হুগলি জেলার ইমামবাড়া—কত শত ইতিহাসের সাক্ষী। শুধু তার স্থাপত্য বা ভাস্কর্যই নয়। এর অন্যতম আকর্ষণ হল পৃথিবী বিখ্যাত ঘড়ি। ইমামবাড়ার প্রবেশদ্বারের উপর রয়েছে একটি বড় চূড়া, যার উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট,সেই চূড়ায় ওঠার জন্য দুইদিকে রয়েছে দুটি সিঁড়ি,সেই চূড়ার মাঝ বরাবর অবস্থিত একটি বিস্ময়কর ঘড়ি। ইতিহাস বলছে, মীর কেরামত আলি ১১,৭২১ টাকার বিনিময়ে এই ঘড়ি কিনেছিলেন বিলেত থেকে। ঘড়িটিতে সপ্তাহে একদিন করে দম দিতে হয়, দম দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় কমপক্ষে দুজন ব্যক্তির। দম দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত চাবির ওজন ২০কিলোগ্রাম। ঘড়িটি সময় জানানোর পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর আওয়াজও শোনায় ঘণ্টার মাধ্যমে। মেশিন ঘরের ওপরে তিনটি কয়েক কুইন্টাল ওজনের পৃথক আকারের ঘণ্টা আছে। যেগুলির ওজন ৮০মন, ৪০মন ও ৩০মন। তিনটি ঘণ্টার মধ্যে মাঝারি ও ছোট ঘণ্টা দুটি প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর সময় জানান দেয় ও বড় ঘণ্টাটি প্রতি এক ঘন্টা অন্তর বাজে। সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষনের কারণে ১৮৪১ সাল থেকে একইভাবে বেজে চলেছে এই ঘড়ি।
অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়েস্ট বেঙ্গল গেজেটারস, হুগলি অনুযায়ী হুগলি ইমাবাড়া তৈরি হয়েছিল ১৬৯৪, মতান্তরে ১৭১৭ সালে (Imambarah repacing and old building eracted about 1694 or according to another account 1717)। নতুন এই স্থাপত্যটির প্রধান স্থপতি ছিলেন সৈয়দ কেরামত আলি। তিনি ছিলেন গণিতজ্ঞ। এই ইমামবাড়ার নকশা তিনিই করেছিলেন।
হাজি মহম্মদ মহসিন, যাঁকে হুগলি কেন, অনেক দূর-দূরান্তের মানুষও দানবীর বলে জানেন, উপাসনার জন্য তাঁর প্রিয় জায়গা ছিল তাজিয়াখানা। সেই সময়ের নজরগাহ হুসেন ও তাজিয়াখানা একত্রে ইমামবাড়া নামেই পরিচিত ছিল। মহসিনের মৃত্যুর সময়েই জীর্ণ হয়ে পড়েছিল এই ইমামবাড়া। মহসিন এস্টেটের দায়িত্ব সৈয়দ কেরামত আলি পাওয়ার পরে তিনি নতুন করে ওই ভগ্নপ্রায় ইমামবাড়া তৈরির পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নজরগাহ হুসেন ও তাজিয়াঘর মিলিয়ে এই বিশাল সৌধ তৈরি করেন। তাতেই রয়েছে লন্ডনের বিগ বেনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘড়িটি। ঘড়িটির নির্মাতা মেসার্স ব্ল্যাক অ্যান্ড হারি কোম্পানি, বিগ বেন, লন্ডন।
আরও একটি ঘড়ি রয়েছে ইমামবাড়ার খিড়কির অংশে, গঙ্গার তীরে। এটি সূর্যঘড়ি। সূর্যের ছায়া দেখেই সময় হিসাব করা যায়। ফুট তিনেক উঁচু এই ঘড়িটি। ভারতে প্রাচীন কাল থেকেই সূর্যঘড়ির চল রয়েছে। বিভিন্ন মানমন্দিরে তো বটেই, মন্দিরেও সূর্যঘড়ি থাকত। ইমামবাড়ায় বড় একটা এই ঘরনের ঘড়ি দেখা যায় না। মূল ঘড়িতে পিতলের ফলক ছিল, তবে সেটি চুরি গিয়েছে। পরে পাথরের ফলক লাগান হলেও তাতে মিনিট পনেরো সময়ের পার্থক্য হয়।