সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে (Social Media) একটি ছবি রাতারাতি ভাইরাল (Viral) হয়েছে। তামাম বিশ্ববাসী চোখের জল ফেলেও মুখে হালকা হাসি নিয়ে প্রার্থনা করেছেন 'ওর ভাল হোক'। এক আফগান কন্যার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নতুন দেশের বিমানবন্দরে নেমেই মুক্তির পাখা উড়িয়ে ডানা মেলে দিয়েছিল নতুন আনন্দে। বাবা-মা এবং আর এক খুদের সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নতুন দেশে পৌঁছে তার সেই মুখের অভিব্যক্তি গোটা বিশ্ববাসীর কাছে এক নতুন স্বপ্ন দেখার বার্তা বয়ে এনেছিল। নেটাগরিকদের একাংশ ভেজা চোখে কন্যাটির অমলিন হাসি দেখে চোখের পাতা ফেলতে পারেননি।
গত কয়েক দিনে আফগানিস্তানে (Afghanistan) 'অনৈতিক' শাসন কায়েম করেছে তালিবান (Taliban)। আর ক্ষমতায় এসেই জারি করেছেন একের পর এক ফতোয়া। আবার কখনও বলছেন এ তালিবান সেই আগের তালিবান নয়। বিশ্ববাসী তাদের বিশ্বাস করুক। অথচ একের পর এক ফতোয়া জারিতে বিশ্বাস দূরে থাকুক, ধীরে ধীরে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে বদ্ধপরিকর। এর মধ্যেই গতকালই তারা দেশের অস্থায়ী উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করেছেন শেখ আব্দুলবাকি হাক্কানিকে। তিনি ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা করেছেন দেশে কোন কো-এডুকেশন থাকবে না। এমনকী কোন পুরুষ শিক্ষক মেয়েদের পড়াতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে ক্লাস করতে পারবে না। তাহলে তালিবানদের মানুষ কীভাবে বিশ্বাস করবে, সে প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় ফিরেই মহিলাদের উদ্দেশ্যে একের পর ফতোয়া জারি করে চলেছে তালিবান। কখনও বলা হচ্ছে পুরুষ সঙ্গী ছাড়া মহিলাদের ঘরের বাইরে বেরোনো 'হারাম', আবার কখনও বলছে সর্বাঙ্গ কাপড়ে মুড়ে তবেই ঘরের বাইরে পা ফেলতে পারবেন নারীরা। কাজের ক্ষেত্রে কখনও বলা হচ্ছে 'না', আবার কখনও বলা হচ্ছে ঘরে থেকে কাজ করতে হবে। তাছাড়া ১৫ বছর থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের বাধ্যতামূলক ভাবে তাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতেই হবে। এছাড়া শিল্প, সংস্কৃতি, সঙ্গীত চর্চার উপর আঘাত তো চলছেই। আর পরিণামে মিলছে মৃত্যুদণ্ড। নতুন অস্থায়ী উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীর এই নতুন নির্দেশ সে দেশের নারী স্বাধীনতার উপর তীব্র আঘাত হানা হচ্ছে বলছেন ওয়াকিবহাল মহল।
সূত্রের খবর, কো-এডুকেশন বন্ধের মধ্য দিয়ে পক্ষান্তরে তালিবানরা নারীদের পড়াশোনার পথই বন্ধ করে দিতে চাইছে। কারণ সেদেশে উচ্চ শিক্ষায় আলাদা ভাবে নারীদের শিক্ষা দেওয়ার কোন পরিকাঠামোই নেই। ফলে সেদেশের নারীরা উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক ভাবে আরও 'একঘরে' হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন একাংশ। যে কন্যাটি বাবা-মায়ের হাত ধরে আর এক দেশে গিয়ে মুক্তির আনন্দে ডানা মেলে দিল, তার তো কতশত অসহায় কন্যাই সে সুযোগ না পেয়ে অচিরেই যে তাদের জীবনাহুতি দিতে হবে তা বলাই বাহুল্য।
এদিন ফের আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরে পরপর রকেট হামলা। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সোমবার সকালে কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর লক্ষ্য করে রকেট ছোঁড়া হয়েছে বলে খবর। বিমানবন্দরের অদূরে খোরশিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর থেকে রকেট ছোঁড়া হয়েছে বলে খবর। যদিও এই রকেট হামলায় কোন হতাহতের খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।