২ এর বদলে কেন ৪ জন মন্ত্রী হলেন বাংলা থেকে? জেনে নিন অন্তর্নিহিত আসল কারণ

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 07/07/2021   শেষ আপডেট: 07/07/2021 10:34 p.m.
জন বার্লা, শান্তনু ঠাকুর, নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকার twitter.com/bjp4india

মোদির মন্ত্রিসভায় এবারে বাংলা থেকে ৪ জন মন্ত্রী হচ্ছেন

আগে কথা ছিল এবারে মোদির মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে দুইজন কিন্তু যখন মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করা হল তখন দেখা গেল এবারে মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সর্ব মোট ৪জন মন্ত্রী। এই চারজনের মধ্যে রয়েছেন শান্তনু ঠাকুর, নিশীথ প্রামানিক, ডাক্তার সুভাষ সরকার এবং জণ বারলা। কিন্তু এই চারজনকে কেন মোদির মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হলো অন্য কাউকে নয়? আসুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত ভাবে।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে খারাপ ফল করার পরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পরবর্তী লক্ষ্য ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে যেন ভালো ফলাফল করতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি। এই কারণেই সুপরিকল্পিতভাবে লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই চারজনকে মন্ত্রী করার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। শুধুমাত্র এই চারজনকে কেন মন্ত্রী করা হলো সেই নিয়ে কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির অন্দরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে কিন্তু গভীরে দেখতে গেলে এই চারজনকে মন্ত্রী করার পিছনে রয়েছে একটি বড় কারণ। চলুন বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক কি সেই কারণ।

নিশীথ প্রামানিক - গতবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে ভালো ফলাফল করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও নিশীথ প্রামাণিকের জেলা কোচবিহার এবং গোটা উত্তরবঙ্গে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় গেরুয়া শিবির ভাল ফলাফল করেছে। উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় নিশীথ প্রামানিক অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। তার প্রভাবে কার্যত কোচবিহার জেলায় বহুদিন পরে দুর্দান্ত ফলাফল করতে পেরেছে বিজেপি। কার্যত নিশীথ প্রামাণিককে এর পুরস্কার দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

জণ বারলা - উত্তরবঙ্গের অত্যন্ত বিতর্কিত একজন নেতা হলেও লোকসভা নির্বাচনে এবং বিধানসভা নির্বাচনে তার কেন্দ্র আলিপুরদুয়ারে ভারতীয় জনতা পার্টি দারুন ফলাফল করেছে। বিশেষ করে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ারে পাঁচটির মধ্যে পাঁচটি বিধানসভা আসন জয়লাভ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় এবং বিশেষ করে তরাই এবং ডুয়ার্সে চরম জনপ্রিয় জন বারলা। বঙ্গভঙ্গের দাবি জানালেও তার জনপ্রিয়তার কারণেই মূলত আলিপুরদুয়ারের এই সাংসদ কে এবারে মোদি মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়েছে। তার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে আগের ফলাফল ধরে রাখতে চাইছে বিজেপি। এই কারণে  জনের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি হাইকমান্ড। পাশাপাশি, গেরুয়া শিবিরের ধারণা তিনি যে বঙ্গভঙ্গের কথা বলছেন সেটা খুব একটা প্রভাব ফেলবে না ভোট বাক্সে। দক্ষিণবঙ্গের থেকে উত্তরবঙ্গে বিজেপির ফলাফল অনেক ভালো। আর এই ফলাফল আরো ভালোভাবে টিকিয়ে রাখার জন্যই মূলত উত্তরবঙ্গ থেকে জোড়া মন্ত্রী করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

শান্তনু ঠাকুর - গতবারের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গের কিছুটা আসন জয়লাভ করলেও এবার এর বিধানসভা নির্বাচনে একেবারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। দক্ষিণবঙ্গে তাদের সিট সংখ্যা অত্যন্ত কম, সর্বোপরি নদীয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনা এলাকায় মমতা ঝরে কার্যত টিকতে পারেনি ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু তা সত্ত্বেও মতুয়া অধ্যুষিত বেশ কিছু এলাকায় এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফলাফল করেছে বিজেপি।  আর এই ফলাফলের মূল কান্ডারী হলেন বনগাঁর  বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তাই এবারে শান্তনু ঠাকুর কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা দেওয়া হল মতুয়াদের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি কে আরো বেশি ভালো ভাবে ছড়িয়ে দেবার জন্য।

ডাক্তার সুভাষ সরকার - গতবারের লোকসভানির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে অর্থাৎ জঙ্গলমহলে ভারতীয় জনতা পার্টি বেশ ভাল ফলাফল করেছিল। কিন্তু এবারে বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত এলোমেলো হয়ে গিয়েছে বিজেপি। তাই জঙ্গলমহলে আবারো বিজেপি কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য নতুন ফন্দি আঁটলেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে সুভাষ সরকারকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিল বিজেপি। জঙ্গল মহলে জনসভার জন্য বেশ নামডাক আছে সুভাষ সরকারের। জঙ্গলমহলে আগের বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল বিজেপির কাছে। তাই সেই ফলাফল কে ধরে রাখার জন্য কার্যত একটি মাস্টার স্ট্রোক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।