গণহত্যার আঁতুড়ঘর কি এবার ভারত? রুয়ান্ডার গণহত্যার প্রেক্ষিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 20/01/2022   শেষ আপডেট: 20/01/2022 9:26 a.m.

ভারতে ক্রমশ বাড়ছে ইসলাম বিরোধী মনোভাব, মন্তব্য গণহত্যা প্রতিরোধী বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি স্ট্যান্টনের

'ভারতে মুসলিম-বিরোধী মনোভাব ক্রমশ বাড়ছে', এমনই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করলেন আমেরিকার গণহত্যা প্রতিরোধী বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি স্ট্যান্টন। গত মাসে ভারতের হরিদ্বারে এক হিন্দু সাধুর মন্তব্যের পর গোটা দেশে তোলপাড় পড়ে যায়। কেন্দ্রের শাসকদল ঘনিষ্ঠ এই হিন্দু নেতা বলেছিলেন মুসলিমদের হত্যা করে খাঁটি হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গণহত্যা প্রতিরোধী বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি স্ট্যান্টন এক কনফারেন্সে বলেছেন, এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। ভারতে ক্রমশ বাড়ছে ইসলাম-বিরোধী মনোভাব। যা ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখার পক্ষে অত্যন্ত চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, গণহত্যা প্রতিরোধী বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি স্ট্যান্টন রুয়ান্ডা গণহত্যার ঠিক পাঁচ বছর আগে এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্টকে বলেছিলেন এমনই চাঞ্চল্যকর কথা। ঠিক পাঁচ বছর পর ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় ঘটেছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যার ঘটনা। রুয়ান্ডার হুতু গোষ্ঠীর হাতে অন্তত আট লক্ষ তুতসি প্রজাতির মানুষের গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এই বর্বর ঘটনার পর গোটা বিশ্বে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। তিনি উল্লেখ করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় জম্মু-কাশ্মীর এবং আসাম ক্রমশ গণহত্যার আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৪৯ সাল থেকেই জম্মু-কাশ্মীর ভারতের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা পেয়ে আসছিল। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালে এই মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়। এমনকী এখানে বর্তমানে ভারত সরকারের প্রবর্তিত নতুন আইন ব্যবস্থা চলছে। ভারতের অন্যান্য প্রদেশের লোকজন চাইলেই জম্মু-কাশ্মীরে জমি কিনতে পারেন, যা আগে বলবদ ছিল না। গণহত্যা প্রতিরোধী বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি স্ট্যান্টন বলেছেন, আমরা স্পষ্ট ভাবেই বলছি যে গণহত্যা কোন তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়। এটি একটি বিশেষ প্রক্রিয়া, যা বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই তৈরি হয়। এই প্রসঙ্গে তিনি ২০০২ সালে গুজরাত গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলেছেন।

মোদী সরকার হিন্দুত্বকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই তিনি এই বিশেষ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। ১৪০ কোটির দেশে প্রায় ৮০ শতাংশই হিন্দু। আর প্রায় ১৫ শতাংশ ইসলাম ধর্মের মানুষ। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশে ক্রমশ বেড়েছে 'হিন্দুত্ব', এমনই মন্তব্য করেছেন গ্রেগরি স্ট্যান্টন। এমন অবস্থায় যেকোন সময় ঘটতে পারে এমনই ভয়ঙ্কর গণহত্যার ঘটনা।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি রোহিনটন ফলি নরিম্যান হরিদ্বারের ঘৃণাভাষণ নিয়ে মোদী সরকারকে কড়াবার্তা দিয়েছেন। নাম না করেই তিনি উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্র সরকার পরোক্ষে এই ঘৃণাভাষণ সমর্থন করছে। যা অতি উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক কালে কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করার জন্য বহু মানুষকে কেন্দ্রের শাসকদলের বিষনজরে পড়তে হয়েছে। এমনকী বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এদিকে দেশে ক্রমাগত বাড়ছে ইসলাম-বিরোধী মনোভাব। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর হরিদ্বারের ঘৃণাভাষণের ঘটনায় দশনা মন্দিরের পুরোহিত যতি নরসিংহানন্দ-সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও থামছে না এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত মনোভাব। এমন অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি।