তাহলে কি এবার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের মধ্যে কমবে ব্যবধান? কি বলছে কেন্দ্র?

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 13/10/2021   শেষ আপডেট: 13/10/2021 2:35 p.m.

অন্যদিকে আবার উৎসবের মরশুম সামনে থাকার কারণে চলতি মাসে দেড় কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন রাজ্যে আসছে

করোনাভাইরাস এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছিল। সেই সময় কোভিশিল্ড এত বেশি সাধারণ মানুষ গ্রহণ করছিলেন যে এই ভ্যাকসিনের চাহিদা অনুযায়ী প্রোডাকশন হচ্ছিল না। সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই ভ্যাকসিন এর দুটি টিকার মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৩ মে থেকে এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন এর দুটি টিকার ব্যবধান ৪-৮ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ১২-১৬ সপ্তাহ করে দেওয়া হয়েছিল। বেশি সংখ্যক মানুষকে এই টিকা দেওয়ার জন্য এই কাজটি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

১২ অক্টোবর সন্ধ্যা বেলা পর্যন্ত দেশের মোট টিকাকরনের ৮৮ শতাংশ ব্যবহার করা হয়েছে কোভিশিল্ড। কিন্তু, কো উইন থেকে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, দেশের সম্পূর্ণ টিকাকরণ এর মধ্যে বর্তমানে প্রথম টিকা নেওয়া অনেকটা কমে গেছে। তুলনায়, সবথেকে বেশি মানুষ দ্বিতীয় টিকার ডোজ গ্রহণ করতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে কি তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই দুটি টিকার ব্যবধানে আবারও কমানো হবে? দেখে নেওয়া যাক কি ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার।

কেন্দ্রের তথ্য বলছে, প্রতিদিন দেশে কত সংখ্যা মানুষকে প্রথম এবং দ্বিতীয় টিকা দেওয়া হল সেই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে কো উইন অ্যাপ্লিকেশন থেকে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে প্রথম টিকার সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছিল। সেই তুলনায়, সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষ দ্বিতীয় টিকা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এখনো পর্যন্ত ৬৮ কোটির বেশি মানুষ করোনাভাইরাস এর প্রথম টিকা পেয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী দেখতে গেলে, ভারতের মোট প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ মানুষ প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করে ফেলেছেন। এই টিকা প্রাপকের সংখ্যা কয় ভাবে ভেঙ্গে দিলে দেখা যায় আগস্ট মাসের ১৮ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত টিকাকরনের হার ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে গিয়ে হয়ে গিয়েছিল ৬০ শতাংশ। কিন্তু তারপরেই টিকাকরণের গতি কিছুটা কমতে শুরু করেছিল। গত সপ্তাহে যে সংখ্যক প্রথম টিকা দেওয়া হয়েছে তা জুলাই এর পর থেকে সব থেকে কম। তাহলে টিকাকরণ এর পরিস্থিতি কি চূড়ান্ত পর্যায়ে?

তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, বর্তমানে প্রথম টিকার চাহিদা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সবাই কিন্তু দ্বিতীয় টিকা গ্রহণ করতে চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে যদি দুটি টিকার ব্যবধান কমিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আরও দ্রুত বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকাকরনের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের লাগাতার চাপে কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে অনেকটা নমনীয় অবস্থায় রয়েছেন। অক্টোবর মাসে দেড় কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন রাজ্যে পাঠানো হবে।

স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে, এই সংখ্যাটা আরো কিছুটা বাড়তে পারে। তবে শুধুমাত্র করোনা ভ্যাকসিন নয়, হাম, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে শুরু করে হেপাটাইটিস এবং পাঁচটি রোগ প্রতিরোধ করতে শিশুদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। সপ্তমী সকালে ইতিমধ্যেই এই বুস্টার ডোজ অর্থাৎ পেন্টাভ্যালেন্ট এর ৬ লক্ষ ডোজ কলকাতায় এসেছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ২০১৫ সালের পর থেকে এই প্রথম শিশুদের এতগুলি ভ্যাকসিন একসাথে রাজ্যে এল।

ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যেবেলায় ৮ লক্ষ ডোজ কোভিশিল্ড বাগবাজারের সেন্ট্রাল স্টোরে চলে এসেছে। কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু জেলায় পাঠানো হবে এই ভ্যাকসিন। সাথে সাথেই আরো ২০ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের করোনাভাইরাস এর দুটি ডোজ দিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্র সরকার। বিশেষ করে পুজো থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের উৎসব এবং পার্বণ রয়েছে। শীতকালে আবার করোনা ভাইরাসের প্রভাব একটু বাড়ে। এই কারণেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্ত মানুষের ভ্যাকসিনেশন করানোর টার্গেট নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।