রাজ্যের বিপদের কথা বলে বিতর্কিত মন্তব্য বিজেপি সাংসদের
ভোট-দাবার বোড়ে সেই সাম্প্রদায়িকতাই
সংসদ অধিবেশনের তৃতীয় দিনে বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এমন একটি মন্তব্য করেছেন যাতে ভ্রু কুঁচকেছে রাজনৈতিক মহলের। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা বলতে গিয়ে লকেট নতুন করে খুঁচিয়ে তুলেছেন তেলিনিপাড়া সংঘর্ষের প্রসঙ্গটি। বলেছেন ''দুঃখের সঙ্গে বলছি পশ্চিমবঙ্গ বিপদের মধ্যে আছে। বাংলা পুরনো কাশ্মীরে পরিণত হচ্ছে''।
স্পষ্টতই পশ্চিমবঙ্গের বিপদ বলতে তিনি রাজ্যের হিন্দু বাসিন্দাদের বিপদের কথাই বলতে চেয়েছেন এবং সেই কারণেই কাশ্মীর ও তেলিনিপাড়ার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। একজন জনপ্রতিনিধির এ হেন বিতর্কিত মন্তব্যে খুশি নন গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ।
পুরনো কাশ্মীরে অশান্তির পিছনে দায় কাদের, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর নতুন কাশ্মীরে বিজেপি সরকার কেমন শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে ইত্যাদি বিতর্কিত প্রশ্নে না ঢুকেও এ কথা বলাই যায় যে, বিজেপি সাংসদ তেলিনিপাড়ার ঘটনা সম্পর্কে সত্য বলেননি।
গত ১২ মে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হুগলি জেলার তেলিনিপাড়ায় দুই সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের মধ্যে বিরোধ বাধে। এলাকার মানুষেরই হস্তক্ষেপে তা দ্রুত মিটেও যায়। এর ঠিক দু'দিন পরে নতুন করে হামলার ঘটনা ঘটে। একটি প্রখ্যাত সংবাদমাধ্যম সেইসময় এলাকায় ঘুরে পুলিশের বড়কর্তাদের বয়ান উদ্ধৃত করে তুলে ধরেছিল প্রত্যক্ষদর্শীর রিপোর্ট। রিপোর্টে দেখা গেছে, ওইদিন বহিরাগত দুষ্কৃতীরা এলাকার কিছু মানুষের সহযোগিতায় বেছে বেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর ব্যাপক হামলা চালায়, ঘরবাড়ি-দোকানপাটে আগুন দেয়, অনেক ক্ষয়ক্ষতি করে। পাশাপাশি সমাজমাধ্যমে সংখ্যালঘুবিরোধী প্রচুর ভুয়া খবর ও ভিডিও প্রচারিত হয় যার পিছনে উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের হাত থাকার কথা বেরিয়ে আসে। পুলিশ দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করে। বন্ধ করে সমাজমাধ্যমের সম্প্রচার। শান্তি ফিরে আসে এলাকায়। অথচ সাংসদ তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন ঠিক বিপরীত চিত্র। এর নিন্দা করেছে রাজনৈতিক মহল।
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ বজায় রয়েছে। এই পরিবেশটিকে ছিঁড়েখুঁড়ে ভোটে সুবিধা করতে চায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারবারিরা। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, বিধানসভা ভোট সামনে এসে যাওয়ায় তাদের সক্রিয়তা বেড়ে গেছে। তবে বিজেপি তো বটেই, এমনকি কংগ্রেস, তৃণমূল কিংবা সিপিএমের মতো বামপন্থী বলে পরিচিত দলকেও ভোটে ফায়দা তুলতে নানা সময় ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়কে জড়িয়ে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালাতে দেখা যায়। এর বিরুদ্ধে সব ধর্মেরই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, গণতন্ত্রপ্রিয়, শান্তিপ্রিয় মানুষ যত বেশি সরব হবেন, ততই রাজ্যের মঙ্গল।