আজ 'ইস্টার সানডে' (Easter Sunday) খ্রিস্টানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই উৎসবকে ঘিরে খ্রিস্টানরা নিজেদের মধ্যে মেতে ওঠেন। এই উৎসব তাদের কাছে সম্প্রীতির। ইস্টারকে কেন্দ্র করে রয়েছে ক্রিস্টানদের ধর্মীয় বিশ্বাস। বাইবেলের (Bible) নিউ টেস্টামেন্ট (New Testament) ইস্টারের ইতিহাস বর্ণিত আছে। 'ঈশ্বরের পুত্র' (সন অফ গড) বলে নিজেকে চিহ্নিত করেন, পরম পিতা যীশু খ্রীষ্ট (Jesus Christ)। বাধ সাধে দুর্নীতিপরায়ন রোমান শাসন। যীশুকে ঈশ্বর হিসেবে গ্রহণ করতে তাঁরা নারাজ। আসলে যীশুর বক্তব্য ছিল, পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রাণই স্বয়ং ঈশ্বরের সন্তান। কিন্তু এই নিগুঢ় অর্থ বোঝার মত মনোভাব, সংকীর্ণ রোমান শাসক, পন্টিয়াস পিলেটের (Pontius Pilate) ছিলনা। তাই তাঁর নিষ্ঠুর নিদানে ক্রুশবিদ্ধ হতে হয় যীশু খ্রিস্টের মত মহমানবকে। যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যুর দিনটিকে 'গুড ফ্রাইডে' (Good Friday) নামে অভিহিত করা হয়। এর ঠিক তিনদিন পর মনে করা হয়, যীশু খ্রীষ্ট পুনরায় জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। নিউ টেস্টামেন্ট অনুসারে, ক্যানভারিতে (Canevari) রোমানদের দ্বারা ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তিন দিন পর পুনরায় প্রাণ ফিরে পান। মশীহ নামের এক গণকের বিধানে দৃষ্ট হয়েছিল, যীশুর পুনর্বার জীবিত হয়ে ওঠার ঘটনা। তিনি বলেন, 'যীশু দুঃখবোধ করিবেন এবং তৃতীয় দিনে মৃতগণের মধ্য হইতে জেগে উঠিবেন।'
'ঈশ্বরের পুত্র' বলায় ঈশ্বর নিন্দার অভিযোগে যীশুকে মৃত্যুর দণ্ড দেওয়া হয়। প্রভু যীশুর অন্যতম শিস্য জুদাস, রৌপ্য মুদ্রার বিনিময় যীশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। স্বভাবতই এই দিনটি খ্রীস্টানদের জন্য অভিশপ্ত দিন। কিন্তু মশীহের বিধান মত তাঁরাও যীশুর মৃত্যুর তৃতীয় দিনে যীশুর অস্তিত্বকে নাকি অনুভব করেন। তাই এই দিনটিকেই সম্মতি জানিয়ে খ্রিস্টানরা ইস্টার পালন করে থাকেন।
![healthy food diet](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2021/05/23/photo-uploads/brooke-lark-jUPOXXRNdcA-unsplash.jpg)
![Rains বৃষ্টি](https://pori-prod.cdn.19xu.nl/photo-thumbnails/2022/08/20/flood-965092_1280.jpg)
আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন, বড়দিন বা হ্যালোইনের মতো ইস্টার কোন নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত হয় না। এর পেছনের কারণটি হলো, চতুর্থ শতাব্দীর শাসনকালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, বসন্তের প্রথম পূর্ণিমার দিনের, পরের প্রথম রবিবার ইস্টার উদযাপিত হবে। তাই প্রতিবছর ২২ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে কোনোদিন পূর্ণিমা পড়লে, তার পরের রবিবারটি ইস্টার সানডে হিসেবে পালন করা হয়। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ইস্টার খুবই আনন্দদায়ক এবং মনোরম একটি উৎসব। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা মেতে ওঠেন সম্প্রীতির ছন্দে। ইস্টার সানডের আগের রবিবার ' পাম সানডে' (Pulm Sunday) হিসেবে পালন করা হয়, যা জেরুজালেমে যিশুখ্রিস্টের আগমনকে চিহ্নিত করে। ইস্টার সানডের আগের শনিবারের রাতে, 'ইস্টার ভিজিল' (Easter Vigil) উদযাপন শুরু হয়।
ইস্টারে 'ইস্টার এগ' (Easter Egg) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ ডিম হল সৃষ্টির প্রতীক। ডিমের আকারে চকলেট বা জেলি বিন অথবা কোন মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য প্রদান করা হয়। এই ডিম দেওয়ার প্রধান কারণ, এটি নবজীবনের ইঙ্গিতবাহী। যিশুখ্রিস্টের মৃত্যুর তিন দিন পর, তিনি যে নবজীবন লাভ করেছিলেন, তার দোসর হিসেবে ইস্টার এগের প্রচলন গুরুত্ব পেয়েছে।
বিভিন্ন ট্রাডিশনাল খেলাধুলার সঙ্গে একটি 'ইস্টার বানি' (Easter Bunny) কে প্রতিস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন মানুষেরা এই ইস্টার বানির বেশ ধরেন। শিশুদের চকলেট দেওয়া, উপহার দেওয়ায় হল এই ইস্টার বানির উদ্দেশ্য।
ইস্টার সানডের তাৎপর্য হিসেবে যিশু খ্রিস্টের প্রত্যাবর্তনকে চিহ্নিত করা হয়। যীশু খ্রীষ্ট মনুষ্যজাতির পাপমোচনের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন ঈশ্বরের দ্বারে। তাঁর এই পুনরুত্থান তাঁকে ঈশ্বরের প্রকৃত পুত্র হিসেবে প্রমাণ করে। প্রমাণ করে, স্বর্গে আহরণের পূর্বে তিনি সকল মন্দ জিনিস এবং মৃত্যুকে পর্যন্ত পরাজিত করেছিলেন।