২১ নভেম্বর, ২০২৪
বাণিজ্য

মাত্র ১১ বছর বয়সে পরিবারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া শ্রদ্ধা, এখন বহু মেয়ের অনুপ্রেরণা

মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের শ্রদ্ধার বর্তমানে পারিবারিক আয় মাসে ৬ লক্ষ টাকা
shraddha dhawan Bengali News
thebetterindia.com
news-desk
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২১
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৪১

আপনারা এতদিন প্রায় সকলেই শুনে এসেছেন পরিবারের হাল ধরার জন্য ছেলেকেই কিছু করতে হয়। কিন্তু এই চিরাচরিত ধ্যানধারণাকে একেবারে পাল্টে দিয়েছেন আহমেদনগরের নিঘোজ গ্রামের শ্রদ্ধা ধাওয়ান। মাত্র ১১ বছর বয়সে পরিবারের ডেয়ারী ব্যবসা নিজের কাধে তুলে নিয়ে শুধুমাত্র যে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে তা না, নিজেদের ব্যবসাকে গ্রামের সব থেকে বড় ব্যবসার মধ্যে একটা করে তুলেছে। একটা সময় ছিল, যখন তার পরিবারের কাছে ৬টির বেশি মোষ ছিলনা। বলতে গেলে, ১৯৯৮ সালে তার পিতা সত্যবানের কাছে ছিল মাত্র ১টি মোষ। আর প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তিনি বাইক চালাতেও ছিলেন অক্ষম। সেখান থেকেই ২০১১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে পরিবারের সম্বল হয়ে দাঁড়ায় শ্রদ্ধা। TheBertterIndia কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন," ২০১১ সালে আমার বাবা আমার হাতে দুধের ব্যবসার দায়িত্ব সঁপে দেন। যদিও আমার পক্ষে ব্যাপারটি অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ছিল কারণ সেই গ্রামের কোন মেয়ে সেই বয়সে এরকম দায়িত্ব পালন করেনি।"

shraddha dhawan van Bengali News
-

প্রত্যেক সকালে যখন শ্রদ্ধার সহপাঠীরা স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হতো, তখন শ্রদ্ধা তার বাইক চালিয়ে গ্রামের বিভিন্ন ডেয়ারি ফার্মে দুধ পৌঁছে দেবার জন্য যেত। পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজ সে তার নিজের যোগ্যতা দিয়ে বহু বছর ধরে করে এসেছে। সেই ব্যবসা এখন তাদের জেলার অন্যতম বড় ব্যবসা। আগে একটি ছোট্ট কুটির থেকে চললেও, এখন একটি দোতলা বাড়ি থেকে এই ব্যবসা চালানো হয়। এখন শ্রদ্ধা এবং তার বাবার কাছে রয়েছে সর্বমোট ৮০টি মোষ। বর্তমানে এই ব্যবসা ওই গ্রামের সবথেকে বড় ব্যবসার মধ্যে একটা হয়ে গিয়েছে। শ্রদ্ধার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য এখন তার পরিবারের মাসিক আয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লক্ষ টাকা।

শ্রদ্ধা আরও জানিয়েছে," যখন আমার বাবা আমার হাতে তার এই ডেয়ারি ফার্ম এর ব্যবসা তুলে দিয়েছিলেন, তারপর থেকে ওই ব্যবসা ধীরে ধীরে লাভের মুখ দেখা শুরু করেছিল। আমি ব্যবসা ধরার পরে আমাদের ডেয়ারি ফার্ম এর মোষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ২০১৩ সালে এতটা দুধ শুধুমাত্র নিজে সাইকেল চালিয়ে গিয়ে ডেলিভারি করা সম্ভব হতো না। এজন্য তখন আমাদের একটি বাইক এর প্রয়োজন হয়। সেই সময় আমাদের কাছে ছিল প্রায় এক ডজন মোষ।" শ্রদ্ধা আরো জানালো," যখন আমি আমার দশম শ্রেণীর পরীক্ষা দিচ্ছিলাম তখন আমি প্রত্যেকদিন ১৫০ লিটার করে দুধ বিক্রি করতাম। ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ আমাদের কাছে ছিল ৪৫টি মোষ। এবং তখন আমাদের প্রতি মাসে আয় ছিল ৩ লক্ষ টাকা।"

