২১ নভেম্বর, ২০২৪
সম্পাদকীয়

স্মরণে ক্ষুদিরাম : ১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিনের এক বিরামহীন বিপ্লব

গলায় ফাঁস পরেও জল্লাদকে জিজ্ঞেস করেন, "আচ্ছা, ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?"
Khudiram bose Bengali News
ক্ষুদিরাম বসু ~Unknown authorUnknown author, Public domain, via Wikimedia Commons
koustav-chatterjee
কৌস্তভ চ্যাটার্জী
প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২১
শেষ আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২১ ১৪:৪০

আজো এক বাঙালী পরিবারে কোনো শিশু যদি বাঁধনহীন কৌতূহলভরে তার মা-কে জিগিয়ে ওঠে, "মা? বিপ্লব মানে কি? বিপ্লবী কারা মা?" মা তার উত্তরে অভিধানসম্মত উপায়ে কোনো এক প্রতিশব্দ বাতলে দিলেও বিপ্লবকে আত্মস্থ করতে ১৮ বছর ৮ মাস ৮দিনও যে একেবারেই যথেষ্ট সময় নয় তা আর খোলসা করে বলেন না। শুধু বিপ্লবীর উদাহরণস্বরূপ উত্তরে আরও এক বসুকে মনে করিয়ে দেন।

এ বসু বিপ্লব শব্দের অর্থ জানার জন্য তার মা'কে প্রশ্ন করার সুযোগই পায়নি। স্বল্পায়ু হওয়ার আশঙ্কায় জন্মের পরই তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি হয়ে গেছেন নিজের বড় দিদির কাছে। তাই এ বসুর নাম হয়েছে ক্ষুদিরাম। ১৮৮৯-এর ৩রা ডিসেম্বর মেদিনীপুরের হাবিবপুর গ্রামে পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু আর মা লক্ষীপ্রিয়া দেবীর কোল আলো করে যে তারুণ্যে ভরা বিপ্লব এসেছিল সে আলো ১৩২ বছর পরেও ১৩০কোটি দেশবাসীর তরুণ হৃদয়ে দেদীপ্যমান হতে পারে, এ বোধহয় ইশ্বরের কাছেও অকল্পনীয়।

চঞ্চলতার সাথে সম্বন্ধীয় যেকোনো বিশেষণ, যেমন ডানপিটে, বাউন্ডুলে, দুরন্ত - ছোটো থেকে এগুলোই তাঁর পরিচয়। হ্যামিল্টন স্কুলের লেখাপড়া চুকিয়ে বারো বছর বয়সে বড় দিদি অপরূপা দেবী আর জামাইবাবু অমৃতর সাথে চলে আসেন মেদিনীপুর শহরে। ভর্তি হন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে। এখানে থাকতেই বিপ্লবের মশালকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেন যখন তিনি শ্রী অরবিন্দ আর সিস্টার নিবেদিতার সংস্পর্শে আসেন এবং সেই মশালকেই হাতে তুলে নেন যখন মেদিনীপুরের মাটিতে জনসমক্ষে জাগরণের জয়ধ্বনি দেন। বিপ্লবী জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু - রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে এবং হেমচন্দ্র দাস কানুনগোর নেতৃত্বে মেদিনীপুরের গোপন আখড়া থেকে পরিচালিত হত ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ। এই গলিতেও কিশোর ক্ষুদিরামের অবাধ বিচরণ, এবং স্বভাবসিদ্ধভাবেই নিজ গুণে জনপ্রিয়তা অর্জন। আর এখানেই হেমচন্দ্রের সহযোগী তথা ঋষি রাজনারায়ণ বসুর ভাইপো সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সান্নিধ্যে এসে গুরুপ্রাপ্তি হয় ক্ষুদিরামের।

১৯০৫ সাল । বাংলা মায়ের বুক চিরে দেশ ভাগের উৎসবে সামিল হয়েছেন সাহেবরা। অতএব? নিজকে নিংড়ে দিয়ে স্বদেশী আন্দোলনে সামিল হওয়া থেকে এই পনের বছরের দস্যি ছেলেকে আটকায় কে? ঠিক তাই! ওখানেই পড়াশোনা ফেলে রেখে ছুটে গেলেন সত্যেন বসুর গুপ্ত সমিতিতে। প্রচলিত গণিত কিম্বা ভাষাশিক্ষার পাঠ ছেড়ে শুরু হল শরীরচর্চা, রাজনীতি আর পিস্তল চালানোর পাঠ। সাহেবদের দেশে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো থেকে শুরু করে আমদানিকৃত লবন বোঝাই নৌকা ডোবানো, এসবতো হাসতে হাসতেই হয়ে গেছে। এমনকি গোপন সংস্থায় অর্থ জোগাতে হাটগাছায় ডাকের থালি লুট করাও দুঃসাধ্য ছিলনা।

সাল ১৯০৬। মেদিনীপুরের মাঠে বসছে কৃষি ও শিল্পমেলা। এখানেই বিক্রি করতে লেগেছিলেন সোনার বাংলা নামে এক বিপ্লবী পত্রিকা। অবিলম্বে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আদালতে বিচারের মুখোমুখি বালক ক্ষুদিরাম। অল্প বয়সের জন্য মুক্তি পেলেন তরুণ সংগ্রামী। মুক্ত তাকে হতেই হত, তা না হলে কাঁসাইয়ের বন্যায় ত্রাণকার্য চালাবে কে? এখানেই শেষ নয়। নারায়ণগড়ে ছোটলাটের স্পেশাল ট্রেনে বোমা আক্রমণের ঘটনাতেও সেই ক্ষুদিরামকেই শনাক্ত করা হলে জামাইবাবুর আশ্রয় থেকেও বিতাড়িত হন কিশোর সংগ্রামী।

