গত বছর মে মাসে আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েড নামক এক বছর ৪৬ এর ব্যক্তির পুলিশের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হওয়ার ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। ফ্লয়েড মিনিয়াপোলিস অঙ্গরাজ্যে এক রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করতেন। একটি প্রতারণার কেসে সন্দেহভাজন তালিকায় ছিল এই কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি। গ্রেফতারের পর একজন পুলিশ অফিসার হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরে। ওখানেই তিনি মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শীর এক ১০ মিনিটের ভিডিওতে ফ্লয়েডের কাতর মিনতি শোনা যায় "আমি শ্বাস নিতে পারছি না।" অভিযুক্তের বিনা বিচারে খুনের ঘটনায় আরও একবার আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসের কথা সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিল। বিশ্ব জুড়ে উগ্র শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিল বেরিয়েছিল।
উল্লেখ্য, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের জমানায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে বারবার অভিযোগ উঠেছিল। ট্রাম্পের প্রশাসন নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধালাভের উদ্দেশ্য নিয়ে শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসে মদত দিতেন বলে জানা যায়। এ বছর জানুয়ারিতে জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জয়ের শংসাপত্র দিলে ট্রাম্প বাহিনীর হামলায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ক্যাপিটাল বিল্ডিং চত্বর। ট্রাম্প বাহিনীর দাপট সামলাতে আমেরিকার পুলিশকে গুলি ছুঁড়তে হয়। এই ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ব জুড়ে বিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রথমবার বক্তৃতা দিতে এসে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই প্রসঙ্গই তুলেছেন। বাইডেনের গলায় উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শোনা গেল। আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ যে সন্ত্রাসবাদের নামান্তর এমন কথা বলতে শোনা গেল বাইডেনের গলায়। উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আমেরিকার সাংসদদের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, "দেশের সার্বিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিদেশি শক্তির থেকেও বড় বিপদ শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ। গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মতে, এই মুহূর্তে দেশের জন্য সবথেকে বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে উগ্র শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ। এটা সন্ত্রাসবাদের নামান্তর। এই সতর্কবার্তা আমরা কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারি না।" প্রিয় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, "দেশের আত্মায় যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা সারিয়ে তুলতে হবে।"
এদিনের ভাষণে তিনি জানুয়ারি মাসের ক্যাপিটাল বিল্ডিং আক্রমণের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। বলেন, "আমাদের সবার মনে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলার ছবি এখনও স্পষ্ট হয়ে আছে। ওই হামলায় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেছে। অনেকের প্রাণ সংশয়ও হয়। পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়েছিল সাহসিকতার সঙ্গে। ওই হামলায় আমাদের গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার পরীক্ষা ছিল এবং আমরা তাতে সফলভাবে উতরে গিয়েছি।" বাইডেন সরকার উগ্র শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদকে যে প্রশয় দেবে না, তা প্রথম দিন মার্কিন কংগ্রেস অধিবেশনে স্পষ্ট বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।