এতদিন সাধারণভাবে মনে করা হত, সন্তানের জন্মগত ত্রুটির যাবতীয় দায় শুধু মায়েরই। 'অ্যানালস অফ ইন্টার্নাল মেডিসিন'-এ সদ্যপ্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করেছে। এতে দেখানো হয়েছে, ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের ৫.২ শতাংশের ক্ষেত্রেই দায় তাদের বাবার।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যেসব পুরুষ ওষুধ হিসেবে মেটফরমিন ব্যবহার করেন, তাঁদের সন্তানদের জন্মগত ত্রুটি থাকার আশঙ্কা অনেক বেশি।
প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে ডেনমার্কের ১১ লক্ষেরও বেশি সদ্যোজাত শিশুর পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণাটি করা হয়েছে ১৯৯৭ থেকে ২০১৬-- এই ১৯ বছর ধরে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বাবা-মায়েরা যাঁরা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ নেন, গর্ভে বেড়ে ওঠা ভ্রূণের ওপর সেই ওষুধের কী প্রভাব পড়ে এবং সেক্ষেত্রে মা, নাকি বাবা--- কার প্রভাব বেশি, এটা দেখাই ছিল গবেষকদের উদ্দেশ্য। ১১ লক্ষ শিশুর ওপর গবেষণায় দেখা যায়, এদের মধ্যে ৩.৩ শতাংশ জন্মগত ত্রুটি নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। আরও দেখা যায়, যেসব শিশুর বাবা মেটফরমিন ওষুধ ব্যবহার করেছেন, সেই শিশুদের ত্রুটি নিয়ে জন্মানোর হার অনেক বেশি। এক গবেষক জি বি লুইস দেখিয়েছেন, মেটফরমিন ওষুধটি রক্তে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন করে শুক্রাণুর মান খারাপ করে দেয়। ফলে ত্রুটিযুক্ত সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যদিও যেসব শিশুর বাবা ও মা দুজনেই ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, সেসব শিশুর ত্রুটি নিয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা কতখানি, সে বিষয়ে এই গবেষণায় কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি।
পরে এই গবেষণার ক্ষেত্রটিকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, যে হবু-বাবারা গাঁজা ব্যবহার করেন, তাঁদের শুক্রাণু কোষের কিছু পরিবর্তন ঘটায় ত্রুটিযুক্ত শিশু জন্মের সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়। তাই মা সন্তানসম্ভবা হওয়ার অন্তত ১১ সপ্তাহ আগে থেকে হবু-বাবাদের গাঁজা বা এই জাতীয় মাদক থেকে দূরে থাকার সুপারিশ করেছেন গবেষকরা। গবেষণাপত্রটির অন্যতম লেখক বিজ্ঞানী মার্টিন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে জানিয়েছেন, ডায়াবেটিসের রোগীরা যাঁরা সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা ভাবছেন, ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁদের অবশ্যই কথা বলা দরকার। তিনি আরও জানিয়েছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবু-বাবাদের সঠিক ডায়েট মেনে চলা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার ওপর জোর দেওয়া দরকার, যাতে মেটফরমিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন না হয়। এই গবেষণায় তিনি বারবার বলেছেন, সন্তানের জন্ম দেওয়ার আগে শুধু মায়েরই নয়, বাবার শারীরিক অবস্থা, তিনি কী কী ওষুধ ব্যবহার করেন, এ সবকিছু নিয়েই চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা দরকার।
লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের অ্যান্ড্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক চান্না জয়াসেনা আবার ডায়াবেটিস রোগী হবু-বাবাদের মেটফরমিন নেওয়া বন্ধ করার সঙ্গে একমত নন। তাঁর মতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
অবশ্য গবেষণাপত্রটি তৈরি করেছেন যে বিজ্ঞানীরা, তাঁরা নিজেরাই তাঁদের গবেষণার কয়েকটি ত্রুটির উল্লেখ করেছেন। সেগুলো দূর করে ভবিষ্যতে আরও বিশদ গবেষণার পর এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।