প্রাথমিক স্কুলের এক মাস্টারমশাই সম্প্রতি অভিনব উপায়ে নিজের বিবাহের উৎসব উদযাপন করলেন৷ অতিথি–অভ্যাগতদের কাছ থেকে উপহার নেওয়ার বদলে তিনি নিজের ছাত্রছাত্রী ও তাদের মায়েদের হাতে তুলে দিলেন অমূল্য উপহার৷
পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়া ১ নম্বর চক্রের তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রী দীপনারায়ণ নায়ক৷ ছাত্রছাত্রীরা তাঁর কাছে নিজের সন্তানেরই মতো৷ সাম্প্রতিক লকডাউনে এলাকার দরিদ্র ছেলেমেয়েগুলির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ স্থির থাকতে পারেননি মাস্টারমশাই৷ রাস্তার ধারে গাছের তলায় বসে তাদের পড়িয়েছেন দিনের পর দিন৷ সেই থেকে এলাকার মানুষের কাছে তিনি ‘রাস্তার মাস্টারমশাই’৷ গরিব এই ছেলেমেয়েগুলির অপুষ্টি কষ্ট দেয় তাঁকে৷ তাই আর পাঁচজনের মতো শুধু খাওয়া–দাওয়া আর হৈ–হুল্লোড়ের আয়োজন করেই নিজের বিবাহ উৎসব সাঙ্গ করেননি তিনি৷ নিমন্ত্রণ করে খাইয়েছেন দরিদ্র ছাত্রছাত্রী ও তাদের মায়েদের৷ শুধু তাই নয়, গরিব পরিবারের এই ছেলেমেয়েগুলির এক বছরের পড়াশোনার দায়ভারও তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে৷ উপহার দিয়েছেন শিক্ষা সামগ্রী৷ মায়েদের হাতেও তুলে দিয়েছেন কাপড়জামা আর বিদ্যাসাগরের বই৷
বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে এসে এদিন খুশি উপছে পড়েছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলির চোখেমুখে৷ মায়েরাও তৃপ্ত, গর্বিত, এলাকায় এমন মাস্টারমশাই পেয়ে৷ সদ্য পূর্তি হল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দুশো বছর৷ দেশে সত্যিকারের মানুষ তৈরির জন্য যে লড়াই তিনি শুরু করেছিলেন, সেই পথ ধরে আজও যে কেউ কেউ হাঁটে, ‘রাস্তার মাস্টারমশাই’ শ্রী দীপনারায়ণ নায়ক প্রমাণ করে দিলেন সে কথা৷ তাঁকে হাজারো অভিনন্দন৷