বাচ্চার ঘুমে সমস্যা?

শ্রীরূপা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশিত: 05/02/2022   শেষ আপডেট: 06/03/2022 11:05 p.m.

কারণ খুঁজলেন কলোরাডোর বিজ্ঞানীরা

সারাদিনের দুরন্তপনায় ঘাটতি নেই, অথচ রাতে বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রোজ? ভাবছেন কেন এমন হচ্ছে? উত্তর খুঁজেছেন ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর একদল বিজ্ঞানী-গবেষক। গবেষণায় সাহায্য করেছে সেখানকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ।

জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানী লরেন হার্স্টেইন ও তাঁর সহযোগীরা দেখিয়েছেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সামান্য আলোর সংস্পর্শে এলেই তাদের মেলাটোনিন হরমোন, যা ঘুম পাওয়ায় সাহায্য করে, সেটির ক্ষরণ কমে যায়। উল্টোপাল্টা আচরণ করতে থাকে শিশুদের জৈবিক ঘড়ি। ফলে তাদের ঘুম আসতে চায় না।

আগে মনে করা হত, কেবল জোরালো আলোই বাচ্চাদের ঘুম পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা। সাম্প্রতিক এই গবেষণা দেখিয়ে দিল, স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি এমন শিশুদের ক্ষেত্রে খুব কম তীব্রতার আলোও মেলাটোনিন ক্ষরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের চোখের তারারন্ধ্র বড় হয়। তাদের চোখের লেন্সও বড়দের তুলনায় বেশি স্বচ্ছ থাকে। তাই শিশুদের মস্তিষ্কে আলোর প্রতিক্রিয়াও বড়দের তুলনায় অনেকটাই বেশি হয়।

তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী ৩৬ জন স্বাস্থ্যবান শিশুকে নিয়ে ৯ দিন ধরে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রথম সাত দিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম পাড়িয়ে তাদের জৈব ঘড়ি, যা তাদের ঘুমানো ও জেগে থাকার চক্রটিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে নির্দিষ্ট নিয়মে বেঁধে ফেলা হয়েছিল। অষ্টম দিন তাদের রাখা হয়েছিল আবছা আলোর একটি ঘরে। জানলাগুলো ঢেকে দেওয়া হয়েছিল কালো প্লাস্টিকে, জ্বালানো হয়েছিল মিটমিটে আলো। বাচ্চাগুলির জৈবিক ঘড়িতে রাত শুরু হলে মেলাটোনিনের পরিমাণ সর্বনিম্ন কোন স্তরে থাকে, সেটা মেপে নেওয়াই ছিল বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য। পরীক্ষার শেষ দিন, অর্থাৎ নবম দিনে ঘুমোতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে ওই শিশুদের প্রচুর আলোর মধ্যে খেলাধূলা করতে দেওয়া হয়েছিল। দেখা গেল অষ্টম দিনের তুলনায় নবম দিনে আলোর সংস্পর্শে এসে বাচ্চাদের মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ ৭০ থেকে ৯৯ শতাংশ কমে গেছে। পরীক্ষায় আরও দেখা গেছে, ঘুমের আগে ঘরের সাধারণ আলোর তুলনায় অনেক কম তীব্র আলোর সংস্পর্শে এলেও শিশুদের মেলাটোনিন ক্ষরণ গড়ে ৭৮ শতাংশ কমে যায়। এমনকি আলো নিভিয়ে দেওয়ার পর প্রায় এক ঘন্টা পর্যন্ত ওই হরমোন ঘুম পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় স্তরে ফিরতে পারে না।

তাহলে কি সন্ধে থেকে ঘরের সব আলো নিভিয়ে রাখাই একমাত্র উপায়! তা নয়। বিজ্ঞানীর বলছেন, বাচ্চাদের প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম পাড়ানো, ঘুমের সময় ঘরের পরিবেশ শান্ত ও আরামদায়ক রাখা, সর্বোপরি ঘুমের বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, টেলিভিশনের মতো ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, যেগুলি তীব্র আলো বিচ্ছুরণ করে, সেগুলি বন্ধ করে রাখলেই কেল্লা ফতে। নিয়ম মেনে এটুকু করতে পারলেই সহজে ঠিক সময়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দেবে আপনার ছোট্ট সোনামণি।