আজ কর্মজগতের সমস্ত ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে মেয়েরাও যখন তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তখন পৌরুষ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা অনেক সময়েই ধাক্কা খাচ্ছে। কলে-কারখানায়, অফিসে অনেক সময়েই পুরুষ সহকর্মীর প্রভুত্বব্যঞ্জক নানা আচরণে অসন্তুষ্ট হচ্ছেন মহিলা কর্মীরা। প্রশ্ন তুলছেন, প্রতিবাদ করছেন। এই অবস্থায় গবেষকদের তৈরি একটি সমীক্ষা-রিপোর্ট জানাচ্ছে, পৌরুষ প্রশ্নের মুখে পড়লে অধিকাংশ পুরুষ কর্মীরই নানা ধরনের অনভিপ্রেত আচরণ করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তাঁরা সহকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব হারিয়ে ফেলেন। অথচ নারীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে মহিলারা অনেক সহজে সেই পরিস্থিতি সামলে নেন। তাঁদের আচরণে বিশেষ পরিবর্তন ঘটে না।
আমেরিকার অরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার অ্যান্ড হিউম্যান ডিসিশন প্রসেসেস' পত্রিকায় এই বিষয়টি নিয়ে অতি সম্প্রতি একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিন প্রফেসর লেভিট ও তাঁর তিন সহযোগী গবেষক। সিদ্ধান্তে পৌঁছতে গবেষকরা বেশ কয়েকটি সমীক্ষা করেছেন। পুরুষ ও নারী কর্মীদের কাছ থেকে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছেন। সেগুলি বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখিয়েছেন, পৌরুষ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পুরুষ কর্মীদের মিথ্যা বলা, ঠকানো এমনকি চুরি করার মতো কাজেও জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। নিজেদের অবস্থান উঁচু করতেই এইসব অপকর্ম করে ফেলেন তাঁরা। এমনকি সহকর্মীদের প্রতি সহযোগিতার মনোভাবও সেই সময় হারিয়ে যায়। অথচ নারীত্ব নিয়ে যদি কখনও প্রশ্ন ওঠে তাহলে এ ধরনের আচরণ মহিলারা সাধারণত করেন না।
কারণ হিসাবে গবেষকরা দেখিয়েছেন, নানা দেশে, যুগে যুগে সমাজ পৌরুষকে একটি গৌরবের বিষয় হিসাবে গড়ে তুলেছে। সমাজ মননে পৌরুষ সম্পর্কে ধারণা হল, এটি পুরুষকে অর্জন করতে হয়, ধরে রাখতে হয়। পৌরুষ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে একজন পুরুষ লজ্জায় পড়েন। তাঁর আত্মসম্মানে ঘা লাগে। সেই কারণেই নিজের আহত গর্ব পুনরুদ্ধার করতে যে কোনও উপায় অবলম্বনে মরিয়া হয়ে ওঠেন তাঁরা। অন্যদিকে নারীত্ব বিষয়টিকে নিয়ে সমাজে গর্বের অনুভূতি বিশেষ নেই। নারীত্ব বলতে সংবেদনশীলতা ও অন্যকে সেবার মনোভাব ইত্যাদি বিষয়গুলিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ সব বিষয় যদি বা কখনও প্রশ্নের মুখে পড়ে, তাতে মহিলাদের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে না। তাই পুরুষ ও মহিলাদের আচরণে এমন তফাত।
এ হেন পুরুষতান্ত্রিক আচরণ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কী করা দরকার, সে পথও দেখিয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা বলেছেন, যে পুরুষরা এই ধরনের আচরণের শিকার, তাঁরা যদি খেলাধূলা বা নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন, সেগুলি থেকে আনন্দ খুঁজে নিতে পারেন, তাহলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
প্রফেসর লেভিট ও তাঁর সহযোগীদের এই গবেষণা কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে উপযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে।