'স্বাস্থ্যই সম্পদ', ছোট থেকে পাখি পড়ার মত এই কথাটিকে গুলে গেলেও, বাস্তবে স্বাস্থ্যের সঙ্গেই পাতিয়েছি আমরা অসখ্যতা। আমরা যেন এই স্বাস্থ্য নামের সম্পদটির প্রতিই সবচেয়ে বেশি উদাসীন থাকি, এবং অবহেলিতের মতো আচরণ করি। তাইতো প্রকৃতিও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল! করোনা নামক মহামারীর কবলে পৃথিবীকে বন্দি করে, জব্দ করার ফন্দি এঁটেছিল। আর আমরা সেই জব্দে হয়েছিলাম নাস্তানাবুদ। টানা দু'বছর ধরে করোনার খপ্পরে আমরা আবদ্ধ আছি। সেই কথা মাথায় রেখেই, ২০২২ এর, ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের থিম হল 'আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য' (Our Planet, Our Health)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আদতে, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ও স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির অনুঘটক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 'হু' (WHO) একটি গবেষণার ফলাফল পেশ করেছে, যেখানে উল্লেখ আছে যে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে, জলবায়ু সম্পর্কিত কারণের জন্য প্রায় ১৩ মিলিয়ন প্রাণহানি ঘটে। 'হু' দাবি করেছে, 'পরিবেশ এবং মানুষের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য, জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, এবং এই বিষয়ে মানুষকে মনোনিবেশ করতে হবে। যাতে একটি সুস্থ পৃথিবী গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হই।'
স্বাস্থ্য, 'সম্পদ'টিকে ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করবার ভূমিকা পালন করে, আমাদের খাদ্যাভ্যাস। কিন্তু গলদ যদি এই খাদ্যাভ্যাসেই থাকে? হ্যাঁ, খাদ্যাভ্যাসেই আসল 'কালপ্রিট' লুকিয়ে আছে। এখনকার বেশিরভাগ খাদ্যই তৈরি করা হয় উচ্চ প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতিতে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরঞ্জিত হয়, সুস্বাদু হলেও যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।
ইনটেলিমেড হেলথকেয়ার সলিউশনের (IntelliMed Healthcare Solutions) নিউট্রাসিউটিক্যাল চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠাতা (nutraceutical physician and founder) ডক্টর অনিস দেশাই (Dr. Anish Desai) এর মতে 'প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে যেমন প্যাকেটজাত দ্রব্য, উচ্চ ফলনশীল শস্য, অত্যধিক চিনিযুক্ত মাছ বা স্টেরয়েড যুক্ত মাংস খেতে সুস্বাদু হলেও, পুষ্টির পরিমাণ থাকে না বললেই চলে। এছাড়াও খাবারগুলির মধ্যে ভিটামিন ফাইবার ইত্যাদির অভাব থাকে।' এছাড়াও তিনি যোগ করেন এই ধরনের খাবারগুলি স্থূলতা, মানসিক বিষন্নতা, এমনকি ক্যান্সারের কারণও হতে পারে।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্যটি, ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন তুলে ধরেছিল। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি এই উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার গুলি, শুধু প্রাণীদেহেই নয়, বরং পরিবেশেরও ক্ষতি করে। বিভিন্ন ফসলের কম সময়, বিপুল উৎপাদনের জন্য কৃত্রিম উপায়ে সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। যার ফলে সেই ফসল গুলির স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে। এর দরুন পরিবেশে একটি কৃত্রিমতা সৃষ্টি হয়, এবং এই কারণেই গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমানও বেড়ে যায়। খাদ্য সম্পর্কিত কারণে ইদানিংকালে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমান প্রায় একুশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উদ্বেগের কারণ এই যে, প্রাকৃতিক উৎস যেমন জল, মাটি ইত্যাদি, এই কৃত্রিম উপায়ে খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হলে, যেমন দুর্যোগ নেমে আসে আরকি! যার ফলে সমগ্র ভাবে পরিবেশে বাজে প্রভাব পড়ছে। আর পরিবেশ এবং প্রাণী তো একে অপরের পরিপূরক, তাই একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অপরটির হাল বেহাল হচ্ছে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরি, পশুদের শারীরিক নিপীড়নের কারণ হয়ে উঠছে। দেখা যাচ্ছে, প্রক্রিয়াজাত দুধ এবং মাংস, পশুদের ইস্ট্রোজেন ইনজেকশন এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে উৎপাদিত করা হচ্ছে।
এইসকল ক্ষতিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে গেলে, প্রাথমিকভাবে যে উপায়গুলি মেনে চলা যেতে পারে তা নিম্নরূপ-
● বীজ এবং উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার বন্ধ করুন। পরিবর্তে ঘি, মাখন বা নারকেল তেল ব্যবহার করুন।
● ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলুন,
● শাক সবজি, মাছ , মাংস গরম জলে ভালো করে ফুটিয়ে খান
● নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। এতে মন এবং স্বাস্থ্য দুইই বহাল থাকবে।