মাত্র কয়েকটি ঝুঁকি এড়াতে পারলেই ক্যান্সারে মৃত্যু অর্ধেক কমানো যায়
বলছে নতুন গবেষণা
বহু দিন ধরেই ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা বারবার তামাক ও মদ সম্পর্কে আমাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন৷ ওজন বেড়ে যাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাবের কথাও বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা৷ এবার নতুন এক গবেষণা–রিপোর্ট বলছে, সিগারেটের মতো তামাকজাত দ্রব্য, মদ এবং অত্যধিক ওজন সহ কয়েকটি বিষয় এড়িয়ে চলতে পারলেই গোটা পৃথিবীতে প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ফেলা যায় ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যা৷
দ্য ল্যানসেট পত্রিকায় গত মাসে ছাপা হয়েছে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট৷ সেখানে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ২০১৯ সালে ক্যান্সারে ভুগে মারা গেছেন যাঁরা, তাঁদের প্রায় ৪৫ শতাংশের এই রোগ হওয়ার পিছনে রয়েছে তামাক সেবন, মদ্যপান ও অতিরিক্ত ওজনের মতো কয়েকটি বিষয় যেগুলি সহজেই এড়িয়ে চলা যায়৷ এ বিষয়ে গবেষণার কাজটি করেছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন–এর ডিরেক্টর ডঃ ক্রিস মুরে ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী৷ গবেষণায় অর্থ সাহায্য করেছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন৷ ভয়ানক মারণ–রোগ ক্যান্সারের সঙ্গে এড়িয়ে চলা যায় এমন কয়েকটি ঝুঁকির সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল– এই দশ বছর ধরে ২০৪টি দেশের ২৩ ধরনের ক্যান্সার ও ৩৪টি ঝুঁকির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করেছেন৷
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার ডঃ উইলিয়ার ডাহুট জানিয়েছেন, তামাক ব্যবহার করলে ক্যান্সার হতে পারে– এই বিষয়টি বহু দিন ধরে বলা সত্ত্বেও আজও মানুষকে সম্পূর্ণ ভাবে সচেতন করা যাচ্ছে না৷ তিনি আরও বলেন, শরীরের অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্কের বিষয়টিও খুবই উদ্বেগজনক এবং এ কথাও আর অজানা নেই যে, মদ্যপানের সঙ্গে ক্যান্সারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে৷
নিউজিল্যান্ডের একটি ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বিজ্ঞানী ডঃ ডায়ানা সারফাটি এবং জেসন গারনে ওই ল্যানসেট পত্রিকাতেই একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছেন, ক্যান্সারের পিছনে থাকা ঝুঁকিগুলির সঙ্গে আবার জীবনযাত্রার ধরনের একটি সম্পর্ক রয়েছে, যার সঙ্গে যোগ রয়েছে মানুষের আর্থিক অবস্থার৷ যেমন, একজন গরিব মানুষ যে পরিবেশে বাস করেন, সেটা তাঁর জীবনযাত্রার ধরনের ওপর প্রভাব ফেলে৷ বহু ক্ষেত্রে তামাক বা মদের নেশার পিছনে থাকে ওই বিশেষ পরিবেশের প্রভাব৷
তাই বিজ্ঞানীদের মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গেলে তার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া দরকার৷ আর তা করতে পারলে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য–পরিস্থিতির চেহারা অনেকটাই উজ্জ্বল হবে৷