নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালকে ৫৮,৩৮৯ ভোটে পরাজিত করে ভবানীপুর উপ নির্বাচনে জয় লাভ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস। এই উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর আসন থেকে ৮৪,৭০৯ ভোট পেলেন। অন্যদিকে বিজেপি প্রার্থী পেলেন ২৬, ৩২০ টি ভোট।
এই জয় লাভ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের আগের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গেলেন। ২০১১ বিধানসভা উপনির্বাচনে যত ভোটে জয়লাভ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার থেকেও বেশি ভোটে জয়লাভ করলেন এইবারের উপনির্বাচনে।
ভবানীপুরে জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের জয় লাভের পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অভিবাদন জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি, ভোট পরবর্তী সমস্ত ধরনের হিংসা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। রেকর্ড মার্জিনে জয়লাভের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কালীঘাটের বাড়ির সামনে থেকে সাংবাদিক বৈঠক করলেন। ২১ তম রাউন্ড এর গণনা শেষে ভবানীপুর নির্বাচনে ৫৮ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার দলের সমস্ত কর্মীদের এবং ভবানীপুরের মানুষদের ধন্যবাদ জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা ঘোষণা করলেন, "ভবানীপুরের কোন কেন্দ্রে আমি হারিনি। অনেক মামলা হয়েছে, অনেক চক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু তবুও তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে। চক্রান্তের জবাব দিয়েছে ভবানীপুর। যবে থেকে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন শুরু হয়েছে, তবে থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার আমাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। আমার পায়ে আঘাত করা হয়েছিল যাতে আমি এইবারের উপনির্বাচনের না লড়াই করতে পারি। আমি ভবানীপুরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে কৃতজ্ঞ, যাতে তারা ৬ মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন।" তবে লড়াইটা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার ছিল, সেরকমটা নয়। কারণ প্রথম থেকেই জানা ছিল ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতাকে টক্কর দেবার মত প্রার্থী বিজেপির কাছে কোন দিন থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যে বেঞ্চমার্ক সেট করেছেন এতদিন পর্যন্ত, সেটা তুমি ভাবতে পারেন কিনা সেটাই ছিল দেখার। রবিবাসরীয় সকালে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের আগের মার্জিন পার করে দিয়ে ভোট শতাংশের বিচারে সর্বকালের অন্যতম বড় জয়ের রেকর্ড করে ফেললেন।
শেষবার যখন ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে মমতা প্রার্থী হয়েছিলেন, সেবারের থেকে এবারে দ্বিগুণ ব্যবধানে জয়লাভ করলেন মমতা। সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে ভবানীপুরে বিজেপি ৪০ হাজার এর বেশী ভোট পেয়েছিল। এবারে বিজেপি চেষ্টার কোন কসুর করেনি। একটা বড় সংখ্যক হিন্দি ভোটারকে টার্গেট করেছিল গেরুয়া শিবির। প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল নিজেও বারংবার ভবানীপুরে প্রচারে গিয়েছেন। রাজ্য নেতারা একাধিকবার ভবানীপুরে এসে প্রচার করেছেন। বিজেপির একটাই টার্গেট ছিল, ২০১১ সালে নির্বাচনের ব্যবধান থেকে এবারের ব্যবধান কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ক্যারিশমার জোরে তিনি সেই সমস্ত বাধা বিপত্তি পার করে বেরিয়ে গেলেন। ভবানীপুর নিজের মেয়েকে চাইল। বাংলার বর্তমান রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল নেত্রীর এই জয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মমতার এই জয়লাভ দেখে সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব টুইট করেছেন। মমতাকে জাতীয় স্তরের একজন নেত্রী হিসেবে তুলে ধরেছেন অখিলেশ যাদব। একুশের নির্বাচনে ভবানিপুর আসন থেকে জয়লাভ করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি জেতেন ২৮ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। ফলে এবারের নির্বাচনে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কেও টপকে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। তিনি লিখেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে অনেক অনেক শুভেচ্ছা বিজেপির বিরুদ্ধে তার বিশাল ব্যবধানে জয়ের জন্য। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের যে আপনার উপরে অগাধ আস্থা আছে এটা আবারও প্রমাণিত হলো।"
টুইট করে মমতাকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন সুস্মিতা দেব, সায়নী ঘোষ, অতীন ঘোষ। একটি সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র বিজেপিকে কটাক্ষ করলেন। তিনি বললেন, "এবারের নির্বাচনে জয় লাভের পরে পার্টির তরফ থেকে কোনো রকম বিজয় মিছিল করা হচ্ছে না। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি এইভাবে আমাদের আটকাতে পারবেনা। বাংলার ভোটের মিছিল আটকে দিয়েছে। কিন্তু আসামের, ত্রিপুরার ভোটের মিছিল আটকাতে পারবেনা।"