উচ্চ-শিক্ষা না উচিৎ শিক্ষা?

কৌস্তভ চ্যাটার্জী
প্রকাশিত: 04/06/2021   শেষ আপডেট: 05/06/2021 9:29 p.m.

কবে হবে পরীক্ষা? সঙ্কটে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যত

কঠিন অসুখ - কঠিন সময়ের মাঝেও কিছুই থমকে থাকেনি। একদিন আলোর রেখা ঠিক দেখা যাবে, এই আশার ছাতায় আশ্রিত হয়েও কেউ হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। বড়ো আয় ছোট হয়েছে, দীর্ঘ জীবন স্বল্প হয়েছে, মহান স্বপ্ন মলিন হয়েছে - তবে গতি রুদ্ধ হয়নি কোথাও। খরস্রোতারা বাধাকে চূর্ণ করে চলে আর মৃদুধারারা চলে বাধার পাশ কাটিয়ে এঁকেবেঁকে পথ খুঁজে নিয়ে। আর যারা গতিশক্তি হারিয়েছে, যাদের জানা নেই পথটুকুও; তারা?

তারা প্রতিনিয়ত ডানহাতে পাঠ্যবই আর বাঁহাতে টিভির রিমোট নিয়ে রি-রি-রিভিশনের অপার অবসাদের সাথে টে-লি-ভিশনে পরীক্ষা-আপডেটের অনন্ত অপেক্ষা চটকে মেখে খাচ্ছে। হ্যাঁ, পরীক্ষার্থীদের কথাই হচ্ছে যারা 'কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত'-কে কেন্দ্র করে ভোট পূর্ববর্তী কুৎসা থেকে ভোট পরবর্তী হিংসা, কালজয়ী করোনার দ্বিতীয় করাল থাবা থেকে শুরু করে জোড়া ঘূর্ণিঝড়ের ঘাতকতা - সবকিছু দেখেছে। দেখা হয়নি মাধ্যমিকের মাধ্যমে উচ্চতর ক্লাসে বসার কোনো সূত্র, উচ্চমাধ্যমিকের উচ্চতা পেরিয়ে কলেজের স্বাধীনতার স্বপ্ন। ভোটপুজো মিটে গেলে এই বিশেষ বিশেষ পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে তার সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনায় বসতে চায় বিশেষ বিশেষ এক্সপার্টদের নিয়ে গঠিত টিম। তবে কখনো এই আলোচনার শেষে আলোটুকু আর থাকেনা, কখনো 'অনিবার্য কারণবশত' আলোচনাই আর হয়ে ওঠেনা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে সিলেবাসের ৩০-৩৫% বাদ আগেই পড়েছিল। অতিসম্প্রতি, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বেশ কিছু সংক্ষেপন, বিবিধ বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল, সময় সংক্ষেপন, হোম সেন্টার নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠে এলেও বর্তমানে পরীক্ষাই উঠে যাওয়া শ্রেয় হবে কিনা, সন্দিহান নীতি-নির্ধারকরাও।

মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ওই পরীক্ষার্থীরা। একাধিক সংবাদ মাধ্যম ও সমীক্ষা রিপোর্টে উঠে এসেছে শিক্ষা ও পরিচালন ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থাহীনতা। গতবছরের উচ্চ-মাধ্যমিক চলাকালীন অতিমারির প্রথম ঢেউয়ে তিন থেকে চারটি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করায়, নেওয়া পরীক্ষাগুলির মধ্যে কোনো এক বিষয়ে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলির নম্বর নির্ধারিত হওয়ায় কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ব্যপক বিড়ম্বনায় পড়ে ছাত্রছাত্রীরা। এই বছরের পরীক্ষার্থীদের বিনা পরীক্ষাতেই বা মূল্যায়ণ কীভাবে হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যায় পড়বে না তো এই বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা? চিন্তার ভাঁজ অভিভাবকদের কপালে। অনলাইন ক্লাসে অন্য পঠনপাঠন সম্ভব হলেও সম্ভব হয়নি একাদশ-দ্বাদশের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস, এই পরিস্থিতিতে কেবল পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ণই নয়, বাস্তবিকভাবেই প্রত্যক্ষ শিক্ষার অভাব লক্ষ্যনীয় হবে।

পূর্ণাঙ্গভাবে দেশ তথা বিশ্বেজুড়ে শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য ক্লাসের পড়াশোনা এগিয়ে চলেছে এরই মাঝে। দশম দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষার এই সংকটকালে সিবিএসই তাদের দ্বাদশের পরীক্ষা বাতিল করেছে ইতিমধ্যেই, বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু রাজ্যের দশম ও দ্বাদশের পরীক্ষা। করোনার‌ দ্বিতীয় ঢেউ আরও নিম্নমুখী হলে কীভাবে পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রেখে তাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সংগঠিত উপায়ে মূল্যায়ণ করা যায়, সিদ্ধান্ত গৃহীত হোক অবিলম্বে।