুলির মতো শোনাল। অর্থাৎ মোদী-মমতার সৌজন্য সাক্ষাৎ আগামী দিনের রাজনৈতিক সমীকরণে যে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।

মোদী-মমতার সাক্ষাতে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস ও সিপিএম। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী কটাক্ষ করেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন শিল্প মন্ত্রী অমিত মিত্র কিছুদিন আগে দাবি করেছেন যে নরেন্দ্র মোদীর শিল্পনীতির ফলে শিল্প দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ আর সেই নরেন্দ্র মোদীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনে ডাকছেন৷ এর পরে হয়তো আমরা দেখব ভাইফোঁটা নিতেও নরেন্দ্র মোদী কালীঘাটে আসছেন৷" আর এরপরেই অধীর চৌধুরীর ব্যঙ্গ, "রাজায় রাজায় সন্ধি হল, বেকুব বনল জনতা।"