জীবনে খাঁটি এবং নকলের পার্থক্য বুঝতে শেখো; সোনালিসা দাস

নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশিত: 26/02/2023   শেষ আপডেট: 26/02/2023 10:23 p.m.
instagram.com/sonalisa_das_officials

ছোটবেলার ইচ্ছে থেকে পছন্দের 'ড্রিম ডেস্টিনেশন' পরিদর্শকের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় টেলি-তারকা সোনালিসা দাস

'জয়ী' বা 'গাঁটছড়া' ধারাবাহিকে খল চরিত্রে হোক, অথবা 'অপরাজিতা অপু' ধারাবাহিকে দুষ্টু মিষ্টি এক প্রাণবন্ত যুবতীর চরিত্রে,, আট থেকে আশি সকলের মন জিতে নিয়েছেন বাগনানের সোনালিসা দাস (Sonalisa Das)। জীবনের নানা খুঁটিনাটি সম্পর্কে ভাগ করে নিলেন, পরিদর্শকের সঙ্গে।

১) কেমন আছো? কীভাবে উপভোগ করলে শীতের আমেজ?

  • খুবই ভালো আছি। সম্প্রতি পাহাড় থেকে ঘুরে এলাম, আর পাহাড় মানেই মন ভালো থাকা, তাই ভীষণ ভালো আছি। শীত আমি কাটিয়েছি আমার নিজের বাড়ি বাগনানে। যদিও কলকাতাতেও ছিলাম। কিন্তু পাহাড়ে গিয়ে বেশি আনন্দের সঙ্গে শীত কেটেছে আমার (হাসি)।

২) ছোটবেলা থেকেই তুমি অভিনেত্রী হতে চেয়েছ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতে! কোনও মজার ঘটনা আছে এই নিয়ে?

  • নিশ্চয়ই। বেশ অনেক ঘটনাই আছে। আসলে কোথাও কোনও ভালো নাচ বা অভিনয় দেখলে আমারও ইচ্ছে জাগত নিজের মত করে সেই উপস্থাপনাটি ফুটিয়ে তোলার। তাই আমার সঙ্গী হত আয়না। যদিও সকলের চোখের আড়ালেই করতাম, কিন্তু যদি কখনও ধরা পড়ে যেতাম, সেই মুহূর্তে লজ্জা লাগলেও পরে বেশ মজা লাগত।

৩) ছোট থেকেই যে অভিনয় করার আকাঙ্খা ছিল তোমার মধ্যে, পরিবারে এই ইচ্ছের প্রতি সমর্থন কেমন ছিল?

  • এই প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, অভিনয় জগতে আসার পেছনে আমার পরিবারের খুব বড় ভূমিকা রয়েছে। ছোট থেকে নাচ শিখলেও অভিনয়ের প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। আমার বোন, মা, বাবা খুব বুঝতেন আমায়। সবচেয়ে বড় কথা, আমার দিদুন প্রচন্ডভাবে চাইতেন আমার স্বপ্ন পূরণ হোক। কোথাও কোনও খবরের কাগজে অডিশন সম্পর্কিত কিছু খোঁজ থাকলে, দিদুন চাইতেন আমি যেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি, আমার এমন একটি পরিবার আছে বলে।

৪) অভিনেত্রী ছাড়া, আর কিছু হওয়ার ইচ্ছে হত ছোটবেলায়?

  • হ্যাঁ, আমি বিমানসেবিকা হতে চাইতাম। মাকে বলতামও সেই ইচ্ছের কথা! আসলে ছোট থেকে দেশ বিদেশ ঘুরতে চাইতাম। তাই বিমানসেবিকা হওয়ার ইচ্ছে মনে বাসা বাঁধে। যদিও ছোট থেকে খেলাধুলায় ভালো হওয়ার দরুন আমার মামা (কলকাতা পুলিশে কর্মরত) চাইতেন আমি পুলিশ অফিসার হই। কিন্তু এখন অভিনেত্রী হয়েছি বলে যে সেই ইচ্ছেগুলো পূরণ হবে না, তা একেবারেই নয়। বরং অভিনয়ের দ্বারা আমি আমার সেই ইচ্ছেগুলোও পূরণ করতে পারব (হাসি)।

৫) তোমার সোশ্যাল মিডিয়া অনুসরণ করলে দেখা যায়, আবৃত্তির প্রতিও তোমার ভীষণ দক্ষতা। তোমার পরিবারের কেউ সাংস্কৃতিক মহলের সঙ্গে যুক্ত?