তবে, এই ব্যবসা শুরু করার সময় অনেক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল শ্রদ্ধাকে। আমি কখনো দেখিনি এমন একটি মেয়ে, যে বাইক চালিয়ে আমার এলাকাতে দুধ বিক্রি করছে। যদিও আমার গ্রামের বাসিন্দারা আমাকে সবসময় সাপোর্ট করেছেন এবং আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। তাদের কথা আমার মনে বল জুগিয়েছে এবং আমার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেছে", শ্রদ্ধার বক্তব্য। তবে, মোষের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো আনুষাঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি হওয়া শুরু হয়েছিল। প্রথমে আমাদের খুব কম সংখ্যক মোষ ছিল, তাই তাদের জন্য খাবার তাদের ফার্ম থেকেই তৈরি করা যেত। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন মোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, তখন খাবার বাইরে থেকে কেনার প্রয়োজন পরতে শুরু করে। আর, তখন থেকেই তাদের ব্যবসার লাভের অঙ্ক বেশ কিছুটা কমতে আরম্ভ করে। গ্রীষ্মকালে গরুর খাবারের পরিমাণ কমতে শুরু করে এবং তার দাম অনেকটা বেড়ে যায়। তার ফলে গ্রীষ্মকাল নাগাদ লাভের পরিমাণ অত্যন্ত কমে যেত।

শ্রদ্ধার পরিবার তাদের মোষকে শুধুমাত্র ভেষজ পদ্ধতিতে তৈরি খাবার খাওয়াত। মোষেদের ঘর প্রতিদিন দুইবার করে পরিষ্কার করা হতো এবং প্রত্যেকটি মোষের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো। এছাড়াও শ্রদ্ধা আরো বলেছে, তারা ওই মোষের খাবারের মধ্যে ক্যালসিয়াম এর অভাব পূরণের জন্য তাদের খাবারে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যকর জিনিস যোগ করত। তবে, মোষের দুধ দোয়ানোর জন্য শ্রদ্ধাকে বেশ খানিকটা কসরত করতে হয়েছিল। আগে শুধুমাত্র তার পিতা মোষের দুধ দোয়াতেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পাশাপাশি তার সহায়তা করার জন্য ছিলেন বেশ কয়েকজন কর্মী। কিন্তু কর্মীরা যখন ছুটিতে যেত তখন সমস্ত চাপ এসে পড়তো শ্রদ্ধার ওপরে। শ্রদ্ধা জানিয়েছে," আমার ভাই কার্তিক মোষের ঘর পরিষ্কার এবং তাদেরকে খাওয়ানোর সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। এবং আমি প্রত্যেকটি মোষের দুধ দুইয়ে বিক্রি করতে যেতাম। এখনো আমি প্রায় ২০ টা মোষের দুধ দোয়াই।"

বর্তমানে এই পরিবারের কাছে আছে ৮০টি মোষ এবং তারা প্রতিদিন ৪৫০ লিটার দুধ বিক্রি করে। ২০১৯ সালে তারা তাদের মোষ রাখার জন্য গোটা একটি তলা তৈরি করে বাড়ির। তবে এত বড় ব্যবসা কিন্তু এক রাতের মধ্যে হয়ে যায়নি। এর জন্য প্রয়োজন হয়েছিল জ্ঞান এবং পরিশ্রম। ধীরে ধীরে শ্রদ্ধা তাদের ব্যবসার দুর্বল জায়গা গুলিকে ভরাট করতে শুরু করে। সে জানিয়েছে," দুধের মধ্যে ফ্যাটের পরিমাণ সঠিক রাখার জন্য আমাকে অনেকদিন প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল। পাশাপাশি, আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল অনেক বছর ধরে। কিন্তু, হাল ছেড়ে দেবো, এটা কখনোই আমার মাথায় আসেনি। কিন্তু ব্যবসা নিজের হাতে চালানোর জন্য আমি নিজের পড়াশোনাকে কখনো অগ্রাধিকার দিতে পারিনি। আমি আমার গ্রামের একটি কলেজে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলাম। আমার সমসাময়িক অনেক ছেলেমেয়ে বড় শহরে তাদের পড়াশোনার জন্য চলে যেত। কিন্তু আমার বড় শহরে যাবার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না। কিন্তু তাতে আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি আমার সমস্ত দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।"

শ্রদ্ধা তার জীবনের একটি ছোট ঘটনা সাথে ভাগ করে নিয়েছেন এই বৈঠকে। "২০১৭ সালে গুজরাটের একজন ব্যবসায়ী তার ফার্ম বিক্রি করার জন্য এসেছিলেন। বাড়ি যাবার পথে আমি এবং আমার বাবা দুজনে ভাবছিলাম কোন ফার্ম সবথেকে বেশি ভালো হবে। অবাক করা বিষয় হলো, সেদিন আমরা দুজনে একেবারে এক ফার্মের কথা বলি। তখন আমি বুঝতে পারি, আমার কাছে সেরকম জ্ঞান রয়েছে, যার মাধ্যমে আমি ব্যবসা চালাতে পারব।" সে জানিয়েছে।

