Independence Day 2022 : স্বাধীনতা দিবসে দেখার মত কিছু সিনেমার তালিকা রইল

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 15/08/2022   শেষ আপডেট: 15/08/2022 9:39 a.m.
instagram.com/sidmalhotra

ইতিহাস বইয়ের পাতায় না থেকেও, যেই সকল 'হিরো' থেকে যাবেন মানুষের হৃদয়ে

আজ, ভারতের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস (Indian Independence Day)। স্বাধীনতার রক্তাক্ত ইতিহাসের শিহরণ, ছড়িয়ে আছে দেশ জুড়ে। তৈরি হয়েছে নানান রকম সিনেমা। আজ আমরা খোঁজ করব এমন কিছু চরিত্রের, যাঁরা হয়তো স্থান পাননি বা পাবেন না ইতিহাসের বইয়ে, কিন্তু থেকে যাবেন মানুষের হৃদয়ে চিরকাল।

● সর্দার উধাম (Sardar Udham) : উধাম সিং (Udham Singh), নামটির সঙ্গে পরিচয় ঘটে ঠিক একটা বছর আগে! অথচ এই নামটির মাহাত্ম্য ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে কম তো নয়ই, বরং ইতিহাস বইয়ের পাতায় চিরটাকাল থেকে যাওয়ার মত। তথাকথিত পুঁথিগত শিক্ষা নামটির সঙ্গে পরিচয় না ঘটালেও, বলিউড (Bollywood) ঘটিয়েছে। গত বছর মুক্তি পাওয়া, ভিকি কৌশল (Vicky Kaushal) অভিনীত 'সর্দার উধাম' (Sardar Udham) ছবিতে জানা গেছে উধাম সিংয়ের পরিচয়। আরও একবার ভারতবাসীর বুক গর্বে ফুলে উঠেছে। ব্রিটিশ অধীনস্থ ভারতকে মুক্তি দেওয়ার জন্য, বন্ধু ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে পরিকল্পনার ছক কষছিলেন বছর কুড়ি একুশের উধাম! কিন্তু ১৯১৯ সাল তাঁকে মত পরিবর্তন করতে বাধ্য করে! তাঁর লক্ষ্য হয়ে ওঠে অন্য কিছু! ১৯১৯ সালেই ঘটে, দেশ তথা বিশ্বকে শিউরে দেওয়ার মত ঘটনা! কোনওরকম সতর্কতা ছাড়াই জেনারেল ও'ডায়ারের নির্দেশে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালা বাগে নেমে আসে গুলির বর্ষণ। প্রাণ হারান হাজার হাজার নিরীহ ভারতবাসী। উধাম সোচ্চার হয়ে ওঠেন ও'ডায়ারকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য। লন্ডনে গিয়ে এক জনসমাবেশে, বক্তৃতা দেওয়াকালীন বীরদর্পে ও'ডায়ারের সামনে দাঁড়িয়ে, একের পর এক গুলিতে বিদ্ধ করতে থাকেন তাঁকে। সিংহের মত রাজকীয় মেজাজ নিয়ে বরণ করেছেন ফাঁসিকে। কিন্তু দুঃখের কথা, ইতিহাস না জানালেও, বলিউড চিনিয়েছে ভারতের এই বীর সিংহকে।

● শেরশাহ (Shershaah) : খুব পুরনো ঘটনা নয়, মাত্র বছর তেইশ আগের ভারতের এক অভিশপ্ত অধ্যায়ের প্রেক্ষাপট! কাশ্মীরের অধিকার নিয়ে মাস কয়েক ধরে চলল ভারত পাকিস্তানের কার্গিল যুদ্ধ (Kargil War)। প্রাণ হারালেন অগণিত বীর জওয়ান। নিজের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে প্রতিপক্ষকে ধুলিস্যাৎ করেন 'শেরশাহ' বিক্রম বত্রা (Vikram Batra)। ভারতকে বিপদমুক্ত করলেও, ভারতমাতার কোলে ঢলে পড়ে তাঁর গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া শরীর। গতবছর তাঁর এই দুঃসাহসিক অবদান নিয়েই বলিউডে তৈরি হয় সিদ্ধার্থ মালহোত্রা (Sidharth Malhotra) অভিনীত 'শেরশাহ' (Shershaah) ছবিটি।