  • আমি আসলে নিজে লিখতে খুব ভালোবাসি। আমি ভীষণ মুডি, তবুও মুড অনুযায়ী অনেক সময় জীবনের নানা মুহূর্তকে নিজের মত করে গুছিয়ে রূপ দিতে পছন্দ করি। কখনও কবিতা লিখে, কখনও বা ডায়েরীতে। সেখান থেকেই আবৃত্তি করার ঝোঁকটা এসেছে।

৬) তুমি তো ড্রাইভ করতে ভালোবাসো, অবসর পেলে নিজে ড্রাইভ করে কোথাও যাওয়া হয়?

  • ড্রাইভ করতে ভালোবাসি ঠিকই, তবে আমি কিন্তু মোটেই ভালো ড্রাইভার নই (হাসি)। ভালো করে ড্রাইভিং শিখে তবেই নিজে ড্রাইভ করে ঘুরে বেড়াব।

৭) এমন কোনও 'ড্রিম ডেস্টিনেশন' আছে যেখানে নিজেই গাড়ি চালিয়ে যেতে চাও?

  • (একটু চিন্তা করে) লাদাখ।

৮) ইন্ড্রাস্ট্রিতে তো তোমার বেশ অনেক বছরই হল, এমন কোনও ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছ যা পরবর্তীতে তোমার জীবনের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে?

  • ইন্ড্রাস্ট্রিতে ভালো ঘটনা, খারাপ ঘটনা দুইয়ের সম্মুখীনই হতে হয়েছে। শিক্ষা নিয়েছি দু ক্ষেত্র থেকেই। ভালো দিক বলতে যেমন, সকলের সমর্থন পাওয়া। সমর্থন পেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, মনে হয় কোনও কাজ আমি আরও সাফল্যের সঙ্গে করে যেতে পারব। খারাপ বলতে, একটি বিনোদন অনুষ্ঠানে ছোটবেলায় চেষ্টা করেছিলাম অংশগ্রহণ করার। কিন্তু যথাযথ ভাব বিনিময় করতে না পারায় অনুষ্ঠানটি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। খারাপ তো লেগেছিল, কিন্তু মনে মনে বিশ্বাসও রেখেছিলাম এমন একদিন আসবে, যখন এই অনুষ্ঠান থেকে আমি ডাক পাব। হয়েছেও তাই (প্রশান্তির হাসি)।

৯) নতুন হিসেবে তো অভিনেতা অভিনেত্রীদের অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তোমাকেও নিশ্চয়ই হয়েছে, তোমার অভিজ্ঞতা থেকে তোমার আগামীদের জন্য কোনও পরামর্শ দিতে চাও?

  • হ্যাঁ অবশ্যই দিতে চাই। সবকিছুর আগে যাচাই করে নেওয়ার বোধ থাকতে হবে। অর্থাৎ খাঁটি এবং নকলের পার্থক্য বুঝতে হবে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই অনেকে নতুন যাঁরা আছেন, তাঁরা অভিনয়ের প্রতি ইচ্ছা থেকে অনেক ভুল করে বসেন, এমনকি কোনটা আসল এবং কোনটা নকল বোঝেন না। ফলে তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে, অডিশন দিতে গিয়ে নির্বাচিত পর্যন্ত হয়ে গেছি, কিন্তু তারপর বুঝেছি গোটা ব্যাপারটাই ভুয়ো। সেদিকে সচেতন হতে হবে, আগে থেকে জেনে শুনে এগোতে হবে নতুনদের।

১০) তোমার তো বিপুল অনুগামী সংখ্যা। অনুগামীদের থেকে পাওয়া বা এই অভিনয় জীবনে পাওয়া এমন কোনও স্মরণীয় মুহুর্ত আছে যা ভাগ করে নিতে চাও?