সাল ১৯০৭। স্বদেশী আন্দোলনকারীদের বন্দি ও কঠোর শাস্তি দেওয়া নিয়ে একেই ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডের ওপর ঘৃণার পাহাড় জমেছে। এরই মাঝে স্বদেশীআনায় বুঁদ হওয়া ষোল বছরের আরেক তরুণ বিপ্লবী সুশীল সেনের বন্দেমাতরম ধ্বনি যখন আলিপুর আদালতকে মুখরিত করে ঠিক তখনই ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে সুশীলকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হয়। ফলত, প্রতিশোধের আগুন তীব্র হতে থাকে বারীন ঘোষের মুরারিপুকুর বাগানবাড়ি থেকেই। বিপদ বুঝে নিরাপত্তার তাগিদে মুজফফরপুরে বদলি হয়ে যান ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড।

৩০ শে এপ্রিল ১৯০৮, রাতের অন্ধকারে গাছের আড়াল থেকে কিংসফোর্ডের গাড়ি মনে করে একটি ঘোড়ার গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করেন ক্ষুদিরাম বোস ও প্রফুল্ল চাকী। গাড়িতে থাকা মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা প্রাণ হারান। সাহেবস্পর্শ এড়িয়ে নিজের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে আত্মঘাতী হন প্রফুল্ল চাকী। আর ফাঁসির মঞ্চে হাসিটুকু তোলা থাকে ক্ষুদিরামের জন্য।

কথায় বলে বিপ্লবের প্রাথমিক শর্ত শিক্ষালাভ করা। শেষলগ্নের কারাজীবনেও সঙ্গী করতে চেয়েছিলেন মাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি আর রবিঠাকুরের লেখা। ১০ই আগস্ট আইনজীবী সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তীকে বলেন, "রাজপুত নারীরা যেমন নির্ভয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জওহরব্রত পালন করিত, আমিও তেমন দেশের জন্য প্রাণ দিব। আগামীকাল আমি ফাঁসির পূর্বে চতুর্ভুজার প্রসাদ খাইয়া বধ্যভূমিতে যাইতে চাই।" আর শেষ ইচ্ছা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তিনি বোমা বানানোর কৌশল জানেন, অনুমতি পেলে দেশের তরুণদের শিখিয়ে যাবেন সেই উপায়। অনুমতি না পেয়ে দ্বিতীয় ইচ্ছাপ্রকাশ করে দিদি অপরূপা দেবীর সাথে একটিবার দেখা করতে চান। জামাইবাবুর বাধাদানে সে ইচ্ছাও অপূর্ণ থাকে। উত্তর পাননি জীবনের শেষ প্রশ্নেরও যখন বধ্যভূমিতে এসে গলায় ফাঁস পরেও জল্লাদকে জিজ্ঞেস করেন "আচ্ছা, ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন? "

আত্মত্যাগের পাঠ নিক তরুণ সমাজ। দেশপ্রেমের শিক্ষা নিক সকল দেশবাসী। অমর অক্ষয় বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে শহীদ দিবসে 'পরিদর্শক'-এর শ্রদ্ধাঞ্জলী।

আরও খবর

বিজ্ঞাপন দিন

[email protected]

৩১ আগস্ট

অভিযুক্ত সুশান্তকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষনা করলেন বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক

Susanta Sutapa berhampore
১৫ আগস্ট

হাওড়ার লিলুয়ার একটি জনপ্রিয় স্কুল এমসিকেভি। সেই স্কুলেই সাড়ম্বরে পালিত হল দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস।

MCKV School Howrah Liluah
১৫ আগস্ট

মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকে সল্টলেকের ‘আইডিয়াল স্কুল ফর দ্য ডেফ’ এই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত ঋতাভরী

Ritabhari Independence
৩০ মে

তাঁর সৃষ্টিতে নারীই হয়ে ওঠেন মূল 'প্রটাগোনিস্ট', চরিত্র নির্মাণে ছক ভেঙেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষ

Rituparno Ghosh
৯ মে

আজ বাঙালির 'রবি-পুজো', জেনে নিন কবির জীবনের নানা অজানা কাহিনী

Rabindranath Thakur 2
১৪ এপ্রিল

সম্রাট আকবরের হাত ধরেই বাংলায় এসেছে নববর্ষ, জানুন বিশদে

Bengali Puja
২৬ জানুয়ারি

ভারতের ৭৪ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে , বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হবেন মিশরের রাষ্ট্রপতি

Indian national flag
১৩ অক্টোবর

আগামী ২১ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর, আলোতে এবং ভালোতে ভরে উঠবে পরিবেশ

Diya
৫ সেপ্টেম্বর

২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবসই হোক জাতীয় শিক্ষক দিবস, দাবি বাংলাপক্ষের

Teachers' Day Sarvepalli Radhakrishnan
৩ সেপ্টেম্বর

তিনিই মহানায়ক, নারী মনোহরণের ব্রান্ড অ্যাম্বাস্যাডার উত্তমকুমার

Uttam kumar 3
১৬ আগস্ট

পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলের অনুষ্ঠানে অংশ নেননি, তবে দুপুরে খেয়েছেন জমিয়ে

Partha Arpita new
১৫ আগস্ট

হার্দিক পান্ডিয়া, বিরাট কোহলি এবং অন্যান্য ক্রিকেটাররা স্বাধীনতা দিবসে তাঁদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন

Virat Kohli Hardik Pandya on Independence Day 2022
১৫ আগস্ট

হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টি, মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রোত্রপাঠ

Mamata Banerjee red road on independence day
১৫ আগস্ট

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর তোপ দেগেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

Abhishek Banerjee independence day fb live