রাজ্য জুড়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি কবেই অতিক্রম করে গেছে, সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে রাজ্যবাসীর হাঁসফাঁসানি! সূর্যদেবের প্রখর রোষের মুখে পড়ছেন না, এমন 'ভাগ্যবান' মানুষ পাওয়া স্বপ্নাতীত। রোদের কড়া দৃষ্টিতে পড়ে নাস্তানাবুদ রাজ্যবাসীর, দেহে ঘটছে জলশুন্যতা। এমতাবস্থায় ডাবের জল হতে পারে, আপনার গরম উপশমের সঙ্গী। ডাব, একটি অতি প্রাচীন ফল, যে একই সঙ্গে খাদ্য এবং জলের উৎস। তাই, প্রচন্ড গরমের চোখ রাঙানি থেকে, শরীরকে জলপূর্ন রাখতে, ডাব হতে পারে আপনার সফর-সঙ্গী!
ডাবের জলের স্বাদ নির্ভর করে, ডাব গাছের আবাদযোগ্য জমির উপর। যদি সেই জমি সমুদ্র উপকূলবর্তী হয়, তাহলে ডাবের গন্ধ হালকা নোনতা হতে পারে। ভারতবর্ষে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে, যেমন কেরালা (Kerala), কর্ণাটক (karnataka), তামিলনাড়ু (Tamil Nadu), আন্দামান (Andaman) প্রভৃতি জায়গায় পাওয়া যায়। ডাবে ৯৫ শতাংশ জল থাকে। শর্করা সেই অর্থে থাকে না বললেই চলে। এবং ডাবের জল পানে, দেহের চর্বি বৃদ্ধি হয় না। এ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং ইলেকট্রলাইট থাকে, যেগুলি শরীরের জলের ঘাটতি, দূরীকরণ করে।
এখন জেনে নেওয়া যাক শরীরের এবং ত্বকের জন্য ডাবের জল কতটা উপাদেয়-
১) শরীরকে জলপূর্ণ রাখা- প্রচন্ড গরমের দাবদাহে আপনার শরীরে জলের সংকট (Dehydration) দেখা দিলে, এক গ্লাস ডাবের জল পান, আপনাকে পুনরায় সতেজ করে তুলতে পারে। ডাবের জলে সোডিয়াম থাকে, যা আপনার ঘর্মাক্ত দেহের সোডিয়ামের (Sodium) ঘাটতিকে মোচন করে।
২) হজমে সহায়তা- এক গ্লাস ডাবের জল গ্রহন, আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সুসংগত করে তুলতে পারে। অ্যাসিডিটি (acidity), যকৃতের প্রদাহ, পেট জ্বালা প্রভৃতি দুর্ভোগের হাত থেকে মুক্তি দেয়। ডাবের জলে পটাসিয়াম (potassium), ম্যাগনেসিয়ামের (magnesium) মত উপকারী খনিজ থাকায়, কিডনির অসুখ থেকে রক্ষা করে।
৩) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে - ডাবের জলে উপস্থিত থাকা পটাশিয়াম, আপনার প্রস্রাবের মাধ্যমে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম অপসারণ করতে সাহায্য করে। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের জন্য ডাবের জল উপকারী। নিয়মিত ডাবের জল পান করলে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে যার ফলে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে। এর ফলে হার্টও ভালো থাকে। নিয়মিত ডাবের জল পান করলে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৪) পুষ্টিগুণ - ডাবের জল একটি ইলেক্ট্রোলাইট (electrolyte) হিসেবে কাজ করে, যাতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা আপনার শরীরকে খনিজ দিয়ে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করে। ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট, শর্করার মান ঠিকঠাক থাকায় যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি প্রদান করে ডাবের জল। ডাবের জলে অনেক প্রকারের ভিটামিন (vitamin) থাকে এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (antibacterial) উপাদান মজুত থাকে, যার ফলে আপনার শরীরে অনাক্রম্যতা সচল হয়। ডাবের জল ফ্লু (flu), ইনফেকশনের (infection) হাত থেকে শরীরকে বাঁচাতে সক্ষম হয়।
৫) চর্বি ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধিরোধক - ডাবের জল সম্পূর্ণ চর্বিমুক্ত। সকালে খালি পেটে এই স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করলে, আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই জল পান করলে অনেকক্ষণ ধরে পেট ভর্তি থাকে, যার ফলে খাওয়ার প্রবণতা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায় না। শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বজায় রাখতেও ডাবের জলের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৬) মেটাবলিজম বৃদ্ধি - মেটাবলিজম (metabolism) বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি গ্রহণ করার পর, খিদে নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ ভাবে সাধিত হয়। মেটাবলিজম বৃদ্ধির ফলে এই হজম প্রক্রিয়া আরো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।
৭) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ - রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়লে, মানুষ ডায়াবেটিক (diabetic) হয়ে পড়েন। ডাবের জলে যেহেতু শর্করার পরিমাণ খুব কম, তাই এই জল পান করলে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক থেকে দুই কাপ স্বল্প মিষ্টি এই জল গ্রহণ করলে, ডায়াবেটিস (diabetes) নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে।
৮) মসৃণ ত্বক প্রদান - ডাবের জলে ভিটামিন-সি থাকায়, এই জল পান করলে তা ত্বকের উজ্জলতা প্রদান করে। এছাড়াও ব্রণর বিরুদ্ধে লড়াই করতেও ডাবের জলের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া হাত বা নখের ক্ষয় মেরামতের জন্য ডাবের জল বিশেষ উপকারী।