  • আমার জীবনে প্রত্যেকদিনই বেশ স্মরণীয়। একটি ঘটনা ভাগ করে নিতে চাই। আমার ধারাবাহিক 'জয়ী' চলাকালীন, টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনে একজন ভদ্রলোক আমায় বলেছিলেন 'খুব তো দুষ্টুমি করে চলেছে জয়ীর সঙ্গে', এই মুহূর্তটা সত্যি খুব আনন্দ দিয়েছিল। পর্দার বাইরেও কেউ চিনতে পেরে আমার অভিনীত চরিত্র নিয়ে বলছেন, তা সত্যিই একজন শিল্পী হিসেবে আমার কাছে বড় প্রাপ্তির ছিল।

১১) বাস্তবে সোনালিসা কেমন?

  • প্রচণ্ড মুডি। যখন যেটা মুড হচ্ছে, সেটাই করতে চায়। কোনওদিন কারুর খারাপ চায়নি, কিন্তু নিজে ভীষণ মুডি।

১২) একজন দক্ষ অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জন্য কি কি মেনে চলে এগোনো উচিত বলে তুমি মনে করো?

  • দক্ষ অভিনেত্রী তো আমি এখনও হয়ে উঠিনি। প্রসেস চলছে (হাসি)। তবে শিল্পী হয়ে উঠতে গেলে কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং কঠোর পরিশ্রম মূল মন্ত্র। নিজেকে সংযম রাখা, নিজের সঠিক যত্ন নেওয়ার প্রতিও দায়িত্বশীল হতে হবে।

১৩) জীবনের প্রথম উপার্জন খুবই বিশেষ হয়। তুমি তোমার প্রথম উপার্জন দিয়ে কি করেছিলে?

  • বাড়ির বড়রা বলতেন, প্রথম উপার্জনে সকলকে উপহারে জুতো দিতে হয়। কেন বলতেন জানি না, তবে আমার প্রথম উপার্জনে পুজোর সময় সকলকে উপহারে জুতো দিয়েছিলাম।

১৪) ক্যামেরার সামনে থেকে তো মন জিতে নিয়েছই। ভবিষ্যতে ক্যামেরার পেছনে থেকেও কিছু করার ইচ্ছে আছে? ছবি প্রযোজনা বা পরিচালনা?

  • ক্যামেরার পেছনে থাকার কথা এই মুহূর্তে ভাবিনি। তবে যাঁরা ক্যামেরার পেছনে থাকেন, তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। তাঁদের জন্যই ক্যামেরার সামনে আমরা আরও প্রানবন্ত হয়ে উঠি। ক্যামেরার সামনে থাকতেই আমি যেহেতু ছোট থেকে ভালোবাসি, তাই এখনও অবধি ক্যামেরার সামনে থেকেই কাজ করার ইচ্ছে। আমি তো একদমই ক্যামেরার পেছনে কাজ করার মত পরিশ্রমী নই, আবার আমি যা মুডি হয়ত কখনও ক্যামেরার পেছনে থেকেও কাজ করতে পারি (হাসি)!

১৫) আসন্ন কোন কাজে তোমায় দেখতে পাওয়া যাবে?

  • (চিন্তা করে) দেখা যাক, কী হয়!

১৬) অনুগামীদের জন্য কি বলতে চাও?

  • তোমরা যেভাবে ভালোবাসা দিয়ে গেছ, বা দিয়ে চলেছ, ভবিষ্যতেও যেন তোমাদের ভালোবাসা নিয়ে আমি আরও অনুপ্রাণিত হতে পারি, অনেক 'চ্যালেঞ্জ' জয় করে নিতে পারি। তোমাদের ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। ভালো থেকো সবাই, এইটুকুই চাওয়া।