প্রসঙ্গ গঙ্গাসাগর মেলা: অর্থনীতি, রাজনীতির ধর্মীয় মিশেল
করোনা পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলার যৌক্তিকতা কতটা? কেবলই কি ধর্মীয় পুণ্যার্জন নাকি অন্যকিছু?
কথায় আছে, "সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার!" অনেকেই মজা করে বলছেন এই 'একবার' আবার জীবনের 'শেষবার' নয় তো? এ প্রশ্নের উত্তর এখন সম্ভব নয়, আরও দিন কয়েকের অপেক্ষা। যদিও এর পরিণতি ঠিক কী হতে পারে কেবল অনুমান করতে পারি, সিদ্ধান্ত নয়।
এবারের গঙ্গাসাগর মেলা 'সুপার স্প্রেডারের' মূল কারণ হয়ে উঠতে পারে, এমনই আশঙ্কা করছেন একাংশ। ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিভিন্ন মেলা, নির্বাচন, অনিয়ন্ত্রিত জমায়েতের একটা বড় ভূমিকা ছিল, একথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল। আগেই ভারতকে সতর্ক-ও করা হয়েছিল, কিন্তু ভুল থেকেও শিক্ষা নেয়নি দেশ। আর বর্তমানে দেশে যেখানে দৈনিক সংক্রমণ লক্ষাধিক, সেখানে গঙ্গাসাগর মেলার যৌক্তিকতা কতটা এমন প্রশ্নও তুলেছেন একাংশ। চিকিৎসক সংগঠনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাগরমেলা বন্ধের চিঠি পাঠানো হয়েছে। হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন একজন চিকিৎসক। শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী গঙ্গাসাগর মেলা প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, মানুষ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মেলায় আসতে চাইলে তিনি আটকাবেন কোন উপায়ে? মুখ্যমন্ত্রীর একথায় যুক্তি আছে, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, গঙ্গাসাগর মেলায় উত্তর-পূর্ব ভারতের উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিসগড়, এমনকী রাজস্থান, পাঞ্জাবের থেকে একটা বড় অংশের মানুষ আসেন পুণ্য অর্জনের প্রত্যাশায়। ধর্মীয় যৌক্তিকতা তো একটা অংশের মানুষের আছেই, সেই সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি ও রাজনীতির এক ধর্মীয় মিশেল!
সাগরমেলা দিন কয়েকের। আর তাতেই কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম। এই কয়েক দিনের মেলার মাধ্যমে কয়েক হাজার মানুষের রোজগারের একটা বড় অংশ জড়িত। মেলায় আগত মানুষের থাকা, খাওয়া কিংবা আনুষঙ্গিক পুণ্য অর্জনের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত আছে সেই এলাকার মানুষের রুজিরুটির প্রশ্ন। আর রাজনীতি তো আছেই! রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বারবার এই প্রশ্ন তুলেছেন, গঙ্গাসাগর মেলা ঘিরে কতিপয় রাজনৈতিক নেতার ষোলআনা পকেটভর্তির কথা এই প্রথম নয়, শুরুর থেকেই চলে আসছে। মেলা বন্ধ হলে মানুষের পুণ্য অর্জনে কতটা খামতি পড়বে সে প্রশ্নের উত্তর না থাকলেও গঙ্গাসাগরের কত সাধারণ মানুষ যে তাঁদের বছরের একটা বড় আয় থেকে বঞ্চিত হবেন কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের রাজনৈতিক সুবিধালাভের পথরোধ ঘটবে - তা বলাই বাহুল্য!
কোভিড বিধি মেনে গঙ্গাসাগর মেলার কথা বলেছে আদালত। তার জন্য তৈরি হয়েছে তিন সদস্যের একটি দল। লক্ষাধিক মানুষের করোনার বিধি-নিষেধ মেনে পুণ্য অর্জন কতটা সম্ভব, তা-ও সময় বলবে। একটা কথা বলা যায়, গঙ্গাসাগর মেলা কেবল পুণ্যার্থীদের নয়, এর সঙ্গে জড়িত অর্থনীতি ও রাজনীতির জটিল ঘোরপ্যাঁচ। আজ 'বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?', ঠিক এর মতোই 'সাধুদের নাকে মাস্ক পরাবে কে?' এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে গঙ্গাসাগরের আনাচে-কানাচে!