কেমন হয় যদি চোখের সামনে আবার জীবন্ত হয়ে ওঠেন অতীত দিনের মনীষীরা? যদি দেখা যায় মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী শহিদ ভগৎ সিং তাকিয়ে রয়েছেন আপনার দিকে, মৃদু হাসি তাঁর ঠোঁটে! স্বামী বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ, বাল গঙ্গাধর তিলক কিংবা মহাত্মা গান্ধীর স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধীকে যদি এদিক-ওদিক তাকাতে দেখা যায়, দেখা যায় হাসতে!
ভাবছেন, এও আবার হয় নাকি! তাহলে সবিনয়ে জানাতে হচ্ছে, এমনটাই হয়েছে। অত্যাধুনিক এক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক টুইটার ব্যবহারকারী দেশের মনীষীদের পুরনো, ঝাপসা ছবি থেকে তৈরি করে ফেলেছেন এমন সব অবাক করে দেওয়া জীবন্ত ছবি।
মানুষটির নাম কার্তিক শশীধরন। টুইটারে তিনি দেশের স্বাধীনতা-যোদ্ধা ও বড় মানুষদের ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে ক্লিক করলেই চোখের সামনে সচল হয়ে উঠছে ছবিগুলি। চমকে উঠতে হচ্ছে দর্শকদের। কার্তিক জানিয়েছেন, ‘হেরিটেজ এআই অ্যালগরিদম' নামক একটি প্রযুক্তির সাহায্যে পুরনো এই স্থির ছবিগুলিকে সচল করতে সফল হয়েছেন তিনি। টুইট করে কার্তিক বলেছেন– প্রেরণাদায়ক স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসক যাঁকে ফাঁসি দিয়েছিল, তাঁর একটি ছবিকে হেরিটেজ এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে নতুন করে অ্যানিমেট করা– এ যেন এক পরাবাস্তব।
সম্পত্তি ১৫০ কোটির, নাম ফোর্বস-এর ১০০ ধনী ভারতীয়র তালিকায়
কেন এমন হল? একসময় ভারতের অন্যতম তারকা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে, ক্রমান্বয়ে তাঁর ব্যবসা ও সাম্রাজ্যের মুখ থুবড়ে পড়ার আসল কারণটা কি?
স্বামী বিবেকানন্দের ছবি পোস্ট করে কার্তিকের টুইট– ‘‘এই অ্যালগরিদম (গাণিতিক পরিভাষা) ব্যবহার করে তাঁর ছবিকে সচল করার এই প্রচেষ্টায় স্বামী বিবেকানন্দ হয়তো হাসতেন। কিন্তু মানুষের জীবনের পার্থিব বিষয়গুলির উন্নতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিপুল ক্ষমতায় আস্থাবান একজন মানুষ হিসাবে হয়তো কী করে এ কাজ করা হল, তার খুঁটিনাটি বুঝে নিতেও চাইতেন।''
টুইটে কার্তিক মন্তব্য করেছেন, ‘‘লোকমান্য তিলকের ভালো ছবি জোগাড় করা কঠিন ছিল, কিন্তু কাজটা করা গেছে। আধুনিক ভারতীয় মননের অন্যতম এক নির্মাতা হিসাবে তিলকের এখনই পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। যখন অধিকাংশ ভারতীয় পড়তে পর্যন্ত পারত না, সেই সময়ে ভারতীয় ঐতিহ্যের সংস্কারক ও পুনর্জাগরণের অন্যতম হোতা এই মানুষটি গণমাধ্যমের ক্ষমতায় প্রবল আস্থাবান ছিলেন। ঋষি অরবিন্দ সম্পর্কেও টুইটে মন্তব্য করেছেন কার্তিক।
এর আগে মনীষীদের জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু ফিল্ম। সিনেমায় আমরা জীবন্ত হয়ে উঠতে দেখেছি রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ভগৎ সিং দের। কিন্তু কার্তিকের এই প্রচেষ্টা একেবারেই অন্যরকম। স্বভাবতই আপ্লুত টুইটার ব্যবহারকারীরা। আনন্দে উচ্ছসিত তাঁরা।
পরম শ্রদ্ধায় যে মানুষগুলিকে স্মরণ করি আমরা, ভাবতে, বুঝতে চেষ্টা করি তাঁদের জীবনসংগ্রাম, এবার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাঁদের জীবন্ত চোখ, মুখভঙ্গিতে নানা অনুভূতির প্রকাশ এমনকি হাসি পর্যন্ত! অনন্যসাধারণ এই অভিজ্ঞতা কিন্তু আপনিও পেতে পারেন। শুধু থাকতে হবে স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার। ‘প্লে স্টোর' থেকে ডাউনলোড করে নিন ‘মাইহেরিটেজ' অ্যাপ। সেখানে দিয়ে দিন আপনার পছন্দের মানুষটির স্থির ছবি। হতে পারেন তিনি আপনার একান্ত নিকটজন– মা কিংবা বাবা অথবা এমন কেউ যিনি আজ আর আপনার পাশে নেই। মুহূর্তে জীবন্ত হয়ে উঠে আপনার দিকে তাকিয়ে হাসবেন তিনি।
দিনে দিনে প্রযুক্তির কল্যাণে বাস্তব হয়ে উঠছে মানুষের নানা কল্পনা। কার্তিক শশীধরনের উদ্যোগে বাস্তব হল এমনই এক স্বপ্ন। এবার হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলিকে দিয়ে কথা বলানোর পালা। সে স্বপ্নও হয়ত বাস্তব হয়ে উঠবে খুব শিগগির।