● গুঞ্জন সাকসেনা : দ্য কার্গিল গার্ল (Gunjan Saxena: The Kargil Girl) : ছোটবেলায় দাদার সঙ্গে লখনৌ ভ্রমণকালে, বিমানের ককপিট দেখার শখ হয় ছোট্ট গুঞ্জনের। বলা যায়, তাঁর জীবনের গন্তব্যের হাতে খড়ি হয় ঠিক এই দিনেই। ককপিটের পেছনে নয়, বরং ককপিট অধিকারের জেদ জন্মায় তাঁর। পারিপার্শিক সংস্কারের গণ্ডিকে মাটিতে ফেলে রেখে, আকাশে উড়ান দিতে সক্ষম হন 'কার্গিল গার্ল' গুঞ্জন সাকসেনা (Gunjan Saxena)। সাধারণ কোনও বিমান নয়, আর্মি বিমানের পাইলট হন তিনি। যদিও তাঁর এগোনো মোটেই সহজ ছিল না। সেই সময় মহিলাদের সৈনিক হওয়া তো দুর, পাইলটের আসনে বসার স্বপ্ন দেখাও ছিল অলীক! গুঞ্জন পেরেছিলেন। আক্ষরিক অর্থেই তাঁর ইচ্ছে আকাশ ছুঁয়েছিল। কার্গিল যুদ্ধে তাঁর অবদান মনে রাখার মত। বরাত জোরে বেঁচেছিলেন মিসাইল আক্রমণ থেকে। তাঁর জীবনী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলিউডে, 'গুঞ্জন সাকসেনা: দ্য কার্গিল গার্ল (Gunjan Saxena: The Kargil Girl) নামে। অভিনয় করেছিলেন জাহ্নবী কাপুর (Janvi Kapoor)।

● নীরজা (Neerja) : তথাকথিত ভাবে কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়ত নন নীরজা ভানোত (Neerja Bhanot) , আবার কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামীর অবদানের চেয়েও তাঁর অবদান কম নয়। তিনি হতে চেয়েছিলেন বিমান সেবিকা হওয়ার। রপ্ত করেছিলেন 'আনন্দ' ছবির সেই বিখ্যাত কালজয়ী সংলাপ, জীবন লম্বা নয়, বরং বড় হইয়া উচিত। নীরজা জীবনে 'বড়' হয়েছিলেন! যে আকাশে ইচ্ছের ডানা মেলতে চেয়েছিলেন, সেই বিশালতায়েই চিরকালের জন্য হারিয়ে গেলেন। তাঁর বিমান প্যান এম ফ্লাইট ৭৩, হাইজ্যাক করেছিলেন সন্ত্রাসবাদীরা। ভারতে বন্দী পাকিস্তানি উগ্রপন্থীদের মুক্তির দাবিতে এই নাশকতার ছক কষেছিলেন তাঁরা। পুলিশের তৎপরতায় যাত্রীরা রেহাই পেলেও, প্রাণে বাঁচলেন না নীরজা। সংকটে পড়া কিছু যাত্রীর জীবন বাঁচাতে, গুলিবিদ্ধ হন বছর তেইশের এই 'বীরঙ্গনা'। তাঁর জীবনী নিয়ে তৈরি হয়েছিল 'নীরজা' (Neerja), নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন সোনম কাপুর (Sonam Kapoor)।

বাংলাতেও স্বাধীনতার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মত ছবি কম নেই। সৃজিত মুখার্জীর (Srijit Mukherji) 'রাজকাহিনী' (Rajkahini) দেখার পরেও, বিষাদের রেশ থেকে যায়। সীমান্তে অবস্থিত এক পতিতালয়কে অবিভক্ত, অক্ষত রাখতে কোনও পুরুষ সেনানায়ক নন, ঝাঁপিয়ে পড়েন 'বেগমজান' এর সঙ্গে তাঁর স্বশস্ত্র নারীবাহিনী। এঁরা সকলেই পতিতা ছিলেন, তাইতো স্বাধীনতার জন্য লড়তে তাঁরা পিছুপা হননি।

এছাড়াও স্বাধীনতা দিবসে দেখা যেতে পারে, ধ্রুব ব্যানার্জী (Dhrubo Banerjee) পরিচালিত 'গোলন্দাজ' (Golondaaj) ছবিটি। এটি বাঙালি তথা ভারতবাসীকে গর্ববোধ করাতে বাধ্য। ব্রিটিশ ঔদ্ধত্যকে একেবারে মাটিতে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ফুটবলের জনক শ্রী নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী। খালি পায়ে, ব্রিটিশ বুটের প্রতিপক্ষ হয়েছিল তাঁর দল। খেলায় তো জয়ী হয়েছিলেনই, সঙ্গে স্বাধীনতার ইতিহাসে ভারতকে এই জয় এনে দেওয়ার জন্য তাঁর অবদান চির অমলিন থাকবে।