"বিজেপিকে ভারতছাড়া করতে দেশজুড়ে খেলা হবে", 'ইউনাইটেড ইন্ডিয়া' তৈরীর ডাক মমতার

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 21/07/2021   শেষ আপডেট: 21/07/2021 5:31 p.m.
একুশে মঞ্চে মমতা ব্যানার্জি facebook.com/AITCofficial/

পেগাসাস নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করার আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

একুশে বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Election) বিজেপিকে (BJP) বিরাট মার্জিনে পরাস্ত করার পর বাংলার মসনদে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিরাট জয়ের পর আজ অর্থাৎ বুধবার ২১ জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা দেন। সেই একুশের মঞ্চ থেকে তিনি মোদি শাহ জুটির বিরুদ্ধে একের পর এক ইস্যুতে তোপ দেগেছেন। তিনি "খেলা হবে" স্লোগান দিয়ে বলেছেন, "বিজেপিকে ভারত ছাড়া না করা পর্যন্ত এবার রাজ্যে রাজ্যে খেলা হবে। বিজেপি হল হাই লোডেড ভাইরাস পার্টি। শুধুমাত্র বাংলায় খেলা হয়েছে। এরাজ্যের নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করা গিয়েছে। তবে আবার খেলা হবে। আজ আমাদের সকলের স্বাধীনতা বিপদে রয়েছে। বিজেপি শুধু জানে গুলি আর গালি। ওরা এজেন্সিকে কাজে লাগানো ছাড়া রাজনীতি কিছুই বোঝেনা। নিজের দলের লোকদের বিরুদ্ধেও এজেন্সিকে কাজে লাগায়। স্পাইগিরি করছে ওরা গোটা দেশজুড়ে। এরকমভাবে কোনদিন জয় পাওয়া যায় না।"

এছাড়াও আজ একুশের মঞ্চের হাত ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশের পথ সুগঠিত করেছেন। আসলে আজ এই শহীদ দিবস শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে পালিত হয়নি। দিল্লির তৃণমূল ভবনে গোটা দেশের মোদি বিরোধী দলনেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে জায়েন্ট স্ক্রিন লাগিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তৃতা শোনেন সকলেই। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের বর্ষিয়ান নেতা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, দ্বিগবিজয় সিং, এনএসপি প্রধান শরদ পাওয়ার, সমাজবাদী পার্টির নেত্রী জয়া বচ্চন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, অকালি দলের গোবিন্দ সিং ভান্ডারী, টিআরএসের কেশব রায়, রামগোপাল যাদব, মনোজ ঝাঁ প্রমুখরা। আসলে একুশে বিধানসভা নির্বাচন জয়ের পর জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মোদি বিরোধী নেতাদের নিয়ে আজ শহীদ দিবসের মঞ্চ থেকে "ইউনাইটেড ইন্ডিয়া" তৈরির ডাক দিয়েছেন।

তিনি মোদি বিরোধী নেতাদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেছেন, "বাংলা করে দেখিয়েছে। এবার সব রাজ্যকে বলছি যে নিজেদের নেতাদের বোঝান। সবাই মিলে ফ্রন্ট গঠন করুন। আর একদম হাতে সময় নেই। আমি খুব শীঘ্রই দিল্লী যাচ্ছি। সবাইকে মিলিয়ে আমরা ইউনাইটেড ইন্ডিয়া তৈরি করতে চাই।"এছাড়াও আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, "নির্বাচনের আগে এখনো হাতে আড়াই বছর সময় বাকি রয়েছে। ভোটের ঠিক আগের মুহূর্তে জোট তৈরি করে কোন লাভ হবে না। এখন থেকে সকলকে জোট বাঁধতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ভারতবাসীর উন্নতির জন্য দেশ থেকে বিজেপিকে নিপাত করতে হবে।"

এছাড়াও একুশের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তুলোধোনা করে বলেছেন, "দয়া করে দেশকে বাঁচান। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ জানাচ্ছি। পিকে, অভিষেকের ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে।" সেইসঙ্গে পেগাসাসের উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, "পেগাসাসের নামে আমার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে। কারোর সাথে কথা বলতে পারছি না। মোদীজি আপনাকে কোন ব্যক্তিগত আক্রমণ করছি না। কিন্তু রাজনীতিতে থাকতে গেলে একটা নীতির পথে চলতে হয়। আপনারা সবকিছু অতিক্রম করে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করছেন আপনি এবং অমিত শাহজি। রাজনীতির ময়দানে যতটা নিচে নামা যায় আপনারা তা অতিক্রান্ত করে গিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বিজেপি। গণতন্ত্রের নামে গোয়েন্দাগিরি চলছে গোটা দেশজুড়ে।"

মুখ্যমন্ত্রী নজরদারি হওয়ার উল্লেখ করে নিজের ফোন দেখিয়ে জানিয়েছেন যে তাঁর ফোনও ট্যাপ করা হয়। তাই তিনি বাধ্য হয়ে মোবাইল ক্যামেরাতে সেলোটেপ জড়িয়ে রেখেছেন। তিনি সকলকে তার প্লাস্টার করা মোবাইল দেখান। সেইসাথে বিজেপিকে তুলোধোনা করে তিনি বলেছেন, "ওনাদের জন্য আমরা কি কেউ কারুর সাথে কথা বলবো না? অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ফোন করবো না? আমার ইচ্ছে শরদ পাওয়ার বা চিদাম্বরমের সাথে কথা বলার। কিন্তু আমি পারছি না। গরীবের টাকা নিয়ে বিজেপি অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করছে।"

গণতন্ত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "সুপ্রিমকোর্টে পেগাসাস নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার আবেদন জানাচ্ছি। গণতন্ত্রকে যদি কেউ রক্ষা করতে পারে তাহলে তা হল বিচার ব্যবস্থা। পেগাসাস ভয়ঙ্কর। ২০২৪ সালে কি হবে কে জানে। এছাড়া ওরা কয়েকজন বিজেপি নেতাকে মানবাধিকার কমিশনের লোক বানিয়ে পাঠিয়েছে। সবকিছু বোঝা যায়। বিজেপি শুধু হিংসা ও বিভাজনের রাজনীতির চায়। কিন্তু আমরা সকলে বাংলার মানুষ। বাংলার মানুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাটি থেকে এসেছে। স্বামী বিবেকানন্দের বাণীতে তারা উদ্বুদ্ধ হয়। তাদের মাঝে বিভাজনের বীজ পুঁততে পারবেন না।"