একুশ শতকেও মধ্যযুগীয় বর্বরতা! পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একই পরিবারে বিয়ে হওয়া ৩ বোন ২ শিশু সন্তান-সহ কুঁয়োতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন। অনবরত শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের পণের দাবি অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। তা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুকেই বেছে নেয় তিনবোন। এমন আধুনিক পৃথিবীতে এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা দুনিয়া। প্রশ্ন উঠেছে, এত প্রচার, এত আলোচনার পরেও পণপ্রথা সমাজ থেকে দূরীভূত হয়নি। পাল্টা এই প্রথার পরিণামে প্রাণ যায় কত তার কোন ইয়ত্তা নেই।
ঘটনাটি রাজস্থানের জয়পুর জেলার দুদু শহরের। এখানেই একই পরিবারে তিনবোন কালু দেবী, মমতা এবং কমলেশের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে চলত অকথ্য অত্যাচার। এর মধ্যেই কালু দেবীর দুই সন্তান হয়েছে। বাকি দুই বোন গর্ভবতী। সূত্রের খবর, বিয়ের পর থেকেই নানা অছিলায় পণের দাবি ছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের। বহুবার টাকা, সোনার গহনা দিয়েও শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের খিদে মেটানো যায়নি। তারপরও চলত অত্যাচার। সেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজেদের শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তিনবোন। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় রাজস্থানে আজও পণপ্রথা কীভাবে বদ্ধমূল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন একাংশ।
তিনবোনের বিয়ে হয় কিশোরী বেলায়। নির্ধারিত বয়সের আগেই তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরও নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তারা পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল। বড় বোন কালু বি.এ ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করত। মমতা পুলিশ কনস্টেবলের পরীক্ষা দিচ্ছিল। আর ছোট বোন কমলেশ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরতা ছিল। এমন প্রতিকূল পরিবেশে পড়াশোনা করে নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিল। কিন্তু সংসারের বাধা, অত্যাচার ক্রমশ বাড়ায় আর তারা নিতে পারেনি। বাধ্য হয়ে এই পথ বেছে নেয়। হোয়াটসঅ্যাপে তাদের শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করে গিয়েছে তিনবোন।
ইতিমধ্যেই তিনজনের স্বামী নরসী, গোর্য এবং মুকেশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বেশ কয়েকদিন ধরেই তিনবোন এবং তাদের শিশু সন্তানদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত কুঁয়ো থেকে তাদের দেহ উদ্ধার হয়েছে।