"সেদিন যদি আমি আমার পরিবারের ভার নিজের কাঁধে না তুলে নিতাম তাহলে হয়ত আমরা এরকম সাফল্য কোনদিন দেখতে পেতাম না। কিন্তু আমার বাবার কাছে হেরে যাওয়া কোনো বিকল্প ছিলনা। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে আমি ২০১১ সালে পরিবারের ব্যবসা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম। আমার ভাই বর্তমানে এই ডেয়ারি ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে চায়। এই জন্য সেই ডেয়ারি এবং পশু বিজ্ঞানের উপর পড়াশোনা করছে।" শ্রদ্ধা তার বক্তব্যে জানাচ্ছে।

shraddha dhawan with family Bengali News
পরিবারের সাথে শ্রদ্ধা। -

২০২০ সালে শ্রদ্ধা তার কলেজের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে শুধু ফার্মের ব্যবসা না, সে ছাত্রদের জন্য পদার্থবিদ্যার অনলাইন লেকচার সঞ্চালনা করে। বর্তমানে শ্রদ্ধা পদার্থবিদ্যার ওপরে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা করছে। এখনো পর্যন্ত সে এই ব্যবসার পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। যদিও সে জানাচ্ছে, এই ব্যবসার উপরেই তার ভাই পড়াশোনা করছে। ফলে দুজন মিলে অর্গানিক ডেয়ারি সেক্টরে আরো বেশ কিছু করা সম্ভব হবে বলে তার আশা। আর এই সমস্ত সাফল্যের কৃতিত্ব শ্রদ্ধা তার পরিবারকে দিচ্ছে। তার বক্তব্য," আমার পরিবার যদি আমার পাশে না থাকতো তাহলে আমি এই সাফল্যের মুখ কখনোই দেখতে পেতাম না।"

আরও খবর

বিজ্ঞাপন দিন

[email protected]

১৬ ফেব্রুয়ারি

নজর দিন এই বিষয়গুলিতে

Free hotel software
১৬ নভেম্বর

যে কাজগুলো করতেই হবে আপনাকে

Free hotel & restaurant software
১৯ মে

স্মৃতি উস্কে নোটবন্দির পুনরাবৃত্তি

2000 note
৩০ আগস্ট

ভারতের সবথেকে বড় বন্দর নিয়ামক সংস্থা আদানি কংগ্লোমারেট গ্রুপের সহ প্রতিষ্ঠাতা হলেন গৌতম আদানি

Goutam Adani
২৪ আগস্ট

শ্রীরাম ট্রান্সপোর্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রেস রিলিজ অনুসারে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এই মুহূর্তে এই সংস্থা সব থেকে বেশি সুদ দিচ্ছে ভারতে

Money india rupees
১৫ আগস্ট

রবিবার অর্থাৎ ১৪ আগস্ট ভোরবেলা মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে জীবনাবসান হয়েছে ভারতের 'ওয়ারেন বাফেট' রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার

Rakesh Jhunjhunwala new
১৯ জুলাই

টাকার দামে রেকর্ড পতন, বড়সড় আর্থিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস

Money Indian rupee work diary
১৬ জুলাই

জিএসটি হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ফলেই এই মূল্যবৃদ্ধি

Supermarket
৭ জুলাই

জিপিআইসিপিএল ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে সিমলায় রেজিস্টার্ড হয়েছিল

Vivo india
৩ জুলাই

একমাত্র কন্যার মৃত্যুতে শোকে ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা, এমন পরিণতি হবে কে তা জানত!

hang to death
২৮ জুন

ব্রাউন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক করেছেন আকাশ আম্বানি

Mukesh Ambani Akash Ambani
২৮ জুন

মহারাষ্ট্র নাটকে নয়া মোড়, আস্থা ভোটের দাবি নিয়ে আজকেই রাজ্যপালের দ্বারস্থ শিন্ডে বাহিনী, দাবি সূত্রের

Aditya Thackeray
২৬ জুন

বিদ্রোহী শিবিরের অন্য মন্ত্রীরা হলেন শম্ভুরাজ দেশাই, আবদুল সাত্তার এবং বাচ্চু কাডু

Sanjay raut
২৩ জুন

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের জন্য সুবিচার চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Mamata Banana pC