একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে একটা ঘটনা ধরলে তাকে কেন্দ্র করে ঘনঘটার একশেষ। নির্বাচনের প্রাক্কালে যারা দলে থেকে কাজ করতে পারছিলেন না কিম্বা ব্যক্তিগত মতামতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হচ্ছিলেন তারা সংগঠন ও শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর দায় চাপিয়ে সহজেই দলবদলের পথে হাঁটলেন। সম্মুখে একাধিক দল থাকলেও উন্নততর অবস্থানের আশায় একটি বিশেষ বিকল্প দলের ছত্রছায়ায় এলেন। সাড়ম্বরে স্বাগত হলেন নতুন রঙে। জোরকদমে চলল পুরোনো দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেওয়ার হিড়িক। জনসভা তথা গণমাধ্যম সূত্রে ব্যক্তিগত ক্ষোভ, দলীয় ও প্রশাসনিক স্তরে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, দেখানো হল খতিয়ান। আরও শক্তিশালী সংগঠনের আশায়, এবং খুব স্পষ্টভাবে বলতে গেলে বঙ্গ শাসনের এই 'সোনার' সুযোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দূরত্ব কমল রাজধানী ও তিলোত্তমার।
এখন ভোটপুজো মিটেছে। পুজোয় কে কতটা সিদ্ধিলাভ করেছে তা কিছুটা 'সুর' থেকেই আন্দাজ করা যায়। কাজের জন্য যারা হাপিত্যেশ করেছেন, তারা কি নতুন অবস্থানে গিয়ে কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন? বা মনোনীত হয়েও কি মনের কথা শোনার পদে আসীন হতে পেরেছেন? প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই আপাদমস্তক বিফলতা পরিলক্ষিত। এখন বলা যেতেই পারে, জয়লাভই সিদ্ধিলাভ - এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। অবস্থান ও লড়াইয়ের প্রাসঙ্গিকতা প্রতিষ্ঠা করার জন্যেও সময় চাই যা সুরবদল বা বেসুরো তান ধরার মত আকষ্মিকভাবে সম্ভবপর হতে পারেনা। কিন্তু সময় কই? ইতিমধ্যেই ফের সুর বদলে আগের অবস্থানে ভিড়তে চেয়ে অনেকেই ক্ষমাপ্রার্থী হয়েছেন আবার অনেকে ইঙ্গিতবহ বার্তায় আত্মপক্ষ সমালোচনা করে সুরবদলের আভাসকে স্পষ্ট করছেন। এই নবগঠিত ভিড়ে কখনো সশব্দে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসছে, কেউ মৌনতার মারফৎ মতপার্থক্যকে প্রকট করছেন।
এখন কথা হল, সুর যদি মুহুর্মুহু বদলাতে থাকে, শ্রোতার বোধগম্যতায় বিড়ম্বনা অভিপ্রেত। অনুগামীদের কথা বাদ রেখে, আমজনতায় নজর দিলে দেখা যায়, এ সুরবদল এক হাস্যকর বিষয় রূপে পরিগণিত হয়েছে। আদর্শকে গুলি মারা যথাযথ, কারণ 'সময়োপযোগী স্ট্র্যাটেজি' প্রয়োজনীয়, এমন যুক্তি প্রদর্শনকারী বোদ্ধারাও বাক হারিয়েছেন সুবিধাবাদিতার বহর দেখে। কিন্তু মন্ত্রী-আমলা-অনুগত-বোদ্ধা-বিশ্লেষকদের সরিয়ে রেখে পড়ে থাকে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ - জনার্দন জনতা। তাদের অবস্থান কোথায় হবে একটু ভেবে দেখলে ভালো হয়।